বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

গ্যাস সঙ্কটে গৃহিণীর নাভিশ্বাস

কুমিল্লায় সকাল থেকে গভীর পর্যন্ত চুলায় মিটমিট আগুন, বিকল্প জ্বালানি সিলিন্ডার গ্যাসে প্রতিমাসে বাড়তি খরচ

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

কুমিল্লার বাখরাবাদ দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমান সময়ে পাইপলাইনের এ গ্যাস সোনার হরিণ। বিশেষ করে গৃহস্থলি কাজে গৃহিনীদের নাভিশ্বাস অবস্থা। কুমিল্লার গ্রাহকদের প্রতিদিন শুরু হয় গ্যাস সংকট ও দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে। আর এ দুর্ভোগ চলে মধ্য রাত পর্যন্ত।
গ্যাসের চুলায় কখনো নিভুনিভু আগুন কখনো মিটমিট। এমন আগুনে সকালের নাস্তা তৈরি থেকে শুরু করে দুপুর ও রাতের খাবার রান্নাও গ্যাসের চুলায় উঠে না। জানা গেছে, গ্যাসের চুলায় আগুন জ্বলে না উঠায় কুমিল্লায় বাখরাবাদের এরিয়া টু-ডি’র ৭৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার আবাসিক গ্রাহক ঘরে পাইপ লাইনের গ্যাসের চুলার পাশে সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে প্রতিমাসে গ্যাস বিল পরিশোধের পাশাপাশি সিলিন্ডার গ্যাসের বাড়তি খরচ বহন করছেন। প্রায় ৬ বছর ধরে গ্যাসের এই দুর্ভোগে হাঁপিয়ে ওঠেছেন আবাসিক গ্রাহকরা।
কিন্তু বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (বিজিডিসিএল) কর্মকর্তারা বলেন, গ্যাসের প্রেসার কমে যাওয়া বা কোথাও কোথাও সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে চুলায় গ্যাস না থাকার যে সঙ্কট শুরু হয়েছে তা সমাধানের কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। বিজিডিসিএল’র কর্তৃপক্ষ বলছেন চাহিদা অনুযায়ি গ্যাস না পাওয়ায় সঙ্কট কাটছে না।
এদিকে কুমিল্লা নগরীর চাঁনপুর, পাঁচথুবি ইউপির চাঁনপুর, শুভপুর, চকবাজার, মোগলটুলি, সংরাইশ, নবগ্রাম, নলুয়াপাড়া, সুজানগর, পাথুরিয়াপাড়া, নুরপুর, তেলিকোনা, বাগিচাগাঁও, রেইসকোর্স, বিষ্ণুপুর, ছোটরা, অশোকতলা, কালিয়াজুরি, আশ্রাফপুর, পুলিশলাইন, ভাটপাড়া, টমছমব্রিজ, গোবিন্দপুর, চৌয়ারা, সুয়াগঞ্জ, ময়নামতি, রামপুর ও সদর দক্ষিণ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল ৭টা থেকে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না।
গত দুইদিন কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত আসার আগ থেকেই চলছিল এ সমস্যা। গ্রাহকরা আবাসিক গ্যাসের সমস্যা সমাধান করার ব্যাপারে একাধিকবার বলার পরও কর্মকর্তারা বিষয়টিতে নজর দিচ্ছেন না। শীত শুরু হওয়ায় গ্যাস সঙ্কট আরও প্রকট হয়ে পড়েছে।
নগরীর চানপুর এলাকার গৃহিনী নাসরিন আক্তার জানান, প্রতিদিনই সকাল ৭টা থেকে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত চুলোয় গ্যাসের প্রেসার না থাকায় রান্না-বান্নার কাজে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিমাসে বাখরাবাদ গ্যাসের বিল পরিশোধের পরও বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের পেছনে অতিরিক্ত অর্থ গচ্ছা দিতে হচ্ছে।
দক্ষিণ চর্থা এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক পারভীন সুলতানা বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অব্দি চুলা মিটিমিটি জ¦লে। রান্না করা, নাশতা তৈরি কোনটাই হচ্ছে না। স্টোভে কী সবসময় রান্না করা যায়। বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের এ দুর্ভোগের কথা ভাবছেন না।
জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর রুদ্রপাল সমবায় সমিতির সভাপতি তাপস কুমার পাল জানান, এখানে মৃৎশিল্প কারখানায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় তিনটি চুলার একটিও জ্বলছে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে, প্রতিমাসে লোকসান গুণতে হচ্ছে। দেশি বিদেশি কোম্পানির অর্ডার বাতিল করতে হয়েছে।
প্রতিষ্ঠালগ্নে বাখরাবাদ গ্যাসের গ্রাহক কম থাকলেও এখন গ্রাহকসংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে, কলকারখানাও বেড়েছে। তবে গ্যাসের পাইপলাইন সেই অনুযায়ী বাড়েনি। বর্তমানে বাখরাবাদে গৃহস্থালি (বাসা-বাড়ি), সিএনজি ফিলিং স্টেশন, বিসিক শিল্পনগরী, ইপিজেড, সার কারখানা, ছোট-বড়ো শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুৎ স্টেশন কেন্দ্রসহ সবমিলিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা ৪ লাখ ৯০ হাজার ৬০৫। এর মধ্যে শুধু গৃহস্থালি গ্রাহক আছেন ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮১ জন। এরমধ্যে বিতরণ বিভাগের এরিয়া কোড অনুযায়ি টু-ডি’র আওতায় কুমিল্লা ময়নামতি, আশপাশের ইউনিয়ন, সিটি করপোরেশন এলাকা, চৌয়ারা, সুয়াগঞ্জ পর্যন্ত ৭৫ হাজার আবাসিক গ্রাহক রয়েছে। চাহিদানুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সঙ্কট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না এসব গ্রাহকরা। গ্যাসের জন্য ভোগান্তি ও বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সিলিন্ডারের পেছনে প্রতি মাসে বাড়তি খরচে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের নাভিশ্বাস ওঠেছে।
বিজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শংকর মজুমদার বলেন, বাখরাবাদ বিপনন কোম্পানি। প্রতিদিন এখানে গ্যাসের চাহিদা ৫৮৮ এমএমসিএফ। কিন্তু সপ্তাহে গড়ে সরবরাহ হচ্ছে ২৮৫ এমএমসিএফ। চাহিদামতো গ্যাস না পাওয়ায় সংকট বেড়েছে। কবে এই সঙ্কট দূর হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন