বরগুনার তালতলী উপজেলার হাজারো পথযাত্রীর যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন খোট্রারচর খালের ওপর নির্মিত সেতুটি প্রলয়ঙ্করী সিডরে দেবে যাওয়ার দীর্ঘ ১৬ বছরেও সংস্কার বা পুননির্মাণ না হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার এলাকাবাসী।
খোট্টারচর সেতুর সংযোগ কাঁচা রাস্তাটিও সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই কাঁচা সড়ক দিয়ে রিক্সা, অটোরিকশা, টমটম, ট্রলিসহ নানা ধরনের স্থানীয় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেতুটির উপর দিয়ে কোন যানবাহন চলাচলের সুযোগ না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। যেকোন মুহ‚র্তে ভেঙে পড়ার আশংকা রয়েছে সেতুটি। সেতুটি সংস্কারের দীর্ঘদিনের দাবি এলাকাবাসীর।
উন্নয়ন বঞ্চনার শিকার খোট্রারচর এলাকায় বসবাসরত অসহায় মানুষ জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দফতরের দ্বারে দ্বারে ঘুরে শুধু আশ্বাস আর প্রতিশ্রæতিই পেয়েছেন অনেকবার।
জানা যায়, উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের খোট্রারচর ও মাছবাজার সংলগ্ন তালতলী খালের ওপর সেতুটি নির্মিত হয়েছে ১৯৯০ সালে। ভেঙে যাওয়া সংযোগ সেতুটি ২০০৭ সালের ভয়াবহ ঘ‚র্নিঝড় সিডরের আঘাতে সেতুর বিভিন্ন অংশ ভেঙে ও মাটির নিচে দেবে যায়। দীর্ঘ ১৬ বছরেও দেবে যাওয়া সংযোগ সেতুটি সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। খোট্টারচর এলাকার সংযোগ সেতু সংশ্লিষ্ট কাঁচা রাস্তাটিও সংস্কার হয়নি। কাঁচা রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে চলাচল করে। ভুক্তভোগীদের দাবি দ্রæত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়ার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন একাংশ খোট্টারচর এলাকা পায়রা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এখানকার মানুষ ঝড়, জলোচ্ছ¡াসে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব মানুষের উপজেলা শহরে যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন এসংযোগ সেতু। প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে এই সেতু দিয়ে। এই সেতুটির নিচের লোহার পাইলিং ভেঙে গিয়ে আলাদা হয়ে গেছে। বন্যার আঘাতেও বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া সেতুটি একদিকে হেলে পড়েছে ছোট-বড কোনো যানবাহনও চলাচল করতে পারে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘ ১৬ বছরেও দেবে যাওয়া সংযোগ সেতুটি সংস্কার হয়নি। ২০০৭ সালে সিডরের পড়েই সেতুটি এমন অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ দূর করার চেষ্টা করেনি কেউ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও যেন কোনো মাথাব্যথা নেই সেতুটি সংস্কারের ক্ষেত্রে। বর্তমানে একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনো মুহ‚র্তে ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কৃষকদের অভিযোগ সেতু ও রাস্তা দুটোই চলাচলে অনুপযোগী হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় জনতা। স্কুলে যেতে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায় বেড়েছে খরচ। আবার রাস্তার এ দুরবস্থায় স্থানীয় কৃষিপণ্য সময়মতো বাজারজাত না করার ফলে দীর্ঘায়িত হয়েছে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এতে কৃষকের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
স্থানীয় গৃহিণী জামিনা বেগম জানান, শুকনা মৌসুমে কোনোমতে হেঁটে চলাচল করা গেলেও বৃষ্টি আর বন্যার সময় কষ্টের সীমা থাকে না। তারা আরও জানান, সেতু তো ঝুঁকিপূর্ণ। এর বাইরে সংযোগ রাস্তার দুরবস্থাও স্থানীয় মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।
নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ব্রিজটি আমার ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা শহর ও পার্শ্ববর্তী খোট্রারচর এলাকাবাসীর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। হাজারো গ্রামবাসী সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। দেবে যাওয়া ব্রিজটি ঝুঁকি পূর্ণ জেনেও প্রতিদিন হাজারও মানুষ বাধ্য হয়ে চলাচল করছে। ভারী যানবাহন কয়েক কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী (স্থানীয় সরকার বিভাগ) মো. ইমতিয়াজ হোসাইন রাসেল বলেন, ব্রিজ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যেই ব্রিজের ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে, প্রাক্কলন অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনুমোদন পেলে নির্মাণকাজ শুরু হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন