তীব্র শীতে গোটা চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবনযাত্রা অচল হয়ে উঠেছে। গেল প্রায় একমাসে বহু খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তবে ওই কর্মহীন মানুষদের খাদ্য সহায়তা না দিয়ে চলছে নি¤œমানের কম্বল বিতরণ ও ফটোসেশন। যা বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় কয়েকদিন বাদে সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিললেও শৈত্য প্রবাহের কারনে স্বাভাবিক কর্মজীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিসহ। নিউমোনিয়ায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেনীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান,এ জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড থাকায় তীব্র শৈত্য প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৭ শতাংশ। এর আগে এদিন সকাল ৬টায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো। ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৬ শতাংশ। গত প্রায় একমাস যাবৎ এ জেলায় ক্রমাগত তাপমাত্রা কমছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশীভাগ দিনই কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে। দিনে তাপমাত্রা কমবেশী হলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে হাঁড় কাঁপানো শীত অনূভূত হচ্ছে। এর ফলে জনজীবনে দূর্ভোগ বাড়ছে। এ আবহাওয়া আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিউমোনিয়ায় এপর্যন্ত ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.মোঃ আতাউর রহমান জানান, শীতের কারনে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় চিকিৎসা সেবা দেয়া দ্রুূহ হচ্ছে। মারা যাওয়া ও অবসর জনিত কারনে এ হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নেই কলেরার স্যালাইন। ঔষুধের সঙ্কট থাকায় রোগীদের সব ঔষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছেনা। ৫০ শয্যা হাসপাতালের বরাদ্দ দিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল সামলানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িছে। তবুও সেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রত্যেকদিন ২৫০ থেকে ৩০০ জন ভর্তী রোগী ও বহিঃবিভাগে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ জন রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত ১ জানুয়ারি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রান্তপাড়ায় তোয়াব আলীর ২০ দিন বয়সী মেয়ে তাসকিন ও জেলার জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের প্রদীপের মেয়ে ৮ মাস বয়সী বৈশাখী, ৬ জানুয়ারি সদর উপজেলার সরোজগঞ্জের লিটনের ছেলে ১০ দিন বয়সী আবু রহমান ও একই উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের মনিরুলের ছেলে একমাস বয়সী আব্দুল্লাহ, সদর উপজেলার বালীয়াকান্দি গ্রামের ফরিদের মেয়ে চারঘন্টা বয়সী মেয়ে ফাতেমা ও একই উপজেলারে পীরপুর গ্রামের শরিফুলের একদিন বয়সী মেয়ে টুনি মারা গেছে। তবে এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় চিকিৎসা নিতে আসা কোন রোগী মারা যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা টানা শৈত্য প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে শীতের কারনে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। দিনে দিনে কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। শীতের সকালে কথা হয় রিক্সাভ্যান ও রিক্সা চালক রেজাউল, আব্দুর রাজ্জাক,শুকুর আলীর সঙ্গে। তারা বলেন, সকালে রিক্সাভ্যান ও রিক্সা নিয়ে বের হলে আগে ভাল উপার্জন হতো। প্রচন্ড শীতের কারনে লোকজন বাড়ী থেকে বের হতে পারছেনা। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও অফিসগামী লোকজন বের হচ্ছে কম। সেকারনে ভাড়া নেই বললেই চলে। বড় পরিবারের জনসংখ্যা বেশী থাকায় আর উপার্জন কম হওয়ায় খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন কাটছে। কোর্ট এলাকায় সকালে কুলবরইয়ের পসরা নিয়ে বসেছিলো কাজল। সে জানায়, আয় রোজগার কমে যাওয়ায় সকাল সকাল আসলেও বিক্রি নেই বললেই চলে। শীতের কারনে কোর্ট এলাকায় লোকজন কম। সে কারনে বেশ খারাপ দিন যাচ্ছে। একটি ব্যাংকের কর্মচারী মুক্তার বলেন, শীতে বাড়ী থেকে বের হতে ইচ্ছা হয়না। কিন্তু চাকরির কারনে বাড়ীতে থাকা হয়না। এত খারাপ আবহাওয়া হওয়ার পরও অফিসে আসতে হচ্ছে, যা অত্যান্ত কষ্টদায়ক।
বৈরী আবহাওয়ার কারনে সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করলেও যাত্রী সংখ্যা কম। রাস্তাঘাটে, হাটেবাজারে জনসমাগম লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। তীব্র শীতে উপার্জন কমে যাওয়ায় হাটেবাজারে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের সংখ্যা যৎসামান্য।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, শীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ চলছে। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পত্র পাঠিয়ে তাদেরকে শীতবস্ত্র বিতরণের আহব্বান জনানো হয়েছে। শীতের কারনে খেটে খাওয়া কর্মহীন মানুষের খাদ্য সঙ্কট দুর করার জন্য জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন