পীর ছাহেবের সাথে লক্ষ লক্ষ মুসুল্লীর বুকফাঁটা কান্না আর আহাজারীর মধ্যে দিয়ে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা এবং তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে হতাহতদের জন্য দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই দরবার শরিফের মাহফিল সম্পন্ন হল। গত বুধবার বাদ জোহর আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর ছাহেব চরমোনাই’র উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে ফাল্গুন মাসের এ মাহফিরলর সূচনা হয়। শণিবার বাদ ফজর সমাপনী অধিবেশনে পীর ছাহেবের দিক নির্শনামূলক বক্তব্যের পরে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে দেশের অন্যতম বৃহত আধ্যাত্মিক এ মিলনমেলার।
শণিবার সকালে সমাপনী অধিবেশনের লক্ষ লক্ষ মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে বয়ানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর ছাহেব চরমোনাই বলেন, বাংলাদেশ আজ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সর্বস্তরে ইসলামকে বিজয়ী করতে হবে। আমরা ইসলামকে বিজয়ী করার মাধ্যমে দেশের মানুষের সামনে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য ও মহাত্ব উপস্থাপন করতে চাই।
পীর ছাহেব বলেন, অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক বিবর্তনবাদ সহ অসঙ্গতিতে ভরা পাঠ্য সিলেবাসের মাধ্যমে দেশের আগামী প্রজন্মকে নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে৷ এমন সিলেবাস ৯২ ভাগ মুসলমানদের দেশে চলতে দেয়া যায় না বলেও হুশিয়ারী উচ্চারন করেন তিনি।বিবর্তনবাদ এবং নাস্তিক্যবাদী পাঠ্যপুস্তক বাতিল সহ সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে ২৫ ফেব্রুয়ারী সারাদেশে থানা পযায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করেন পীর ছাহেব চরমোনাই।
সমাপনী অধিবেশনের বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই মাহফিল বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন সহ আখেরী মুনাজাতে অংশ নেয়া প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম এবং গণমাধ্যম কর্মীদের মোবারকবাদ জানান।
মাহফিলের শেষ বয়ানের পরে উপস্থিত কয়েক লাখ মুসুল্লীদের নিয়ে আখেরী মুনাজাতে পীর ছাহেব চরমোনাই ভারত, কাশ্মীর, মিয়ানমার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া সহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের নিরাপত্তা ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের দরবারে হাত তোলেন। বুকফাটা কান্না নিয়ে মুসুল্লীয়ানদের সাথে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতদের জন্যও বিশেষ দোয়া করেন পীর ছাহেব।
চরমোনাই দরবার শরিফের এবারের মাহফিলেও আগত মুসল্লীদের ওজু গোসল সহ চিকিৎসার সাবিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। মাহফিলে আগত মুসুল্লীদের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্বাবধানে একটি অস্থায়ী হাসপাতালে প্রায় ১৭ হাজার মুসল্লীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে।
মাহফিলে আগত মুসল্লীদের মধ্যে বার্ধক্যজনিত কারণ সহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮ জন মৃত্যুবরণ করেন। যাদের মরদেহ গোসল ও কাফন সহ নিজ নিজ বাড়ীতে পৌছে দেয়া হয়েছে চরমোনাই দরবার শরিফের পক্ষ থেকে।
আখেরী মেনাজাত শেষে সড়ক ও নৌ পথে লক্ষ লক্ষ মুসুল্লীবাহী যানবাহনের ভিড়ে দক্ষিণাঞ্চল থেকে সবগুলো জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক সহ জেলা সংযোগ সড়কগুলোতে ব্যাপক যানযটের সৃষ্টি হয়েছে। দুপুর ১২টায় এ রিপোরট লেখার সময় বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা, বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম, বরিশাল-পিরোজপুর-খুলনা, বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা, বরিশাল-বরগুনা, বরিশাল-গোপালগঞ্জ-নড়াইল-যশোর মহাসড়ক সমুহে ব্যাপক যানযট অব্যাহত ছিল। বরিশাল মহানগরীর অভ্যন্তরে জাতয় মহাসড়টিও ব্যাপক যানযটের কবলে। মহানগর ও জেলা ট্রাফিক পুলিশ অত্যন্ত সতরকতার সাথে চেষ্টা করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিলেন না।
বরিশাল নদী বন্দর এলাকা এবং সন্নিহিত নৌপথও বিভিন্ন ধরনের নৌযানের ভিরে ঠাশা ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন