শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দুবাইয়ে সবচেয়ে বেশি বাড়ি-জমি কিনেছে বাংলাদেশিরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে জমি-বাড়ি কেনায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশীরা। কানাডার বেগম পাড়ার পর এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতেও বাড়ি কেনায় বিপুল বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা। দুবাইয়ের সরকারি নথিপত্র ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালে জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশিরা দুবাইয়ে ১২ কোটি ৩০ লাখ দিরহাম বা ২৮৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে জমি-বাড়ি কিনেছেন। এই অর্থ বৈধপথে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে তা অবৈধপথেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রেও এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

দুবাইভিত্তিক ২০টি বাংলাদেশি আবাসন কোম্পানির ৩০ জন এজেন্টের মাধ্যমে এসব সম্পদ কিনেছেন বাংলাদেশিরা। এই তালিকায় আছেন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও আমলারা। দুবাইয়ের এসব বিনিয়োগের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এ ছাড়া দেশটিতে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলে গোল্ডেন ভিসা দেওয়া হয়।
বিশ্লেষকেরা বলেন, কোভিডের ভরা সময়ে দেশ থেকে এ পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো, সেই দুঃসময়েও কিছু মানুষ বিপুল অর্থ আয় করেছেন। এই অর্থ দেশে রাখা তাঁরা নিরাপদ বোধ করেন না।

বিশ্বের ধনীদের দ্বিতীয় ঘর হয়ে উঠছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। কয়েক বছর ধরেই এই বাড়বাড়ন্ত চলছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে দুবাইয়ের রেকর্ডসংখ্যক জমি-বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে। দেশটির সরকারি নথি অনুসারে, গত বছর দুবাইয়ে মোট ৯০ হাজার ৮৮১টি জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে। অ্যারাবিয়ান বিজনেসের সংবাদে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।

তথ্যানুসারে, এর আগে ২০০৯ সালে ৮১ হাজার ১৮২টি জমি-বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে। শুধু ডিসেম্বর মাসেই দেশটিতে আট হাজার আবাসন লেনদেন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। খালি জায়গা বিক্রি বেড়েছে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রস্তুতকৃত বাড়ি বিক্রি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ।
চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুবাইয়ে আবাসনের দামও বেড়েছে। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়ে সম্পদের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে ভিলা বা সুরম্য বাড়ির দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ।

তবে দাম বাড়ার হার এখনো ২০১৪ সালের পর্যায়কে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ভিলা ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম এখনো সর্বোচ্চ দামের চেয়ে ২১ দশমিক ৫ ও ৪ দশমিক ২ শতাংশ কম। একই সঙ্গে ভাড়াও বেড়েছে রেকর্ড হারে। দুবাইয়ে ২০২২ সালে অ্যাপার্টমেন্ট ও ভিলার ভাড়া বেড়েছে যথাক্রমে ২৭ দশমিক ১ ও ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ হারে।
দুবাই শহরের কাছেই বিলাসবহুল আবাসনের সবচেয়ে কাক্সিক্ষত জায়গা পাম জুমেরাহ্। সেখানে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ২ হাজার ৩২৪ দিরহাম এবং ভিলার দাম পড়ছে প্রতি বর্গফুট ৩ হাজার ৯২১ দিরহাম। ভাড়ার দিক থেকেও এই পাম জুমেরাহ সবার চেয়ে এগিয়ে। সেখানে বার্ষিক ভাড়ার পরিমাণ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫২ দিরহাম থেকে ১০ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৬ দিরহাম।

বাস্তবতা হচ্ছে, চাহিদা এত বেড়েছে যে দুবাইয়ে ভিলার ভাড়া এখন ২০১৯ সালের তুলনায় ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। গড়ে ভিলার ভাড়া পড়ছে বার্ষিক ২ লাখ ৮২ হাজার ১৫০ দিরহাম-এটাও ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
বিশ্বের ধনকুবেরদের প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে দুবাই। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার অতি ধনীদের দীর্ঘ মেয়াদে ‘গোল্ডেন ভিসা’ দিচ্ছে। বিদেশিদের বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধও শিথিল করা হচ্ছে। লেনদেনের ৭০ শতাংশ হচ্ছে নগদ অর্থে।

পৃথিবীর সব দেশের ক্ষমতা ও সামর্থ্যবানেরা সেখানে বাড়ি কিনছেন। রাশিয়ার তেল ব্যবসায়ীরা পশ্চিমা দেশগুলোতে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে যেমন দুবাইয়ে বাড়ি কিনছেন, তেমনি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ফুলেফেঁপে ওঠা পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোর ব্যবসায়ীরাও পাড়ি জমাচ্ছেন সেখানে। ফলে দুবাই এখন বহুজাতিক ও বহু সাংস্কৃতিক নগর হয়ে উঠছে। ব্রিটিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহাম, বলিউড তারকা শাহরুখ, আম্বানি-তাঁরা এখন পরভূমে পরস্পরের প্রতিবেশী।

জানা গেছে, দুবাই শহরের বড় বড় আবাসন ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে শত শত কোটি ডলার ঋণ আছে। একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধূসর তালিকায় আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অর্থ সে দেশে ঢুকছে-এমন সন্দেহ থেকেই তারা আরব আমিরাতকে ধূসর তালিকায় রেখেছে। সন্দেহ আরও বৃদ্ধির কারণ হলো, দুবাইয়ের ভূমি বিভাগ এসব বাড়ির ক্রেতাদের নাম প্রকাশ করে না।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন