শীতের শুরুতেই সিরাজগঞ্জের তাড়াশে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু খেজুরের গুড়। ইতিমধ্যেই গাছিরা এসে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে খেজুরের গাছ লিজ নিয়ে এই গুড় তৈরি শুরু করেছেন। তাড়ালে উৎপাদিত ভেজুরে গুড় স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এখানকার গুড়ের মান ও স্বাদ ভালো হওয়ায় দেশব্যাপী রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বাজারে গুড়ের দাম ভলো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন গুড় চাষিরা।
জানা যায়, শীত এলেই চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাছিরা। গাছ থেকে খেজুরের রস এনে তা মাটির তৈরি বিশেষ চুলায় জাল দিয়ে তৈরি করা হয় খাঁটি মানের খেজুরের গুড়। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই চোখে পড়বে এমন দৃশ্য। উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের কাস্তা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সকালে গাছিরা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে এসে বড় পাত্রে রস জাল দিচ্ছেন।
কথা হয় খেজুর গুড় চাষি নজরুল ইসলামের সঙ্গে তিনি জানান, ভোর বেলায় গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে থাকেন। এবছর প্রতি কেজি গুড়া ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে।
যত শীত বাড়বে ততই রসের মান ভাল হয়। এতে গুড়ের মানও ভাল হয় বলে জানান তিনি। স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় আট ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এ গাছগুলো থেকেই রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করা হয়।
তাড়াশ উপজেলার ভাদাস গ্রামে আসা গুড় চাষি আব্দুল মজিদ জানান, প্রতি কেজি গুড় ১৬০-১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গুড় সঠিক বাজারজাতকরণের কারণে এবছর ভাল দাম পাচ্ছেন তারা।
উপজেলার বিন্নাবাড়ি গ্রামে গুড় চাষি হোসেন আলী জানান, দিন দিন এই অঞ্চলে গুড়ের উৎপাদন বাড়ছে। আর এর মান ধরে রাখতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও দেয়া হচ্ছে নানা পরামর্শ।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি শাহ আলম বলেন, তাড়াশ উপজেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা গাছিরা এসে গাছ মালিকদের সাথে চুক্তি করেন। পরে তারা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করেন। এই গুড় অত্যান্ত সুস্বাদু ও মান অনেক ভাল। এই সময় এলাকার মানুষ গুড় দিয়ে শীতের পিঠা তৈরি করে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কৃষি বিভাগের হিসাব মতে এই উপজেলায় ১০ হাজার ৫০টি খেজুর গাছ রয়েছে। এ থেকে এবছর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ধরা হয়েছে ১৩৫ দশমিক ৬৭ মে.টন। আর এ অঞ্চলের গুড়ের মান ও স্বাদে ভরপুর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে চাহিদা। স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে চাষিরা যাতে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করেন সেদিকে নজরদারী করা হয় বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন