হৈচৈ, আনন্দ-উল্লাস। সবুজ নীলিমার মাখামাখি অরণ্যে উড়ে বেড়ানো আর ঘুরে বেড়ানোর প্রিয় ঋতু শীত। বছরের এ সময়টি আসলেই কুমিল্লার দর্শনীয় স্থানগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যটক, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ভ্রমণ আর এলাকা বা সংগঠন কেন্দ্রিক পিকনিক পার্টির ঢল নামে। কুমিল্লার কোটবাড়ি শালবনবিহার, ময়নামতি জাদুুঘর, বৌদ্ধবিহার, শালবনের উপজাতি পল্লীতে সপ্তাহের বন্ধের দিন রোববার ছাড়া প্রতিদিনই হাজারো দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই থাকে।
কুমিল্লা শহর থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে কোটবাড়ি। এখানে রয়েছে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর। প্রায় ৩৭ একর জায়গা জুড়ে শালবন বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। সমতল থেকে যার উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। বুদ্ধ রাজাদের সময় সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দিতে এ শালবন বৌদ্ধবিহার স্থাপিত হয়। আর ময়নামতি জাদুঘরে রয়েছে অসংখ্য পুরাকীর্তি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় রয়েছে ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান দু’টি। প্রতিদিন হাজারো দেশি পর্যটক-দর্শনার্থী ছাড়াও বিদেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে ঐতিহাসিক শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরে।
এবারে শীতের শুরুতেই দেশি বিদেশি পর্যটক আর বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পিকনিক পার্টি, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সফর ও পারিবারিক ভ্রমণে মুখরিত হয়ে ওঠছে ঐতিহাসিক শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর। কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় শালবন বিহার এলাকায় নেই ছিনতাই ও চোরের উৎপাত। নির্বিঘেœ দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর আনন্দ উল্লাস করছেন কুমিল্লার ঐতিহাসিক এ স্থানটিতে। শালবন বিহার ও জাদুঘর প্রাঙ্গন জুড়ে নানা প্রজাতির ফুলের সমারোহ ঘটেছে।
শিক্ষাসফরে আসা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চৌধুরীহাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হালিমা খানম জানান, এখানকার ইতিহাস সমৃদ্ধ নিদর্শনগুলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মন কেড়েছে। বিহারের বিস্তৃীর্ণ এলাকাজুড়ে বৌদ্ধসভ্যতার নিদর্শন মনে হয় জীবন্ত ইতিহাস। আর জাদুঘরে প্রাচীন অনেক কিছু দেখেছি। আমরা মুগ্ধ। আর এখানকার সিকিউরিটি ব্যবস্থা অনেক উন্নত।
কিশোরগঞ্জ থেকে শিক্ষাসফরে আসা গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, শালবন বিহারসহ অন্যান্য প্রতœতাত্ত্বিক স্থানগুলো বেড়ানোর মতো দারুণ জায়গা। শালবন ও জাদুঘরের আশপাশে ভালমানের হোটেল রেস্তোরা ও বিশ্রামাগার থাকলে দর্শনার্থীদের অনেক সুবিধে হতো। তবে আমরা শিক্ষার্থীরা লাল ইটের পুরোনো কীর্তি দেখে যেমনটি মুগ্ধ তেমনি ঐতিহাসিক শালবন বিহারের এই প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনে বিভিন্ন ধরনের ফুলের সমারোহ দেখে আরো বেশি মুগ্ধ হয়েছি।
কলেজ শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ময়নামতি জাদুঘর ও শালবন বিহারসহ অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে মানুষের প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওযায় অন্য জেলার মানুষও কুমিল্লায় সহজে আসতে পারেন। তবে কোটবাড়ি এলাকায় আবাসিক ব্যবস্থা থাকলে দর্শনার্থীর জন্য অনেক সুবিধা হতো।
এদিকে দর্শনার্থী বাড়ায় টিকেট বিক্রিতে রাজস্বও বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ৬ মাসে শালবন বিহার ও জাদুঘরের টিকেট বিক্রিতে রাজস্ব আয়ের পরিমান ৩৯ লাখ ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম ২১ দিনে টিকেট বিক্রিতে আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা।
কুমিল্লার ময়নামতির শালবন বিহার ও জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাসিবুল হাসান সুমি বলেন, শালবন বিহার ও জাদুঘরের মতো দু’টি ঐতিহাসিক বড় প্রতিষ্ঠান আমরা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পরিচালনা করছি। বিহারের ভেতরে পর্যটকরা নিরাপদে জায়গাটি পরিদর্শন করে থাকেন। বিহারের মূল পরিচিতির দুইটি লেখা ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে।
যা দর্শনার্থী বা পর্যটকদের দৃষ্টিতে পড়ছে। এছাড়া এখানকায় প্রাপ্ত প্রতœসম্পদগুলো বৌদ্ধবিহার সংলগ্ন ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা রয়েছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে পর্যটক ও দর্শনাথীর সংখ্যা বেড়ে থাকে। আমাদের রাজস্বও বাড়ছে। বিহার ও জাদুঘর দেখতে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টির ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এছাড়া দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার পাশাপশি সৌন্দর্য বাড়াতে পুরো বিহার এলাকাকে ফুলের মেলায় সাজানো হয়েছে। ফুলের বাগান করার জন্য রংপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা এসব ফুলের চারা সংগ্রহ করেছেন। প্রতিটি গাছেই প্রচুর ফুল এসেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন