অপরিকল্পিতভাবে মাটি পরিবহনের সময় কুমিল্লার বিভিন্ন আঞ্চলিক মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে ইটভাটার ট্রাক্টর, ড্রামট্রাক থেকে পড়া মাটি কুয়াশায় ভিজে কাদায় পরিণত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। সম্প্রতি একই রাতে মাত্র ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে ১০টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পান্নারপুল নামক স্থানে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দেবিদ্বার থানায় লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে দাবি জানিয়েছেন দুর্ঘটনার শিকার এক ভুক্তভোগী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ও দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পাকাসড়ক কাদা সড়কে পরিণত হয়েছে। পথচারীরা সড়কে চলাচল করতে পারছে না। বিশেষ করে দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চালকেরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। সড়কের পাশের লোকজন ও ব্যবসায়ীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। ইটভাটার ট্রাক্টর, ড্রামট্রাক ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত বহন করা মাটি সড়কে পড়ে রাতের কুয়াশায় পাকা সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। আবার সড়কের ওপর থাকা এসব মাটি দিনে শুকিয়ে যখন ধূলাবালি সৃষ্টি করে তখন সড়কের আশপাশের ব্যবসায়িরা পানি ছিটিয়ে কাদায় পরিণত করছে। সড়কে পড়ে থাকা এসব মাটি দিনে-রাতে সমান দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
থানায় অভিযোগকারি দুর্ঘটনার শিকার রায়হান চৌধুরী জানান, শুকনো মৌসুমে পাকা সড়কের ওপর থাকা এই মাটি তেমন বিপজ্জনক না হলেও শীত মৌসুমে ভারি কুয়াশায় পাকা সড়কের ওপর পড়ে থাকা ওই মাটিগুলো কাদা হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়। বিশেষ করে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পান্নারপুল এলাকা দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক্টর, ড্রামট্রাক ইটভাটার জন্য মাটি বহন করে চলাচল করছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত বহন করা মাটি সড়কে পড়ে দিনের বেলায় রোদে শুকিয়ে ধুলোবালি ছড়াচ্ছে আর রাতে কুয়াশায় ভিজে পাকা রাস্তা কর্দমাক্ত করে তুলছে। এতে করে এ সড়কের চলাচল করা মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের চাকা পিছলে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত পান্নারপুল নামকস্থানে অন্তত ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপরও আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার বেশিরভাগই মোটরসাইকেল চালক। এরমধ্যে তিনিও কর্দমাক্ত পিচ্ছিল সড়কে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন। জনস্বার্থে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত শনিবার দেবিদ্বার থানায় অভিযোগ করেছেন।
পান্নারপুলে দুর্ঘটনায় আহত মোটরসাইকেল চালক সাব্বির হোসেন জানান, ইটভাটার কাজে নিয়োজিত মাটিবাহী যানবাহন থেকে রাস্তায় পড়ে যাওয়া মাটি রোদের সময় রাস্তায় শুকিয়ে ধূলাবালি সৃষ্টি করলে সড়কের পাশের ব্যবসায়িরা সেখানে পানি ঢেলে ধূলামুক্ত হতে কর্দমাক্ত করছে আর রাতে শিশিরে ভিজে আরও পিচ্ছিল হচ্ছে। দেখে বোঝার ওপায় থাকে না এটা কার্পেটিং রাস্তা। ফলে সড়কে চলাচলে ঘটছে দুর্ঘটনা ও পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
এ বিষয়ে মিরপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, গত বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর আমরা দুইটি ড্রামট্রাক আটক করে মামলা দিয়েছি। এছাড়াও আমি ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতির সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানিয়েছি অপরিকল্পিতভাবে ও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মাটি বহন করে সড়ক নষ্ট করা যাবে না। মালিকরা বসে মিটিং করে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন। নচেৎ আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।
হাইওয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইটভাটার মাটি বহনকারি যানবাহনের অতিরিক্ত মাটি মহাসড়কে পড়ে সমস্যা সৃষ্টির বিষয়টি ইটভাটার মালিকরা সমধান না করলে আমরা প্রয়োজনে দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করবো। ইটভাটার মালিকরা ব্যবসা করবেন, ঠিক আছে। কিন্তু তাদের মাটিবাহী যানবাহনের কারণে জনসাধারণের সমস্যা, দুর্ভোগ সৃষ্টি ও রাস্তাঘাটের ক্ষতি এটা মেনে নেওয়া যাবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন