প্রতিবছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিদের প্রস্তাব গুলোর উপর পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়ার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সকল মন্ত্রণালয়কে নিদের্শনা দেয়া হয়। সেই গুলো আবার ডিসি সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। গত এক বছরে অনেক মন্ত্রণালয় এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
২০২২ সালে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ২৪২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে ১৭৭টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়ন হয়নি ৬৫টি সিদ্ধান্ত। যা মোট সিদ্ধান্তের ২৭ শতাংশ। এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত বলা হলেও চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অনেক সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতার অভাবেও বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেই বাস্তবায়িত বলা হচ্ছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়।
গত ২০২২ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তিন ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে স্বল্প মেয়াদী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৭২টি। যার মধ্যে ৫৮টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যা শতকরা বাস্তবায়নের হার ৮১ শতাংশ। মধ্যেমেয়াদী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১০৫টি। এর মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৭৭টি। দীর্ঘ মেয়াদী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৬৫টি। যার মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৪২টি সিদ্ধান্ত।
গত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বরিশালের ডিসি দেশীয় প্রজাতির মৎস চাষে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদানের প্রস্তাবন করেন। এটি পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কৃষি ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশ হওয়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষের জন্য চাষিদের ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংক সমূহকে ভূর্তুকি প্রদানের বিষয়ে অর্থ বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হলে অর্থ বিভাগ নেতিবাচক মতামত প্রদান করায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়নি। এছাড়া গত বছর ২২৯টি স্ধিান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী ৬৬টি, ১০১টি মধ্যমেয়াদী এবং ৬২টি দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ৩৩০টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ৫৩টি মধ্যমেয়াদি ১২৭টি এবং দীর্ঘ মেয়াদী ১৫০টি। এ গুলোর মধ্যে ৭৬ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে বাকি গুলো এখনো হয়নি।
আগামী ২৪-২৬ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রাক-প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উদ্বোধনের পর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত কার্য-অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট জাতীয় সংসদের স্পীকার এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কার্য-অধিবেশনে অংশ নেবে ডিসিরা। কার্য-অধিবেশনগুলোয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপ-মন্ত্রী ও সচিবেরা উপস্থিত থাকেন। সরকারের নীতি- কৌশল বাস্তবায়নে তারা বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। এছাড়াও, মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত কার্য-অধিবেশনে আইজিপি, সশস্ত্র বাহিনী প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে ডিসিদের। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তুত করা নির্দেশিকায় বলা হয়,আগামী ২৩ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের কোভিড-১৯ টেস্ট করানো হবে। বেলা ২টা থেকে একই স্থানে রেজিস্ট্রেশন এবং সাড়ে ৩টায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণের উদ্দেশ্যে ব্রিফিং করা হবে। বিকেল ৩টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আয়োজনে প্রেস ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।
আগামী ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শাপলা হলে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের স্বাগত বক্তব্য, মাঠ প্রশাসনের উদ্ভাবন, সেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাÐের ভিডিও চিত্র প্রদর্শন, জেলা প্রশাসকগণের পক্ষ থেকে বক্তব্য, বিভাগীয় কমিশনারগণের পক্ষ থেকে বক্তব্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ।
ও সম্মেলন উদ্বোধনের সূচি ঠিক করা হয়েছে। এরপর সোয়া ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত করবী হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন ডিসিরা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাঠ প্রশাসন সম্পৃক্ত বিষয়াদি নিয়ে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠত হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফটো সেশনে অংশ নেবেন তারা। করবী হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওতাধীন সংস্থা গুলোর উপর কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিবসে চারটি কার্য অধিবেশন ছাড়াও সন্ধ্যায় বিআইসিসিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দিবসে ৫টি অধিবেশন শেষে করোনা টেস্ট করা হবে। এরপর আরও ২টি কার্য অধিবেশনের পর বিকেল সাড়ে ৪টায় সুপ্রিম কোর্ট ভবনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নির্দেশনা প্রদান করবেন প্রধান বিচারপতি। একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় সংসদ ভবনে স্পীকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জাতীয় সংসদ ভবনে স্পীকারের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন ডিসিরা। ২৬ জানুয়ারি তৃতীয় ও শেষ দিবসে ৮টি কার্য অধিবেশনের পর সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষা এবং নির্দেশনা প্রদান করবেন প্রেসিডেন্ট।এরপর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সমাপনী অধিবেশন শেষে রাত ৮টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্য, নৈশভোজ এবং সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। এবারের ডিসি সম্মেলনে মোট অনুষ্ঠান, অধিবেশন বা কার্য-অধিবেশনের সংখ্যা ২৬টি।
গতবছর যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি সে গুলো হচ্ছে, সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক। এই প্রস্তাব যাচাই বাছাই করে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ায় হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা সমূহে টেলিটকের মোবাইল নেটওর্য়াক স¤প্রসারণের জন্য টেলিটকের চলমান প্রকল্পগুলো প্রায় ১৫টি নতুন বিটিএস টাওয়ার স্থানের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনা গ্রহণকেই বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনের তা বাস্তবায়িত উল্লেখ করা হয়েছে। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের মাধ্যমে কৃষককে ধানের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় উদ্যেগ নিতে ডিসি সম্মেলনে প্রস্তাব করেছিলেন। এটির বাস্তবায়ন অগ্রগতিতে বলা হয় সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিকট মতামত চাওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগ ব্যতিত সকল বিভাগ থেকে মতামত পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মতামত পাওয়ার পর এ বিষয়ে কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা হলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। প্রতিবছর ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন ডিসিরা। প্রধানমন্ত্রীও ডিসিদের নানা দিক নির্দেশনা দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন