শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

অনাহারে-অর্ধাহারে কাটে বীরাঙ্গনা রহিমা বেওয়ার

| প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর এসে বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের দেবালয় গ্রামের ৬৫ বছরের বিধবা বৃদ্ধা রহিমা বেওয়া। দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেও আজ পেটে ভাত নেই, অনাহারে-অর্ধাহারে রোগাক্লৃষ্ট শরীরের দিন কাটছে রহিমার। সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা মনে পড়লেই আজো তার গা শিউরে ওঠে, আর চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অবাধ্য অশ্রু। লোকলজ্জার ভয়ে এতদিন মুখ না খুললেও সরকারের মহতি উদ্যোগের কারণে জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে মুক্তিযোদ্ধার শেষ সম্মানটুকুর আশায় প্রহর গুনছে রহিমা বেওয়া। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৩৭তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের ২৪ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের ১০ জন বীরঙ্গনাকে দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। এতে রহিমার বুকেও আশার সঞ্চার হয়েছে। তার শেষ ইচ্ছ মৃত্যুর আগে সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। প্রত্যক্ষদর্শী কুড়িগ্রাম জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি ও সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান জানান, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে বিকেল বেলা পাকবাহিনীরা দেবালায় গ্রামের মধ্যে তা-ব চালায়। এসময় তারা প্রায় ৭০/৮০টি ঘর জ্বালিয়েপুড়িয়ে দেয়। পরের দিনে আবার ওই এলাকায় পাকবাহিনীর ৪/৫ জনের একটি দল খুতুব উদ্দিনের বাড়ির দিকে যায়। বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে আমি চিৎকার করলে সবাই পালাতে শুরু করে। এ সময় রহিমা ইন্দ্রার পাড়ে এসে তাদের হাতে ধরা পড়ে। রহিমাকে পাকবাহিনীরা তুলে নিয়ে খুতুব উদ্দিনের কাঁচা ঘরে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন চালায়। প্রতিবেশী পাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সিনিয়র শিক্ষক তসর উদ্দিন জানান, রহিমার স্বামী ওমর আলী ছিলেন একজন চায়ের দোকানদার। কাঁঠালবাড়িতেই ছিল তার ছোট্ট একটি দোকান। ২০০৯ সালে হাপানী রোগে আক্রান্ত হয়ে ওমর আলী মারা যায়। তাদের ঘরে ছেলেমেয়ে ৩ জন। এরমধ্যে ছোট্ট ছেলেটি ৯ বছর বয়সে রক্ত আমাশয় মারা যায়। বড় মেয়ে পারুল বেগম (৩৫) ও ছোট রমিছা বেগম (৩২)’র বিয়ে দিয়ে দেন। এরপর থেকে সে নিজেই একা একা থাকেন বাড়িতে। অভাবী সংসারে মেয়েরাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করলেও মাঝে মাঝে তারা এসে একটু সাহায্য সহযোগিতা করেন। এছাড়া বাকি দিনগুলো পাড়াপ্রতিবেশীর সহায়তা আর ভিক্ষাবৃত্তি করেই দিন যায় রহিমার। তাকে ’৭১’র বীরঙ্গনা হিসাবে এলাকার সবাই জানে। জেলার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী বীরপ্রতীক আব্দুল হাই সরকার বলেন, জেলায় ৬১ জন আবেদনকৃত বীরাঙ্গনা সরকারের কাছে আবেদন করলেও ১০ জনকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। এমন আরো অনেকেই আছেন যারা এতদিন নিজেদের আড়াল করে রেখেছিল শুধু লজ্জা আর সংসার বাঁচানোর জন্য। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৩৭তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের ২৪ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়। এরমধ্যে কুড়িগ্রামের ১০ জন বীরাঙ্গনা রয়েছে। তবে যারা বাদ পড়েছে কিংবা নতুন কেউ বীরাঙ্গানা হিসেবে আবদেন করতে চান তারা সঠিক তথ্য ও প্রমাণাদিসহ উপজেলা কমিটি বরাবর আবেদন করবেন। এরপর সেখান থেকে জেলা কমিটির নিকট আসলে আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা নেব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন