বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

বিয়ানীবাজারে পাহাড়-টিলা ও টপসয়েল অবাধে বিক্রি

এম হাসানুল হক উজ্জ্বল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সিলেটের বিয়ানীবাজারে চলছে অবাধে পাহাড়, টিলা ও কৃষি জমির ‘টপসয়েল’ বিক্রির উৎসব। উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন-গ্রামে রয়েছে মাটিকাটার এক্সেভেটর। আর এসব এক্সেভেটর দিয়ে দিন রাত চলছে মাটিকাটা ও বিক্রি। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসান, পুলিশ প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের চোঁখের সামনে এমন কর্মযজ্ঞ চালানো হলেও তাতে নেই কোন বাঁধা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে রমরমা এই বাণিজ্য। আর এতে করে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি জমির মারাত্মক ক্ষতির সাথে এলজিডি ও সওজের সড়কের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিয়ানীবাজারের আলীনগর, চারখাই, শেওলা, দুবাগ, কুড়ারবাজার, বিয়ানীবাজার পৌর এলাকা, মাথিউরা, তিলপারা, লাউতা, মুড়িয়া, মুল্লাপুর ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় চলছে কৃষি জমির টপসয়েল বিক্রি। কৃষি জমিগুলোতে চোঁখ পড়লেই দেখা যায় এক কিংবা একাধিক এক্সেভেটর দিয়ে মাটিকাটা হচ্ছে। আর ট্রাক দিয়ে এসব মাটি নিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকরা। এছাড়াও বিয়ানীবাজার পৌরসভা, মুল্লাপুর, লাউতা ও মুড়িয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি টিলা কাটার দৃশ্য কারো অদেখা নয়।
মাটি ব্যবসায়ীরা বড় বড় টিলা কাটার জন্য রাতের বেলাকে বেছে নিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, দিনে বাহিরের কর্মকর্তাদের অভিযানের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তারা রাতকে নিরাপদ মনে করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দিন-রাত সব সময়ই হাওর কিংবা কৃষি জমিতে মাটি কাটছে এক্সেভেটর। আর এসব মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক-ট্রক্টির বেপরোয়া গতিতে চলাচলের ফলে দুর্ঘটনা ঝুঁকি বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন গ্রামে দুই বা তিন ফসলি জমির টপসয়েল কেটে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বড় বড় ট্রাকে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কিছু মাটি ব্যবসায়ী প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে শুকনো মৌসুম পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন। এছাড়া বাড়ি তৈরিতে মাটি ভরাট প্রয়োজন হলেও অনেকে এসব মাটি ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হন। অল্প সময়েই মাটি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা রোজগার করেন।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, টপসয়েল জমির প্রাণ। জমির ওপরের আট থেকে ১০ ইঞ্চিই হলো টপ সয়েল। আর ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। কৃষকরা জমির টপসয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছেন। মাটি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে তারা জমির উর্বরা শক্তিই বিক্রি করে দিচ্ছেন। জমির এ ক্ষতি ১০ বছরেও পূরণ হবে না।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা-পাহাড় নিধন ও কৃষিজমির টপসয়েল কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মুড়িয়া ইউনিয়নের একজন কৃষক জানান, মূল্যবান জমি থেকে ১৫-২০ ফুট গভীর পর্যন্ত এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা বাধা দিয়েও মাটিখেকো চক্রকে থামাতে পারছি না।
এদিকে এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বড় ধরণের কোন অভিযানের সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে সড়ক থেকে দু’একটি ট্রাক ভূমি কর্মকর্তা আটক করে জরিমানা আদায় করেছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত মাসে ৭টি অভিযান চালানো হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ট্রাক আটক করে জরিমানাও করা হয়েছে। তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন