ময়মনসিংহের তারাকান্দায় কৃষক চলতি বোরো মৌসুমে ব্যস্ত সময় পার করছে। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখা গেছে কেউ মাঠে বোরোধানের চারা রোপন করছেন, আবার কেউ কেউ লাগানো বোরোধানের গজিয়ে ওঠা চারার পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠে মাঠে বোরো আবাদের ভরা মৌসুম চলছে। বোর আবাদের এই সময়ে এসে অতিরিক্ত খরচের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। বিশেষ করে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জমিচাষ এবং জলসেচের জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচের মুখে পড়েছেন কৃষক। পাশাপাশি বীজ, সার, শ্রমিকের মজুরি বাবদ গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তারাকান্দায় বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি। সবমিলিয়ে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে শতকরা ২৫ ভাগ বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে প্রান্তিক এসব কৃষককে।
উপজেলার কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর বোরো মৌসুমে পাঁচ চাষে কৃষকের বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১ হাজার ২শ’ টাকা এই মৌসুমে তাদের খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৮শ’ টাকা। সেচ বাবদ খরচ হয়েছিল ১ হাজার ৫শ’ টাকা এবার তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১ হাজার ৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। এদিকে বিঘাপ্রতি চারা রোপনেও খরচ বেড়েছে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা করে।
এ বিষয়ে উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন (৫৫) বলেন, তিনি ১ একর জমি প্রস্তুত করেছেন বোরোধান আবাদের জন্য। প্রতি দশ শতক জমিতে এবার তার অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। জামাল উদ্দিন আরও জানান, প্রতি দশ শতক জমিতে তার খরচ হয়েছে (জমির বর্গা টাকাসহ) ৬ হাজার টাকা। সেই হিসেবে একরে খরচ হবে ৫৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। প্রতি দশ শতকে উচ্চফলনশীল আগাম জাতের ধান হতে পারে ৬ থেকে ৮ মণ। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে নষ্ট হতে পারে আবাদের ধান। এসব শঙ্কায় অনেক শঙ্কিত তিনি। এ সময় তিনি বলেন, আমরা প্রান্তিক বর্গাচাষি। আমাদের নিজেদের এত জমি নাই। যা আছে তাতে চাষ করে সংসার চলেনা। অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করি। অতিরিক্ত খরচের চাপে সংসার চালাতে পারছিনা।
বোর আবাদের বিষয়ে তারাকান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার জেসমিন নাহার বলেন, চলতি মৌসুমে তারাকান্দায় ২১ হাজার ৪শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যথারীতি হাইব্রিড ধানের আবাদ লক্ষমাত্রা ৫ হাজার ৮শ’ হেক্টর। উফসী ধানের আবাদ লক্ষমাত্রা ১৫ হাজার ৮শ’ হেক্টর। এছাড়াও স্থানীয় ধানের আবাদ হবে ৫ হেক্টর জমিতে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে ডিজেলের দাম বেড়েছে। ডিজেলের সাথে বোরো আবাদের নিবিড় সম্পর্ক থাকায় সব কিছুরই দাম বেড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বোরো আবাদের পূর্বেই বীজ এবং সার প্রণোদনা হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলায় পর্যাপ্ত সারের মজুদ রয়েছে। নিবিড় চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষককে কিছুটা খরচ কমিয়ে আনার চেষ্ঠা করতে হবে। গতানুগতিক চাষ পদ্ধতি কমিয়ে নিবিড় চাষের মাধ্যমেই লাভবান হতে পারেন কৃষক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন