বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

আবাসিক সুবিধা সঙ্কটে রাজস্ববঞ্চিত সরকার

গারো পাহাড়ের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র

এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইহাতী (শেরপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০১ এএম

শুধুমাত্র আবাসিক সুবিধা না থাকায় সরকার গারো পাহাড়ের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভারত সীমান্তঘেসা শেরপুর জেলার গরো পাহাড়ে অত্যন্ত লাভজনক পর্যটনখাতটি শুধুমাত্র আবাসিক সুবিধার অভাবে অলাভজনক খাতে পরিণত হয়েছে। গারো পাহাড়ে রয়েছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় ‘অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র’, ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’, ’তাড়ানি’, ‘রাজার পাহাড়’, ‘অর্কিড পর্যটন প্রকল্প’ ও ‘জিএস রাবার বাগান’সহ বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র এবং ‘নাকুগাঁও স্থলবন্দর’। অথচ নেই কোন আবাসিক সুবিধা। ফলে এই লাভজনক পর্যটন খাত থেকে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অবাসিক সুবিধা না থাকায় মাত্র ১ দিনের জন্য আসতে হয় পর্যটকদের। অথচ অবাসিক সুবিধায় হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট থাকলে অত্যন্ত লাভজনক হতো সম্ভাবনাময় এখানকার পর্যটনখাত আয়ও বাড়তো বহুগুণ। খাবার, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা সুবিধাসহ সকল ব্যবস্থা ভালো থাকলেও জেলা শহর ব্যতিত রাতযাপনের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। তাছাড়া নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে ভারত যাতায়াতের সুবিধাও কাজে আসছে না অনেকাংশে। গারো পাহাড় অঞ্চলের শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী, আলহাজ রেজাউর রহমান মাস্টার, আলহাজ শরীফ উদ্দিন সরকার, সরোয়ার্দী দুদু মন্ডল, শ্রী ধীরেন্দ্র কোঁচ, শ্রী যুগল কিশোর কোঁচ ও শ্রী জাগেন্দ্র কোঁচ বলেন, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, রিসোর্ট ও আবাসিক হোটেল থাকলে পাল্টে যেতো গোটা গারো পহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর দৃশ্যপট ও এখানকার পর্যটনখাত। সরকারের আয় ও বাড়তো বহুলাংশে। পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত লোকজন বলেন, শুধু দেশই নয়, দেশের বাইরের পর্যটকদেরও পদচারণায়ও মুখরিত থাকতো গারো পাহাড়ি পর্যটন কেন্দ্রগুলো। সীমান্তঘেঁষা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মনমুগ্ধকর শাল গজারির বন, উঁচু-নিচু টিলা ও পাহাড়ি জীববৈচিত্র্য দেখতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়তো। ২শ’ বছর ধরে বসবাসরত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি, কৃষ্টিকালচার, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি গারো পাহাড় দেখতে কার না মন চায়।
উল্লেখ্য, এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগে তিন দশক আগে গড়ে তোলা হয় ‘গজনী অবকাশ পর্যটনকেন্দ্র’। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও সংসদ সদস্য মরহুম ডা. সেরাজুল হক ১৯৯৩ সালে মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা গারো পাহাড়ের গজনীতে ৯০ একর এলাকাজুড়ে ‘গজনী অবকাশ কেন্দ্র’ গড়ে তুলেন। এই পর্যটন কেন্দ্রই দেশজুড়ে গারো পাহাড়ের পরিচিতি লাভ করেছে। আর ‘অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র’ গড়ে ওঠায় দেশ-বিদেশের পর্যটকদের শীত মৌসুমে অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড় দেখতে অগন্তুকদের ঢল নামে গজনী অবকাশ পর্যটনসহ অপরাপর কেন্দ্রগুলোতে। বন বিভাগও গড়ে তোলেছে ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’। চমৎকার পিচঢালা সীমান্ত সড়ক পর্যটনে বিরাট ভূমিকা রাখলেও আবাসন সংকটে কোন কাজেই আসছে না। অথচ পর্যটন কেন্দ্রকে আরো আকর্ষনীয় করতে ‘গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে’ ঝুলন্ত ব্রিজ, ক্যাবলকার ও জিপলাইনিংসহ বেশ ক’টি নতুন রাইড স্থাপনে পর্যটকদের মন কেড়েছে অনেকাংশে আরো বেশি। মাত্র ১ দিনের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রসহ অপরাপর দর্শনীয় স্থানগুলো। ইদানিং মধুটিলা ইকোপার্ককে ও আকর্ষনীয় করে তোলা হয়েছে। সীমান্ত সড়কেই ‘রাজার পাহাড়’, ‘গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র’, ’রাবার বাগান’, ’মধুটিলা ইকোপার্ক’, ‘বারোমারি মিশন’, ’নাকুগাঁও স্থলবন্দর’, ’পানিহাটা তাড়ানি’সহ ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি পাহাড়ি জীবন প্রণালী ও জীববৈচিত্র্য উপভোগে অগন্তুকরা মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। কিন্তু ২/৪ দিন ভ্রমণের সুযোগ নেই অবাসিক ব্যবস্থার সঙ্কটের কারণে। আর এতে একদিনেই ফিরতে হয় অগন্তুকদের। নিরাপত্তায় থানা পুলিশ ও বিজিবি থাকলেও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে টুরিস্ট পুলিশের দাবি এলাকার সুস্থ্য বিবেক সম্পন্ন চিন্তাশীল মহলের।
আগত পর্যটকরা জানান, থাকার ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার আগেই চলে যেতে হয়। ফলে পাহাড়িদের জীবনমান, সংস্কৃতি, কৃষ্টি কালচার ও সৌন্দর্য উপভোগ, সাংস্কৃতিক বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম বলেন, অবাসিক ব্যবস্থা থাকলে ৫/৭ দিনের জন্য কেউ এসে সবগুলো পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারতেন।
দেওয়ানগঞ্জ থেকে স্বস্ত্রীক আসা মাসুদসহ বেশ ক’জন দর্শনার্থী বলেন, গারো পাহাড়ে এতোগুলো মনমুগ্ধকর দর্শণীয় স্থান। অথচ আবাসন ব্যবস্থা নেই। সল্প সময়ে অনেক স্পটতো দেখা অসম্ভব। তাই মনে কষ্ট ও অতৃপ্তি নিয়ে ফিরে যেতে হয় সন্ধ্যার আগেই।
ঝিনাইগাতীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, গজনী অবকাশ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। এতেই শেরপুর ও গারো পাহাড় পরিচিতি লাভ করেছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অন্তরিকতায় ভ্রমণপিপাসু টানতে ইতোমধ্যেই অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আবাসনের জন্য রাংটিয়াতে মোটেল স্থাপন ও টুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থায় জেলা প্রশাসক মহোদয় মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করে চলেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এখানকার পর্যটনকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ড উদ্যোগ নিচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ ও কমিউনিটি ট্যুরিজমে গুরুত্বে স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ কর্মশালা করা হয়েছে।
অতি সম্প্রতি বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পর্যটন কর্পোরেশনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পর্যটন কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছেন। সচিব মোকাম্মেল হোসেন মহোদয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে সরক পদক্ষেপের কথা বলেছেন। দ্রুত সময়ে আধুনিকমানের পর্যটন মোটেল নির্মাণ করতে পর্যটন বিকাশে জেলা প্রশাসন মহোদয় ৫ একর জমির সম্ভাব্যতা যাচাই ও পরিদর্শন করেছেন। বরাদ্দ পেলেই কাজ হবে। নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের ও ব্যবস্থা করা হচ্ছে সবাই এ ব্যাপারে আন্তরিক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন