‘সই কেমনে ধরিব হিয়া, আমার বধুয়া আন বাড়ি যায় আমার আঙ্গিনা দিয়া।’ কবি চন্ডীদাসের কথা ক’টি মনে পড়লো বর্তমান বাংলাদেশের ছ্যারাব্যারা অবস্থা দেখে। সদ্য টাটকা শিক্ষা ব্যবস্থার কথাই ধরা যাক। ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছে সরকার। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাধ্যমিক পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞান, বিজনেস এবং মানবিক বিভাগ বলে কিছু থাকছে না। বেশ ঘোরপ্যাঁচের শিক্ষা কার্যক্রম বুঝে উঠতেও মাথা ঘেমে যাবে। দেখলাম, প্রাথমিক স্তরে ছেলে-মেয়েদের যৌন শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে সেটা একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ‘প্রজনন স্বাস্থ্য অধ্যায়’ নামের আড়ালে। একইভাবে সমকামী সমাজেরও বাহাদুরি কীর্তন আছে, মুসলমানদের ইতিহাস কলঙ্কিত করার জন্য ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খিলজীকে ডাকাত প্রমাণ করারও আয়োজন করা হয়েছে। তবে সরকারের নতুন ঘোরপ্যাঁচওয়ালা, চুরি করা, অসংখ্য ভুলে ভরা শিক্ষাক্রমে আর যাই থাক, বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মানুষের ধর্ম, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি শিক্ষার ব্যবস্থা যে নেই, একথা জোর দিয়েই বলা যায়।
আসলে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন কমিটি ১৯৭৪ সালের কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন, ১৯৯৭ সালের শামসুল হক শিক্ষা কমিশনকেই বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবই ছিল ইসলাম ধর্ম, ধর্মীয় শিক্ষা এবং ইসলামের প্রতি অবজ্ঞা ও উপহাসের বহিঃপ্রকাশ। কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবগুলো ছিল, ইসলামী আদর্শবিরোধী এক কালো দলিল। সেই বাতিল শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুলে নিয়ে এসে বর্তমান শিক্ষা কমিটি এদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমান শিক্ষার্থীদের মন-মগজ থেকে ইসলামি চিন্তাধারাকে ধুয়ে-মুছে সেখানে তাদের সৃষ্ট ধর্মনিরপেক্ষতা নামের মতবাদ রোপণ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার ফাইনাল কাজটি করেছে।
আওয়ামী লীগের শাসন মানেই শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ইসলামি চিন্তা-চেতনার নির্বাসন, আওয়ামী লীগের শাসন মানেই হত্যা, জুলুম, খুন, নির্যাতন, আল্লাহ ও রসূল (সা.)-এর আনুগত্য ত্যাগ করে কাফের নাসারার আনুগত্য করা। এ ব্যবস্থা আমরা ’৭১-এর স্বাধীনতার পর থেকেই দেখে আসছি। বিশেষ করে, শিক্ষাক্ষেত্রে ইসলামি দর্শন এমনকি ইসলামের নাম-নিশানা পর্যন্ত সিলগালা করে বন্ধের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমদিকে পরিকল্পনাটি ধীরপায়ে ধাপে ধাপে এগিয়েছে। এখন তো ফাইনাল খেলা। আওয়ামী শাসকদের লক্ষ্য আগামী দশ-বিশ বছর পর একজন মুসলমানের মৃত্যুতে জানাজা পড়ানোর মতো প্রজন্ম যেন খুঁজে না পাওয়া যায়। সেই উদ্দেশ্য সামনে নিয়েই বর্তমান শিক্ষাসংস্কার। ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে সাজানো এ শিক্ষা ব্যবস্থায় আল্লাহ ও রসূলের অস্তিত্ব যেমন নেই, তেমনি বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের মূল্যবোধ, উজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আড়ালে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
ইসলামি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীকে লালন-পালন করে, তাকে উপযুক্ত সংবাদ, তথ্য, ইতিহাস, বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান দানের মাধ্যমে তার অন্তর্নিহিত শক্তিকে বিকশিত করে সমৃদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। নিখুঁত দক্ষতা ও কর্মকৌশল শিখিয়ে শিক্ষার্থীকে দেশগড়ার মানুষে পরিণত করা। বিচার-বিবেচনায়, চিন্তা-ভাবনায়, গবেষণা কাজে, উদ্ভাবনী শক্তিতে স্ফুরণ ঘটানর মতো মানসিক গঠন সৃষ্টি করে দেয়াই হলো ইসলামি শিক্ষা কারিকুলামের কাজ। ইসলামি কারিকুলামে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীই একদিন সাহিত্যে, সভ্যতায়, ইতিহাসে, গবেষণায়, আবিষ্কারে আসমুদ্র হিমাচল ভারতবর্ষ শুধু নয়, বিশ্বকে সমৃদ্ধ করেছিল। আর আজ দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির চেহারা দেখলে মনেই হবে না দেশটা স্বাধীন এবং এই দেশে ৯০% স্বাধীন মুসলমান জাতি বাস করে।
একটা সভ্য স্বাধীন দেশ অপর দেশের ডিকটেশনে চলছে। তারা যা চাইছে তাই দিতে হচ্ছে! নিজেদের ন্যায্য পাওনা মিউমিউ শব্দে চাওয়ার সাহস পর্যন্ত নেই। এ কেমন স্বাধীনতা? যার মাথার উপর ছাদ নেই, পায়ের নিচে মাটি নেই, বর্তমান অন্ধকার, অতীত কুয়াশাচ্ছন্ন, ভবিষ্যত বলে কিছু নেই। এ কেমন নির্জীব-নির্লিপ্তি, এ কেমন অস্তিত্বহীনতা, যা দেশের সকল মানুষকে নিষ্প্রাণ, হীনবীর্য করে ফেলেছে।
দেশটাতো এমন হবার কথা ছিল না। আমাদের পূর্বপুরুষরাইতো, আমাদের স্বাতন্ত্র্য, আমাদের আমিত্ব, আমাদের অহংবোধ, আমাদের আত্মগৌরব, আমাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আগ্রাসী বৃটিশ, শোষক জমিদার-মহাজন ও কুচক্রী সাম্প্রদায়িক হিন্দু রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে, সমরে, সংগ্রামে, আন্দোলনে আত্মোৎসর্গ করতে কার্পণ্য করেনি। কখনও নিসার আলি হয়ে, হাজী শরীয়তুল্লাহ হয়ে, মাসুম শাহ, দুদু মিয়া, সৈয়দ আহমদ বেরেলভী হয়ে, কাজী মিয়া জান, হাবিলদার রজব আলি, মুন্সী মেহের উল্লা হয়ে, জেল জুলুম, ফাঁসি-গুলীতে বুক পেতে দিতে তারা পিছপা হয়নি। আজ কেন তাদের ত্যাগ, তিতিক্ষা, আত্মোৎসর্গ, রক্তদান, অকিঞ্চিৎকর, অপ্রয়োজনীয়, মূল্যহীন হয়ে পড়েছে? শিক্ষা-সংস্কৃতিতে তাদের ছায়ামাত্রও নেই। মনে হচ্ছে, আমরা মুসলমানরা তো মাত্র সেদিন ’৭১ সালে জীবন শুরু করেছি। কে শেখাল যে, আমরা একাত্তরের প্রজন্ম?
গোটা জাতি আবেগমন্ডিত হয়ে, নেশাগ্রস্তের মতো পথ হাঁটছে। যে পথের নিশানা নেই, ইতিহাস নেই, যুক্তির আলো পর্যন্ত যে পথে ঢুকতে পারছে না। সিজোফ্রেনিয়া রোগীর মতো জাতি সেই পথে হাঁটছে। নিকটকে জানতে হলে, দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হয়। জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে হলে, ঐতিহ্যের আয়নায় নিজের মুখ দেখতে হয়। সে আয়না আজ ধুলিমলিন করে দেয়া হয়েছে। ফলে দূরের অতীত তমসাবৃত, চক্ষু জ্যোতিহীন, আত্মদর্শন সম্ভব হচ্ছে না। ভাবতে অবাক লাগে, এ জাতি কেমন করে ভুলে গেল মাত্র কিছুদিন আগের বেদনাময় অতীত। গত শতাব্দীর প্রথম দিকেও তো পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মেষ, ছাগল, হালের বলদের মতো উৎপাদক শ্রেণির জীব বলে মনে করা হতো। তাদের দানাপানির দরকার আছে, শিক্ষাদীক্ষার দরকার আছে, মানুষ হিসেবে বাঁচার অধিকার আছে, সেটুকুও স্বীকার করা হতো না। কলকাতায় বসবাসকারী জমিদার বাবুদের বল্গাহীন শোষণে এদেশের চাষাভুষা, ক্ষেতমজুর, মুসলমানদের জীবন অতীষ্ঠ ছিল। কলকাতায় আরামে বসবাসকারী ময়মনসিংহের জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য্য, গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী, কাশিম বাজারের মহারাজ মনীন্দ্র নন্দী, জোড়াসাঁকোর জমিদার মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীঘাপাতিয়ার রাজা, নাটোরের রাজা, ফরিদপুরের সিকদার ও ঘোষ পরিবারের মতো আরও অনেক বাবু জমিদারদের নিষ্ঠুর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য এদেশের পদদলিত পাঁচু শেক, গেঁদু মুনশী, কালু মোড়ল, হাবু প্রমানিক প্রমুখ মুসলিম সন্তানরা মানুষ হিসাবে বাঁচার মতো একটা জমিন সৃষ্টির আশা নিয়েই, মুজাহিদ হয়ে জেহাদ মনে করেই আত্মোৎসর্গ করেছিল একটা মুসলিম দেশ নির্মাণের জন্য। সেই জমানায় গরু কোরবানী করলে মুসলমানদের মৃত্যুদ- দেয়া হতো, দাড়ি রাখলে খাজনা দিতে হতো, আরবী-ফারসী নাম রাখা নিষিদ্ধ ছিল। দুর্গাপূজা, কালীপূজায় কর দেয়া মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। মুসলমানদের জাতীয় অস্তিত্বই স্বীকার করা হতো না।
১৯০৫ সালের ঘটনাই ধরা যাক। বৃটিশ আমলে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৬ বর্গমাইল বেষ্টিত বিশাল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিকে ভাইসরয় লর্ড কার্জন দুই প্রদেশে ভাগ করতে চাইলেন। এই বিভাজনের ফলে পূর্ব বাংলার অবহেলিত মুসলমানরা উপকৃত হবে শুধুমাত্র, এই আশঙ্কা নিয়ে বর্ণ হিন্দুরা তেলেসমাতি কা- শুরু করে দিল। মুসলমানরা শিক্ষিত হবে, চাকরি-বাকরি পাবে, উকিল-মোক্তার হবে, সংসদ সদস্য হয়ে, বাবু জমিদারদের সাথে এক আসনে বসবে, এটা কি মেনে নেয়া যায়? শুধু মাত্র পূর্ববাংলার মুসলমানদের উন্নতি ব্যাহত করার জন্য বঙ্গভঙ্গ রহিত আন্দোলন শুরু হয়ে গেল। কেবল সাধারণ হিন্দু বাবুরাই নয়, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির অন্যতম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও মিছিল নিয়ে পথে নামলেন, যা এর আগে কোনদিন দেখা যায়নি।
শুধু কি অহিংস আন্দোলন? বিপিন পাল, অশ্বিনী দত্ত, অরবিন্দ ঘোষ, সূর্যসেন, বাঘা যতিন, প্রীতিলতা প্রমুখের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা এবং তিলক, বঙ্কিমচন্দ্রের সাম্প্রদায়িক প্ররোচণায় দেশজুড়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু করে দেয়া হলো। যার ফলে বৃটিশ রাজশক্তি মুসলমানদের আশাভঙ্গ করে, বঙ্গভঙ্গ রোধ করতে বাধ্য হলো। আজ বাংলাদেশে সেই সূর্য সেন, প্রীতিলতাদের আরাধনাই চলছে। নিসার আলি-শরীয়তুল্লাহরা শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই। তাঁরা অপাংক্তেয় হয়ে গেছেন।
এ দেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ১৯১২ সালে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় আসার পর, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ পূর্ববাংলার মানুষের শিক্ষার জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানালেন। সংগে সংগে বাঙালি এলিট বাবুরা প্রতিবাদে ফেটে পড়ল। শ্রীশচন্দ্র ব্যানার্জি, রাসবিহারী ঘোষ, কলকাতা ইউভার্সিটির ভিসি স্যার আশুতোষ মুখার্জির মতো বিদ্বজ্জনেরা ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে ১৮ বার স্মারকলিপি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করলেন। ১৯১২ সালের ১৮ মার্চ কলকাতা গড়ের মাঠে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে যে জনসভা হয়েছিল তাতে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই রবীন্দ্রনাথ আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথার মুকুটে। আর যে নওয়াব সলিমুল্লাহ নিজে নিঃস্ব হয়ে জমিদারির বিরাট অংশ বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করলেন, যে সৈয়দ নওয়াব আলি চৌধুরী নিজের জমিদারি বন্ধক রেখে সে যুগে (১৯২১) ৩৫ হাজার টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে দান করলেন, তাদের কথা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদেরও জানা নেই। কারণ তারা জাতিতে মুসলমান।
এদেশের মানুষ এটাও ভুলে গেছে যে, ১৯৪৭ সালের আগে, হাড়জিরজিরে মুসলমান অধ্যুষিত এই পূর্ব বাংলায় দেশরক্ষার জন্য সেনাবাহিনী গঠন করার মতো লোক ছিল না। ’৪৭ সালে বৃটিশ আর্মিতে ৪/৫ জন কিংস কমিশন প্রাপ্ত বাঙালি অফিসার, ৫০/৬০ জন জেওসি, শ’দুয়েক বাঙালি সিপাহী নিয়ে ১৯৪৭ সালে দেশটা স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান হয়েছিল। সেখান থেকে আজ বাংলাদেশে পৃথিবীর মর্যাদাসম্পন্ন আর্টলারি, চৌকস বিমানবাহিনী, নৌ বাহিনী বিদ্যমান। এ কোনো তন্ত্রমন্ত্রে বা ‘বন্ধুর’ হাত-ধরে গড়ে ওঠেনি। ’৪৭ এর স্বাধীনতার সময় এদের প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাশ করা কোনো বাঙালি আইসিএস অফিসার ছিল না। মাত্র দু’জন নমিনেটেড আইসিএস ছিলেন, যাদের একজন পূর্ববঙ্গের ছিলেন, অপরজন পশ্চিমবঙ্গে থেকে যান।
এদেশে ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। এছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৮টি মেডিক্যাল কলেজ, ১টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২টি কৃষি কলেজ, নৌ-বন্দর, ৭৮টি পাটকল, ৬৩টি কাপড়ের কল গড়ে উঠেছিল। এছাড়াও অল্প সময়ে স্বতন্ত্র দেশের উপযোগী নানান প্রতিষ্ঠান গড়া সম্ভব হয়েছিল। এ সব কিছুই ছিল ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার অবদান, আমাদের পূর্বপুরুষদের ১৯০ বছরের নিরলস সংগ্রামের ফসল। স্বাধীন মুসলিম জাতিসত্তা আর নিখাদ দেশপ্রেমের ফসল। আজ সংগ্রামও নেই, জাতিসত্তাও নেই, দেশপ্রেমও নেই।
মড়ক লাগলে যেমন গ্রাম বিরান হয়ে যায়, ভূমিকম্পে যেমন দেশ শ্মশান হয়ে যায়, তেমনি এক বৈরী হাওয়া এসে আমাদের সাজানো দেশটাকে তছনছ করে দিয়েছে। মিলকারখানা উজাড়, কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ নেই, কৃষি উৎপাদন বিপন্ন, চাষিরা উৎপন্ন ফসলের দাম পায় না বলে রাস্তায় উৎপন্ন ফসল ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। সকল ভোগ্যপণ্যের জন্য সিন্ডিকেট করে পরনির্ভরশীলতা বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। দেশময় চলছে লুটপাট, ডাকাতি আর অর্থ পাচার। দেশ নিয়ে কেউ ভাবছে না, যার যার আখের গোছাতে ব্যস্ত! দেশে বলদর্পী আড়ালে অঘোষিত রাজতন্ত্র চলছে। রাজা ধরাছোঁয়ার বাইরে, প্রজাসাধারণ দাসের মতো পদসেবায় রত। পুরানো শত্রু বন্ধুর বেশে মাথায় বসে দেশ চালাচ্ছে। স্বাধীনতার নামে দেশ কলোনিয়াল রাজ্য!
উদার দৃষ্টি দিয়ে যদি বিবেচনা করা যায় তাহলে স্পষ্ট দেখা যাবে, ১৯ শতকের প্রথম দশকে দাসের মতো জীবনযাপন করা একটি জাতি লড়াই করে স্বাধীন দেশের মালিক হয়েছিল। অতি দ্রুত অর্থ-বিত্তে, শক্তি-সামর্থ্যে, মান-সম্মানে পৃথিবীর সকল দেশের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। আজ কার ইশারায় তারা শত্রুর জিঞ্জির গলায় পরে দাস জীবনে ফিরে গেছে। একি একটি জাতি হিসাবে আত্মভ্রম, নাকি আত্মহনন, কে এদের বলে দেবে?
লেখক: বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বহু গ্রন্থের লেখক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন