সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

উদ্বোধনের আগেই ধস

আশুগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মান নিয়ে নানা প্রশ্ন

সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু, আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

নির্মাণের প্রায় আড়াই বছর পরও আশুগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এরই মধ্যে নতুন ভবনটির পার্কিং বেজমেন্ট ও নিরাপত্তা দেয়ালের একাংশ ধসে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত থাকায় চুরি হয়ে গেছে ৪০টি বৈদ্যুতিক পাখা ও স্যানিটারি সরঞ্জাম।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া আড়াই বছরেই ধসে পড়ায় ভবনটির নির্মাণকাজের মান নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। ৪০টি বৈদ্যুতিক পাখা ও স্যানিটারি সরঞ্জামাদি চুরি হয়েছে নাকী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সরবরাহই করেনি এমন গুরতর প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় চারতলাবিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি নির্মিত হয়। দরপত্রের মাধ্যমে ভবনটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্টার লাইট সার্ভিসেস এবং মেসার্স উদয়ন বিল্ডার্স (জেবি)।
২ কোটি ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি ২০২০ সালের জুন মাসের প্রথম দিকে উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডির কাছে ভবনটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, হস্তান্তরের পর উপজেলা প্রশাসন ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার উদ্যোগ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে দিয়ে ভবনটি উদ্বোধন করার দাবি জানান। এ নিয়ে দুই পক্ষের ঠেলাঠেলিতে হস্তান্তরের প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও ভবনটি উদ্বোধন হয়নি। ফলে নির্মাণের পর থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে। চুরি হয়ে গেছে সোলার প্যানেলের ব্যাটারি, সব বৈদ্যুতিক তার, সুইচ, সুইচ বোর্ড, ওয়াশরুমের সব স্টিলের ট্যাব ও অন্তত ৪০টি বৈদ্যুতিক পাখা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের সামনের প্রায় ২৪ বর্গফুট (৪ ফুট প্রস্থ ও ৬ ফুট দীর্ঘ) পার্কিং বেজমেন্ট দেবে গেছে। এতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্তম্ভে ফাটল ধরেছে। দক্ষিণ পাশের নিরাপত্তা দেয়ালের বৃহৎ অংশ হেলে পড়েছে। দ্রুত মেরামত না করলে পুরো পার্কিং বেজমেন্ট দেবে গিয়ে রাস্তা থেকে ভবনটি আলাদা হয়ে পড়ারর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী পৃথুল ভৌমিক জানান, বেজমেন্টের নিচের বালু সরে যাওয়ায় তা দেবে গেছে। তবে হেলে পড়া নিরাপত্তা দেয়াল মূল ভবন থেকে আলাদা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে। তাঁর নির্দেশ মতো প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করা হবে।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, উদ্বোধন না হওয়ায় এটি একেবারেই নিরাপত্তাহীন। উদ্বোধন হলে কমপ্লেক্সের দোকান ও হলরুম ভাড়া দেয়া সম্ভব হতো। এতে ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি এর আয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ দুস্থ মানুষকে সাহায্য করা সম্ভব হতো। তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে একাধিকবার সময় চেয়ে না পাওয়ায় ভবনটি এখনও উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে নিয়ে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার মোজাম্মেল হোসেন গোলাপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম আজাদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিমের সঙ্গে। তাঁদের দাবি, আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ হলেও উদ্বোধন না হওয়ায় কোনো কাজে আসছে না।
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজ করায় উদ্বোধনের আগেই ভবনটির পার্কিং বেজমেন্ট ও নিরাপত্তা দেয়াল ভেঙে যাওয়াসহ নানা ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া বৈদ্যুতিক পাখা ও স্যানিটারি সরঞ্জামের অনেক কিছুই সরবরাহ করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এখন চুরি হয়ে গেছে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এর সঠিক তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্থ ভবনটি মেরামত করে দিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারি তোফায়েল আলী রুবেল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিন বছর আগে ভবনটি হস্তান্তর করা হয়েছে। সবকিছু সিডিউল অনুযায়ী বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে তাদের কোনো গাফিলতি নেই। খালের ওপর মাটি ভরাট করে পার্কিং বেজমেন্ট করায় ধসের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন চাইলে সংস্কার কাজে যতটুকো সম্ভব সহায়তা করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের জিনিসপত্র চুরি, পার্কিং বেজমেন্ট ও দেয়াল ধসের কথা স্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অরবিন্দ বিশ্বাস। তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে সরেজমিন পরিদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দ্রুত এটি সংস্কার ও উদ্বোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Aman Ullah Talukder ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:২৫ এএম says : 0
হায়রে LGED! আর এটাই বাংলাদেশ।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন