চাকমা রাজবাড়ি। এখন হারাচ্ছে শেষ স্মৃতি চিহৃ। রাঙ্গুনিয়া দক্ষিণ রাজানগরে অবস্থিত এই প্রচীন নিদর্শন। রাজবাড়িটি জরাজীর্ণ হয়ে আছে।
জানা যায়, সম্রাট আকবরের শাসন আমলে মোগল বংশধর সেরমুস্ত খাঁ প্রথম এখানে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৩৭ সাল থেকে রাঙ্গুনিয়ায় চাকমা রাজত্বের শুরু হয়। বান্দরবান জেলায় ছিল তার রাজধানী। তখন নবাব ছিলেন জুলকদর খাঁ। এরপর সেরমুস্ত খাঁর মৃত্যুর পর রাজা হন শুকদেব রায়। তিনি ছিলেন সেরমুস্ত খাঁর পোষ্যপুত্র। রাজা শুকদেব রায় বান্দরবন ছেড়ে রাঙ্গুনিয়ার শিলক নদীর পাড়ে প্রাসাদ তৈরি করেন। নাম দেন সুখবিলাস। ওইখানে প্রতিষ্ঠা করেন রাজধানী। রাজা ছিলেন নিঃসন্তান। তার স্ত্রী পরে রাজ্য চালানো ও বসাবাসের জন্য রাজানগরে তৈরি করেন রাজপ্রাসাদ। কারুকাজে ভরা এ ভবন। ৬তলা বিশিষ্ট প্রাসাদের প্রবেশ পথে রাজদরবার, সৈন্য ও বন্দিশালা। পাশেই আছে সুন্দর পুকুর। এখানেই বৌদ্ধদের প্রথম ভিক্ষু সীমাগার। পরে রাজনগরে প্রজা ও সাধারণ পানির কষ্টের মুক্তি জন্য প্রাসাদের পূর্ব খনন করেন কালীন্দিনী রানীর নামে সাগরদীঘি। নামকরণ হয় রাজারহাট এবং কালীন্দিনী রানীর নামে রানীরহাট ও রাজাভ‚বণ মোহন রায়ের নামে রাজাভ‚বণ উচ্চ বিদ্যালয়। শুকদেব’র মৃত্যুর পর তার বংশধর শের দৌলত খাঁ রাজ্য ভার যখন রাঙামাটির রাজবাড়িতে রাজত্ব স্থানান্তর হয় সেই থেকে রাজানগর থেকে রাজপ্রাসাদ, সৈন্যশালা ও বন্দিশালা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ৫২ একর জায়গা ওপরে পুরনো রাজপ্রসাদটি বর্তমানে অযতেœ-অবহেলায় ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এরপরেও এ প্রাসাদটি আজও দাঁড়িয়ে আছে কালেরসাক্ষী হয়ে। খসে পড়েছে প্রাসাদের ছাদ। শুকিয়ে বৃষ্টিতে প্রাসাদটি নড়বড়ে অবস্থা। রাজপ্রাসাদটি টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
২০১৩ সালে রাজ বংশধর প্রমতোষ দেওয়ান মৃত্যু পরে তার প্রজন্মরা প্রাসাদটি আঁকড়ে এখনো আছেন। এর মধ্যেও প্রায় হারিয়ে গেছে প্রাসাদটির রাজ দরবার, হাতি-ঘোড়ার পিলখানা, বিখ্যাত সাগরদীঘি, পুরাকীর্তি, বৌদ্ধ-বিহারসহ গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। তবে রাজবাড়ির সান বাঁধানো পুকুর, সাগরদীঘির আংশিক অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। অথচ কোনো সরকারই এ প্রাসাদটি প্রতœ নির্দশন হিসেবে সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ২০০৭ সালে বর্তমান রাজা দেবাশীষ রায় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর রাঙ্গুনিয়ার মানুষ আশা করেছিল সংস্কারের মধ্যমে রাজপ্রাসাদটি গড়ে উঠবে একটি পর্যটন কেন্দ্রে।
সরকারিভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে ৩০০ বছরের পুরা রাজকুঠিরের। ২০০৮ সালের মাঝামাঝিতে তিনি (দেবাশীষ রায়) সরকারিভাবে রাজবাড়ি এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন। সংরক্ষণের কথাও বলেছিলেন। কিন্তু এখনো কোনো সংস্কার করা হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন