ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ওষুধ বাণিজ্য। নিয়ম-নীতি মানছেনা প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো, রাঙ্গুনিয়ায় ডাক্তারের চিকিৎসাপত্র ছাড়া ফার্মেসিগুলোতে ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগের বর্ণনা শুনে ইচ্ছেমতো ওষুধ দিচ্ছেন ফার্মেসির মালিক। এসব ওষুধ সেবন করে রোগী উন্নতির চেয়ে অবনতি বেশি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। প্রতিদিন একাধিক রোগী প্রতারনার শিকার হচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে প্যাথলজী, ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসি। কোনো প্রকার সনদ ছাড়া অযোগ্য লোক দিয়ে সেখানে চলছে চিকিৎসাসেবা। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডাক্তার পরিচয়ে রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছেন। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদর ইছাখালী, চন্দ্রঘোনা দোভাষিবাজার, লিচুবাগান, ফেরিঘাট, বনগ্রাম, জিয়ামার্কেট, শান্তি নিকেতন, হোছনাবাদ, মোগলেরহাট, আলমশাহপাড়া, ধামাইরহাট, রাজারহাট, রানীরহাট, ইসলাপুরের গাবুল, পারুয়া হাজানিহাট, শাহাব্দিনগর, লালানগর, চৌমুহনী, মরিয়মনগর, রোয়াজারহাট, গোডাউন, গোচরা, শান্তিরহাট, বেতাগী, পোমরা, সরফভাটা, শিলক, কোদালা, পদুয়া রাজারহাট, নারিশ্চা বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে শতশত ফার্মেসি, প্যাথলজী ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিতে গেলে বেরিয়ে আসে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর ভয়াবহ চিত্র। দোভাষী বাজারে রোগী রেজাউল করিম, সৈয়দ ও সুমন বড়ুয়া জানান, নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি ও ফার্মাসিস্ট প্রশিক্ষণ সনদ ছাড়া, অধিক মুনাফার আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে অবৈধ ফার্মেসি ও রোগ নিরূপন কেন্দ্র। রানীহাটে কৃষক মো. মিজানুর বলেন, পাড়া মহল্লার মুদি ও স্টেশনারি দোকানে পাওয়া যাচ্ছে ব্যথা নাশক ও এন্টিবায়োটিকসহ হরেক রকম ওষুধ। যার সেবনবিধি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিক্রেতাদের কোনো ধারণাই নাই। রোজী আক্তার এক গৃহবধূ বলেন, দোভাষী বাজারে সার্জারি, সেলাই, ইনজেকশন এবং স্যালাইন প্রয়োগ করে থাকেন অধিকাংশ ফার্মেসিতে কর্মরত লোকজন। এসব প্রশিক্ষণ ও সনদবিহীন ফার্মেসির ভুল চিকিৎসায় রোগীরা বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হয়ে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের ভুল চিকিৎসায় প্রাণ হারাচ্ছে শিশুসহ অনেক প্রসূতি নারী। কিছু কিছু দোকানে দেখা যায় হোমিওপ্যাথি, এ্যলোপ্যাথিক বায়ো কেমিক্যালসহ পশুচিকিৎসা পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছেন এসব হাতুড়ে চিকিৎসক। চন্দ্রঘোনা দোভাষীবাজারের ননিতা মেডিকোর মালিক ও জ্যাতি ফার্মেসির দিলিপ দে বলেন, ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি চলছে। সব ফার্মেসিতে ডাক্তারের চেম্বার রাখা সম্ভব নয়। অনেক ফার্মেসিতে ড্রাগ লাইসেন্স নেই, থাকলেও অন্য জনের লাইসেন্স দিয়ে কার্যক্রম চলছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী মেজিস্ট্রেট পৃথক পৃথকভাবে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও অর্থদন্ড করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকি ও অবহেলার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় দিনের পর দিন ব্যাঙের ছাতার মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব ফার্মেসি, প্যাথলজী, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আধুনিক দৃষ্টিনন্দন এসব প্রতিষ্ঠানে রোগীদের পরীক্ষা-নীরিক্ষার নামে হাজার হাজার টাকা লুটে নিলেও উপযুক্ত সেবা দিতে ব্যর্থ এসব নিম্নমানের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, ফার্মেসি ও রোগ নিরূপন কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ ফার্মেসি ও রোগ নিরূপন প্রসঙ্গে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জামশেদুল আলম বলেন, ত্রুটিযুক্ত এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন