শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অস্তিত্ব সঙ্কটে গারো পাহাড়ের নদীগুলো

এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

গরো পাহাড়ের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার এককালের ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা নদীগুলো এখন মরা খাল। দু’পাড়ে জেগে ওঠা চর দখল হয়ে গেছে। গড়ে উঠছে বসতি। তৈরি হয়েছে বাড়িঘর। নদীর দু’পাড়ের অবস্থাই তথৈবচ।
ঝিনাইগাতীর শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী জানান, ১৫-২০ বছর আগেও খরস্রোতা নদীর ঢেউ ভেঙে চলতো বড় বড় নৌকা। নৌপথে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ও বৌ-ঝিরা নাইউর করতো।
জেলে সাজল বলেন, নৌকায় ফিকজালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। মাছ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছি। ব্যবসায়ী সরোয়ারর্দী দুদু মন্ডল বলেন, আগে নৌপথে আসতো ব্যবসায়ীরা বড় হাটবারে। ব্যবসা-শেষে নৌকায় চলে যেতেন। নব্যতা সঙ্কটে এখন সেই সুযোগ নেই। আলহাজ শরীফ উদ্দিন সরকার বলেন, খরস্রোতা নদীগুলো এখন মরা খাল। দেখলাম অথৈই পানিতে টইটুম্বর খরস্রোতা নদীগুলো। সাবেক উপজেলা চয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা বলেন, দেখতে দেখতেই নদী মরা খালে পরিণত হয়ে গেল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক’জন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, নদীর দু’পাড়ের মানুষ জেগে ওঠা চর দখলে নিয়ে বাড়িঘর, বৃক্ষরোপন ও আবাদ করছেন। দু’দিক থেকে দখলে নদীগুলো হয়েছে সরু, মরা খাল। বালু খেকোরা পাম্পে বালু উত্তোলনে বালুসহ পানি উঠায় প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে।
ভ‚মি অফিসের নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মচারিরা বলেন, দখলদারদের উচ্ছেদে উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তারা মালিকানা কাগজ তৈরি করেছেন। এলাকার জেলেরা বলেন, পূর্বে নদীতে পাওয়া যেতো দেশিয় মাছ। এখন গারো পাহাড়ের খরস্রোতা নদীগুলো হয়ে পড়েছে মৎস্যশ‚ন্য। দু’পাড়ের শত শত একর জমি ভরাট ও বেদখলে নদীগুলো রয়েছে অস্তিত্ব সঙ্কটে।
শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের নদীগুলোকে বলা হতো মৎস্য ভান্ডার। মাছের চাহিদার জোগান হতো নদীসহ গারো পাহাড়ের অপরাপর নদী-নালা, খাল-বিল থেকে। কালের বিবর্তনে নদী-নালা, খাল-বিলগুলো ভরাট, জলবায়ু পরিবর্তনে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া ও অপরিকল্পিতভাবে মাছ আহরন ও রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহারে দেশিয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন কমে হাট-বাজারে দেশিয় প্রজাতির মাছ চোখেই পড়েনা। অবশ্য প্রাকৃতিক মাছের বংশবিস্তার বিপর্যয়ের নানা কারণ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তণে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না থাকাও কারণ বলে অভিজ্ঞমহলের ধারনা। আলহাজ রেজায়ুর রহমান মাস্টার বলেন, এক দশক আগেও ভাটির লোক পালতোলা নৌকায় নদী পথে হাট-বাজারও বৌ-ঝি’রা নাইউর করতো। নাবন্যতা সঙ্কটে তা শীর্ণ রূপ নিয়েছে নদীগুলো।
গারো পাহাড় অঞ্চলের প্রবীণ লোকজন বলেন, প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ যেমন ধ্বংস হয়েছে। তেমনি ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয়। প্রতি বছর মে-জুনে প্রাকৃতিকভাবে মাছ ডিম ছাড়ে নদী-নালা, খাল-বিলে। ডিম ফুটতো জুলাই-আগস্টে। পোনা আকারে বড় হতো। জলবায়ু পরিবর্তণের প্রভাবে জুন-জুলায়ে বৃষ্টিই হয় না। উচ্চ তাপমাত্রায় মাছের ডিম শুকিয়ে যায় মাছের পেটেই।
গারো পাহাড়ি নদী থেকে স্যালো মেশিনে বালু উত্তোলনে নদীর পানি দ্রæত শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি শ‚ন্য নদীর তলদেশ চরে পরিণত হচ্ছে। ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা তিন উপজেলার নদীগুলো খরস্রোতা পাহাড়ি নদী। বর্ষায় পাহড়ি ঢলে তলদেশের উচ্চতা বেড়ে পানি ধারণ ক্ষমতা শ‚ন্যের কোটায়। রাত-দিন স্যালো মেশিনে সেচে বালু উত্তোলনে বালুর সাথে পানি উঠায়, নদীগুলো পানি শূন্য মৃত প্রায়। প্রবীণরা বলেন, ১ দশক আগেও নদীর গভীরতা ছিল অনেক।
কৃষক রুস্তম আলী, ছুটি মিয়া ও সিরাজুল ইসলাম জানান, বোরো মৌসুমে নদীর দু’পাড়ে কয়েক হাজার একর জমির ফসল উৎপাদন নদীর পানি সেচে নির্ভরশীল। বালু উত্তোলনে নদী মরা খালে পরিনত হয়ে শুকিয়ে যাওয়ায় ভাটিতে সেচে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। ফলে প্রতি বছর পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে বারো চাষাবাদ।
পানির অভাবে ভাটির ৯/১০ কিলোমিটারে বিপুল জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে। অথচ নদীর নাব্যতা বাড়ানোয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃষ্টি নেই। ফলে অসহায় হয়ে পড়েছে ভাটির কৃষকরা। ব্যহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে নদী খননের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন