শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ব্লুমবার্গে ব্যতিক্রমী সাক্ষাৎকার : রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার প্রত্যয় ইমরান খানের

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:০৮ পিএম

চলতি বছরের আগস্টের দিকে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে পারে জাতীয় নির্বাচন। এতে বিজয়ী হয়ে আবারও সরকার গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আর সেটা হলে বর্তমানের বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবেন, ইতোমধ্যে অর্থনীতি ঠিক করার একটি পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছেন তিনি।

এক সাক্ষাৎকারে এমনই আশার কথা শুনিয়েছেন ক্রিকেট থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খান। মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

গত বছরের এপ্রিলে আস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। যদিও তার অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া তাকে হটাতে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি এটিকে ‘রিজাইম চেঞ্জ’ হিসেবে উল্লেখ করে আসছেন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই আগাম নির্বাচনের দাবিতে রাজপথ উত্তপ্ত রাখার চেষ্টা করছেন ৭০ বছর বয়সি এই রাজনীতিক।
সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। নতুন করে সরকার গঠন করতে পারলে তিনি বর্তমান ঋণ-নির্ভর অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করবেন। ঋণ নেওয়া ঠেকাতে এবং অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে বিস্তৃত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছেন বলে জানান। এজন্য তার আমলের অর্থমন্ত্রী শওকত তারিনকে আবারও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেবেন।
সরকারবিরোধী লংমার্চে গুলিবিদ্ধ হয়ে লাহোরের বাসভবনে বিশ্রামে থাকা ইমরান খান বলেন, ‘যদি আমরা সরকার গঠন করতে পারি, তাহলে খুব বেশি সময় হাতে থাকবে না (সে কারণে আগে থেকেই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করছেন)।’

তার কাছে জানতে চাওয়া হয়— আপনার এই পরিকল্পনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল তথা আইএমএফের যোগাযোগ আছে কিনা? কারণ দেশটির আইএমএফের সাড়ে ৬ হাজার কোটি ডলারের ঋণ পেতে কয়েকবার তারিখ পিছিয়েছে। এ বিষয়ে ইমরান খান বলছেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের পছন্দের বিকল্প নেই।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি বিপজ্জনকভাবে ঋণ খেলাপির কাছাকাছি রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আইএমএফের লোন নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক, বিশেষ করে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও ট্যাক্স বাড়ানোর ব্যাপারে। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের বর্তমানে এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এছাড়া গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় দেশটির অর্থনীতি এক প্রকার পঙ্গু হয়ে গেছে। এতে ব্যাপক হারে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে।
খান বলছেন, ‘আমাদের পলিসি তৈরি করতে হবে, যেটা এর আগে সেভাবে হয়নি।’ প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা করি।’

ইমরান সরকারের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল জ্বালানির মূল্য সর্বনিম্ন রাখা। যা নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে তৈরি টানাপোড়েনের কারণে ঋণ পেতে ঝামেলা হয়। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড়মূল্যে (ডিসকাউন্ট) জ্বালানি কেনার প্রত্যাশা থেকে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এমনকি এ উদ্দেশ্যে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি মস্কোয় পূবনির্ধারিত সফর করেন, যখন রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে। সফরে ৩ ঘণ্টার আলোচনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জ্বালানি সরবরাহের মাধ্যমে খান প্রশাসনকে সহায়তার অঙ্গীকার করেন।
সাবেক এ ক্রিকেট স্টার বলেন, আগামীতে তিনি একটি স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করবেন, যাতে চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোনো একক রাষ্ট্রের প্রতি নির্ভরশীল না হতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের উদাহরণ দিয়ে ইমরান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, আবার একই সময়ে তারা রাশিয়ার কাছ থেকে কমিশনে তেল কিনছে এবং চীনের সঙ্গেও বাণিজ্য করছে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক ছিল উল্লেখ করে খান বলেন, তার উত্তরসূরীর (বাইডেন) আমলে সম্পর্কের অবনতি হয়। “আমার মনে হয়, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হতে কারও ওপর দোষ চাপানোর প্রয়োজন ছিল, সে কারণেই এমনটা হয়েছে,” বলেন সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী।

তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর বিষয়টিকে ‘রিজাইম চেঞ্জ’ হিসেবে অভিহিত করেন ইমরান খান। একই সঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তাকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে। রিজাইম চেঞ্জের সঙ্গে জড়িত শরিফ জোট (ক্ষমতাসীন জোট) এবং দেশের স্টাব্লিশমেন্টের (সামরিক বাহিনী) কিছু সদস্য আতঙ্কে আছে। আমরা সঠিকভাবে জানি, কারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল।
ব্লুমবার্গ বলছে, এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের মুখপাত্র এবং সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে তারা রাজি হয়নি।

ইমরান খান বর্তমানে যে বাড়িতে অবস্থান করছেন, তার বাইরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি এখনও মনে করেন, তার জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। গত নভেম্বরে র্যাালিতে তার ওপর হামলার ঘটনায় শাহবাজ শরিফ ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য জড়িত বলেও অভিযোগ করেন। যদিও উভয়ই এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইমরান খান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি আতঙ্কিত, আমার শত্রুরা শক্তিশালী। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা পুরোটাই আমার বিরুদ্ধে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন