বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

লাখো মানুষের দুখের নাম বড়ইকান্দি খেয়াঘাট

খলিলুর রহমান, ফুলপুর (ময়মনসিংহ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

একপাড়ে ঐতিহ্যবাহী শাকুয়াই বাজার। বাজার ঘেঁষে ব্যস্ততম গোয়াতলা-নাগলা ও শাকুয়াই-ধোবাউড়া সড়ক। অপর পাড়ে বড়ইকান্দি বধ্যভূমি, বালিয়া বাজার ও তারাকান্দা হয়ে ময়মনসিংহগামী পাকাসড়ক। মাঝখানে কংশ নদী। প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিদিন অগণিত মানুষকে পাড়ি দিতে হয় এই নদী। বর্ষায় নাব্যতা এলে খরস্রোতা এ নদীর প্রশস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সেই সাথে বেড়ে যায় মানুষের পারাপারের দুর্ভোগ। কারণ একটাই, নদীতে সেতু নেই। শত শত বছর ধরে ফুলপুর, সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের নদী পারাপারে চলমান খেয়াই একমাত্র ভরসা। বর্ষায় ০খরস্রোতা কংশের খেয়াপারের দুর্ভোগের শিকার হয়ে ইতোপূর্বে প্রাণহানি ঘটেছে বলে এলাকাবাসীরা জানান। দেশের আনাচে কানাচে রাস্তা ও সেতু-কালভার্টের উন্নয়ন হলেও এই কংশ নদী পারাপারের কোনো উন্নয়ন নেই এখানে। তাই পুরনো দিনের ঐতিহ্য বহন করে প্রতিদিন নৌকায় চলে যাত্রী পারাপার। ফুলপুর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বড়ইকান্দি গ্রাম ও হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই বাজারের মধ্যবর্তী কংশ নদী পারাপারে এমনি চিত্র নিত্যদিনের। তবে শুকনো মওসুমে নদীর চর জেগে উঠে নদীর প্রশস্ততা হ্রাস পাওয়ায় খেয়াঘাটের ইজারাদার এখানে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা করে যাত্রীদের কাছ থেকে টোল আদায় করছেন। ব্রিজের অভাবে ভারী যানবাহন চলাচল সম্ভব না হওয়ায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন ব্যবসার পণ্য পরিবহন করতে হয়।
হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই বাজার নানা কারণে প্রাচীনকাল থেকে একটি প্রসিদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে গণ্য হয়ে আসছে। শাকুয়াই বাজার থেকে পূর্বে ধোবাউড়া উপজেলার বিখ্যাত গোয়াতলা বাজার ও পশ্চিমে হালুয়াঘাট উপজেলার নাগলা বাজারের সাথে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে রয়েছে সুদীর্ঘ পাকা রাস্তা। এছাড়া রয়েছে শাকুয়াই থেকে উত্তরদিকে সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার মুন্সীরহাটগামী পাকা রাস্তা। বাজারের পূর্বে কংশ নদীর অপর পাড়ে বড়ইকান্দি থেকে পাকা রাস্তা শুরু হয়ে দক্ষিণে প্রসিদ্ধ বালিয়া বাজার ও তারাকান্দা উপজেলা সদর হয়ে হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে। শাকুয়াই বাজারের অদূরে রয়েছে শাকুয়াই বহুমুখী স্কুল এন্ড কলেজ, শাকুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসাসহ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অপর পাড়ে বিলাসি উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাদেশের অন্যতম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আরাবিয়া বালিয়া ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সবদিক থেকে শাকুয়াই বাজার ও বড়ইকান্দি জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। স¦াধীনতার একান্ন বছরেও এখানে কংশ নদীর উপর সেতু নির্মিত না হওয়াটা সবার কাছেই বিস্ময়ের ব্যাপার। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হালুয়াঘাট ও ফুলপুর উপজেলার মধ্যবর্তী হওয়ায় এখানে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে জটিলতা রয়েছে। বালিয়া গ্রামের সিদ্দিকুল হাসান জানান, শুরুত্ব বিবেচনায় এখানে একটি ব্রিজ হওয়ার কথা ৫০ বছর আগেই। বার বার মাটি পরীক্ষাসহ জরিপকাজ করা হলেও দুই উপজেলার টানাপোড়েনে এখানে আজও ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে না। ফলে ফুলপুর, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের ভোগান্তিরও অবসান হচ্ছে না। উন্নয়নের এই যুগেও বড়ইকান্দি খেয়াঘাটটি যেন লক্ষ লক্ষ মানুষের দুঃখ হয়েই রয়ে গেছে।
শাকুয়াই বহুমুখী স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি শিক্ষক আজিজুল ইসলাম তারা জানান, শাকুয়াই ও বড়ইকান্দি ঘাট ব্রিজ নির্মাণের দাবি বহুদিনের। এই ঘাট দিয়ে স্কুল কলেজের শত শত ছাত্রছাত্রী পারাপার করতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনা শিকার হয়।
এ ব্যাপারে ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাসেল জানান, নিশ্চিতভাবে এখানে একটি ব্রিজের প্রয়োজন। স¦াধীনতা পরবর্তী সময় থেকে ফুলপুর, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের দাবি এখানে ব্রিজ নির্মাণ করা। কিন্তু স¦াধীনতার ৫২ বছরেও এখানে ব্রিজ নির্মাণ না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। ব্রিজ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলেও এ যাবৎ কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
হালুয়াঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম জানান, এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ ও ঢাকা এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করলে তারা ব্রিজ করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন