শীতের তান্ডবে ছিন্নমুল এবং খেটে খাওয়া মানুষজন পড়েছে বিপাকে। একদিকে কর্মহীন হয়ে পড়া, অপর দিকে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ বালাই মানুষকে অসহায় করে ফেলেছে। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের দূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
আজ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রের্কড করা হয়েছে । চলতি মৌসুমে এটাই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
গত ১৫ দিনের মধ্যে গতকাল এবং আজ মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি কড়া রোদ অনুভূত হবার কারণে মানুষের দূর্ভোগ কিছুটা কমে এসেছে।
সকাল থেকে কড়া রোদে শীতার্ত মানুষ ছিল বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় চলতি শীত মৌসূমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।
আবহাওয়া অফিসের হিসেবে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস মানে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তাদের হিসেবে টানা কয়েকদিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন কুয়াশা না থাকলেও পঞ্চগড়ে ছিল কনকনে উত্তরের শীতল বাতাস। তবে গতকাল ভোররাত থেকে শুরু হয় ভারী কুয়াশা।
সকাল পর্যন্ত ভারী কুয়াশা ঝরতে থাকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটার মতো। সেই সাথে ছিল উত্তরের কনকনে শীতল বাতাস। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে জেলার দুঃস্থ ও খেটে খাওয়া লোকজন।
কনকনে শীতের মধ্যে সাধ্যমত গরম কাপড় গায়ে জড়িয়েই তারা বেরিয়েছে কাজে। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালিয়েছেন।
তবে সকাল ৯টায় সূর্যের মুখ দেখা যাওয়ার পর থেকে সারাদিনই ছিল কড়া রোদ। অনেকদিন পর কড়া রোদের উষ্ণতা উপভোগ করে পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষগুলো। যে যার মত করে শীতের কাপড়গুলোও রোদে শুকিয়ে নেয়।
শীতের তান্ডবে ছিন্নমুল এবং খেটে খাওয়া মানুষজন পড়েছে বিপাকে। একদিকে কর্মহীন হয়ে পড়া, অপর দিকে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ বালাই মানুষকে অসহায় করে ফেলেছে। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের দূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
পঞ্চগড় শহরের নির্মান শ্রমিক আবুল হোসেন হোসেন জানায়, কাজ-কর্ম একেবারেই কমে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। গত ১৫ দিন ধরে ঠান্ডার কারণে তেমন কোন কাজ মিলছে না।
হরেক মালের ব্যবসায়ী বাবু মিঞা জানান, সাইকেলে করে মালামাল নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন কিন্ত তীব্র শীত এবং ঘন কুয়াশার কারনে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
পঞ্চগড় সদর আধূনিক হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মো. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশু ডায়রিয়া ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের চিকিৎসা এবং সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ রোগীকে মেঝেতে ভর্তি করতে হচ্ছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, পুরো ডিসেম্বর জুড়ে তেঁতুলিয়ায় যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে, তা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। জানুয়ারীতে একাধিক শৈত প্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তখন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রীতে নেমে যেতে পারে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর শীতপ্রবন এই এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ায় সরকার। এ বছর একই সাথে করোনা এবং শীত মোকাবেলা করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারি ভাবে যে পরিমান শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে, তা শীতার্তমানুষের মাঝে বন্টন করা হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন