রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ডে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ

বিজয়নগরের কাজী শফিকুল ইসলাম কলেজ

| প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা : সারাদেশে বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ করার দাবিতে আন্দোলন চললেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার কাজী শফিকুল ইসলাম কলেজ এর উল্টো পথে হাঁটছে। কলেজের শিক্ষকরা কলেজটিকে জাতীয়করণ করার জন্য মানববনন্ধন, প্রধানমন্ত্রী বরাবরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করছেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই কলেজটিকে জাতীয়করণ না করার জন্য বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কলেজটিকে সরকারিকরণ না করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করাসহ আদালতেরও শরণাপন্ন হয়েছেন। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। খৈাঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর সকালে কলেজটিকে সরকারিকরণের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর কলেজটিকে জাতীয়করণ করার দাবিতে কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মহসিন ইসলাম, ইসলামী শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন ও সহযোগী অধ্যাপক কামাল উদ্দিনসহ কলেজের ২১ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর প্রদান করেছেন। জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান স্মারকলিপিটি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেয়া শিক্ষকদের স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ভৌত অবকাঠামো, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পড়াশোনার মানের দিক দিয়ে কলেজটি বিজয়নগর উপজেলায় অদ্বিতীয়। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাবোর্ডের মেধা তালিকায় স্থান পায় কলেজটি। ২০০১ সালে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়। ১৯৯৭ সালে বৃক্ষরোপণের জন্য জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ৯৫ ও ৯২ ভাগ। তাই তারা কলেজটিকে সরকারিকরণের দাবি জানান। গত ২০ ডিসেম্বর কলেজটি জাতীয়করণের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কলেজের শিক্ষক মহসীন ইসলাম, মো. গিয়াস উদ্দিন, শামসুদ্দিন মৃধা। এ সময় বক্তারা বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল কলেজটিকে জাতীয়করণ না করতে তদবির শুরু করেছেন। জাতীয়করণের দাবিতে প্রয়োজনে কঠোর কমসূচি দেয়া হবে। এদিকে কলেজটিকে যাতে জাতীয়করণ না করা হয়, সেজন্য কলেজের পক্ষ থেকে গত ৩১ আগস্ট উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। ওই রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে কলেজটিকে জাতীয়করণ না করতে গত ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা সচিবের কাছেও আবেদন করা হয়। এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে কলেজটিকে জাতীয়করণ না করার জন্য আবেদন করা হয়। এসব আবেদনে বলা হয়, কলেজটি জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষার মান কমে যাবে। এছাড়া এলাকার মানুষ চায়না কলেজটি জাতীয়করণ করা হোক। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা কলেজটিকে জাতীয়করণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা বলেন, বিজয়নগর উপজেলায় এ কলেজটির বিকল্প নেই। কলেজটি জাতীয়করণ করা হলে এর শিক্ষার মান আরো বাড়বে বলে তাদের অভিমত। তবে এব্যাপারে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। জানা গেছে, জাতীয়করণের কথা বলতে গিয়ে ইতোমধ্যেই কলেজের তিন শিক্ষক বহিষ্কারের শিকার হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক বলেন, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বছরের পর বছর ধরে পদ আঁকড়ে রেখেছেন। পরিচালনা পর্ষদের বেশিরভাগ সদস্যই তার পরিবারের। প্রতিষ্ঠানটিকে তারা বাণিজ্যিক হিসেবেই দেখছেন। যে কারণে জাতীয়করণে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। কলেজ শিক্ষকরা আরো বলেন, কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষ চান না এটি জাতীয়করণ হোক। এ নিয়ে কথা বললেই তাদের উপর খড়গ নেমে আসে। তারা জানান, জাতীয়করণের কথা বলতে গিয়ে ইতোমধ্যেই কলেজের তিন শিক্ষক বহিষ্কারের শিকার  হয়েছেন। এব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বিজয়নগর উপজেলা বিআরডিবির চেয়ারম্যান দীপক চৌধুরী বাপ্পী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার মানের দিক দিয়ে বিজয়নগরে কাজী শফিকুল ইসলাম কলেজটি এগিয়ে। আমরা চাই সরকার দ্রুত কলেজটিকে জাতীয়করণ করবে। এব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ হাফেজ শফিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের আলোকে কলেজটিকে সরকারি না করতে গত ৩১ আগস্ট উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। তিনি বলেন, কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হোক এটি আমিও চাই। তবে তা করতে হবে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে ম্যানেজ করে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে কাজী শফিকুল ইসলাম কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছেন, কলেজের ভবিষ্যতের বিষয়, ভালো-মন্দের বিষয় তাকে নিয়েই চিন্তা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, কলেজের ৬৬ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ২১ জন শিক্ষক জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তিনি জাতীয়করণের দাবি করায় তিনজন শিক্ষককে বহিষ্কারের কথা অস্বীকার করে বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের কারণেই তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন