গারো পাহাড়ের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বেহাল দশা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনিয়মিত অফিস করায় ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা। বেশির ভাগ ক্লিনিকের ভবন জরাজীর্ণ ও বেহাল দশা। ওষুধ সরবরাহ কম ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) বা স্বাস্থ্যকর্মীরা অনিয়মিত অফিস করায় সঙ্কটে রয়েছে গ্রামীণ হতদরিদ্র জনগণ। ফলে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছে গারো পাহাড়বাসী। বেহাল অবস্থা উন্নয়নে কর্তৃপক্ষও উদাসীন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বেহাল ভবন মেরামতের তালিকা কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে করা হচ্ছে মনিটরিং। গ্রামীণ হতদরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবায় ১৯৯৯ সালে সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। ক্লিনিকে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচিসহ সেবা দেয়ার কথা। কিন্তু অযতœ-অবহেলা, অনিয়ম ও জরাজীর্ণ ভবনে কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে। শেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গারো পাহাড়ের ৩ উপজেলায়-শ্রীবরদীর ১০ ইউনিয়নে ৩৫ নালিতাবাড়ী ১২ ইউনিয়নে ৩৪টি ও ঝিনাইগাতী ৭ ইউনিয়নে ২৩ ক্লিনিক রয়েছে। বেশির ভাগই জরাজীর্ণ ও বেহাল দশা। বর্ষায় ছাঁদ চুইয়ে পানি পড়ে। কোনটির পলেস্তারা খসে পড়ছে। জেলার ১৬৯টি ক্লিনিকে ৪টি ব্যতীত সবগুলোই সিএইচসিপি রয়েছেন। সপ্তাহে ৬দিন খোলার নিয়ম এবং সিএইচসিপির ৩দিন ১জন স্বাস্থ্য সহকারী ও ১ জন পরিবার পরিকল্পনা সহায়ক সকাল ৯টা-৩টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
শ্রীবরদী উপজেলার খরিয়াকাজীরচর কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ক‘টি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা সপ্তাহে ৩/৪ দিন আসেন। ১০-১১টায় এসে আগেই চলে যান।
ঝিনাইগাতী উপজেলার দিঘীরপাড় ও রাঙামাটিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকসহ কয়েকটি ক্লিনিকে রাস্তা কাঁচা। বর্ষাকালে সেবা নিতে ভোগান্তি পোহাতে হয় জনগণকে। যাতায়াতের রাস্তা পাকা করার দাবি স্থানীয়দের।
নালিতাবাড়ী উপজেলাতেও অধিকাংশ ক্লিনিকের ভবন জরাজীর্ণ। কোথাও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। কোনো ক্লিনিকেই রোগীদের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। রূপনারায়নকুড়া ইউনিয়নে কিল্লাপাড়া ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকটি সড়কের অনেক নিচে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে। স্থানীয় নিয়ামুল মান্না বলেন, ক্লিনিকে সময়মতো লোক পাওয়া যায় না। ওষুধের জন্য গেলে, বলে ওষুধ শেষ। বাধ্য হয়ে উপজেলা হাসপাতালে যাই। কিল্লাপাড়া গ্রামের গৃহিনী মমতাজ বেগম বলেন, দুপুর না হইতেই ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে শেরপুর সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, সরকার স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছেন। ক্লিনিকে সেবার মান বৃদ্ধিতে মনিটরিং করা হচ্ছে। এতে সেবার মান ভালো। মান আরও বাড়বে। জেলার জরাজীর্ণ ভবনগুলো মেরামতযোগ্য, ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ-৩ ক্যাটাগরিতে তালিকা করে কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওষুধ সঙ্কট নেই। তবে বরাদ্দ বাড়ালে বেশি ওষুধ দেওয়া সম্ভব হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন