সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

আলু আবাদে আগ্রহ নেই কৃষকের

ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ : লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি : উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি : ঝুঁকছে বিকল্প চাষে

মঞ্জুর মোর্শেদ, মুন্সীগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশের তৃতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সীগঞ্জে চলতি আলু মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। গত দুই বছর প্রান্তিক কৃষক সিন্ডিকেটের কবলে পরে আলুতে লোকসান গুনেছে। আলুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তারা আলু আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। চলতি মৌসুমে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক শংকিত। মুন্সীগঞ্জে চলতি আলু মৌসুমে ৩৫ হাজার ৭শ’ ৯৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে মাত্র ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমি, জেলায় মোট আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১০লক্ষ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। পরপর দুই বছর আলুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষক আলুর বিকল্প হিসেবে চলতি মৌসুমে সরিষা এবং ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রধান অর্থকরি ফসল আলু। এখানকার কৃষক আলু গাছের পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছে। এখানকার প্রান্তিক কৃষকরা আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে আলু চাষ করে আর ফায়দা লুটে মধ্যস্বত্তভোগীরা। প্রতিবছর প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরও আলু আবাদ মৌসুমে তারা আবাদে সক্রীয় হয়ে ওঠে। মহাজনদের নিকট থেকে উচ্চহারে ঋণ এবং জমির মালিকের নিকট কম মূল্যে জমিতে আলু বিক্রির শর্তে ঋণ নিয়ে আলুচাষ করে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আলু মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৭শ’ ৯৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আলু আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদরে ৯ হাজার ৬২০ হেক্টর, টঙ্গিবাড়িতে ৯ হাজার হেক্টর, শ্রীনগরে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর, সিরাজদিখানে ৮ হাজার ৭৯০ হেক্টর, লৌহজেং ৩ হাজার ১৬০ হেক্টর এবং গজারিয়ায় ১ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর কম। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সরকারি হিসেবে ১০ লক্ষ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়।
আলদি গ্রামের আলু চাষি জিযাউর রহমান জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে ফলন ভালো হবে। জমিতে সেচ দিতে গত বছর যেখানে গন্ডা প্রতি ৩শ’ টাকা লাগতো এ বছর সেখানে খরচ পরছে ৫শ’ টাকা। সেচ, শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়েছে। সদর উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামের আব্দুল আউয়াল বেপারী বলেন, গত মৌসুমে নয় গন্ডা জমিতে আলু চাষ করে একশত বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছিলাম। প্রতি বস্তায় দু’শত টাকা লোকসান দিয়ে আলু বিক্রি করেছি। গত কয়েক বছর আলুতে লোকসান হওয়ায় চলতি মৌসুমে আলু চাষ কম করেছি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। ঠান্ডা পরায় ফলন ভালো হবে। গত কয়েক দিন ধরে প্রচন্ড কুয়াশা পরছে। আগামী কয়েক দিন কুয়াশা থাকলে গাছে রোগ বালাই দেখা দিবে। আলুর পাইকার মো. শহিদুলদ্ধাহ বলেন, গত বছর ৪৫০ বস্তা আলু বিক্রি করে ৯৮ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছি। প্রতি বস্তা আলুর হিমাগার পর্যন্ত যেখানে খরচ পরেছে ১ হাজার ৬০ টাকা সেখানে বিক্রি করেছি মাত্র ৮ শত ১০টাকা। গত মৌসুমে ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। লোকসানে লোকসানে গত দুই বছরে সব চালান শেষ হয়ে গেছে। পুঁজি না থাকায় আলু চাষ কম করেছি। এ বছর আলুর ন্যায্য মূল্য না পেলে আগামীতে আর আলু চাষ করবো না। কৃষকদের অভিযোগ অসাধু সার ব্যবসায়ীরা গত বছর নতুন সারের সাথে পুরান সার মিশিয়ে বস্তা বিক্রি করে। চলতি মৌসুমেও কোন কোন অসাধু ব্যবসায়ী সার বিক্রিতে অনিয়ম করেছে। গত মৌসুমে এসব সার জমিতে ব্যবহার করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলায় প্রধানত ডায়মন্ড আলু চাষ করা হয়। এজাতের আলু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। অতিরিক্ত রসালো হওয়ায় সহজে পঁেচ যায়। তিনি বলেন, কৃষকদের আলুর পরিবর্তে সরিষা, ভূট্টা পেয়াজ, মরিচ চাষে উৎসায়িত করা হয়। সরিষা চাষে সরকার থেকে প্রনোদনা হিসেবে কৃষকদের এক কেজি বীজ এবং দশ কেজি সার দেওয়া হয়। বিএডিসি চলতি মৌসুমে হল্যান্ডের শান্তনা এবং কুইন এনি বীজ বিক্রি করে। এ জাতের আলু বিদেশে রপ্তানী যোগ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন