যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) চতুর্থ সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘নতুন পাঠ্যক্রমের ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে। যা নেই তা উপস্থাপন করা হচ্ছে। এডিট করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। নতুন বইগুলো পরীক্ষামূলক সংস্করণ। কিছু সমস্যা আছে, সেটা সংশোধন হচ্ছে, হবে।’ শনিবার দুপুর ১২টায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) চতুর্থ সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের মূল উপাদানগুলো হবে- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার। এছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করব। আমাদের ডেমোগ্রাফিক যে ডিভিডেন্ট রয়েছে, সেটি আর ৯/১০ বছরের রয়েছে। আমাদের সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের তৈরি হতে হবে। আর এটি মোকাবিলার মূল হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বর্তমান শিক্ষাক্রম সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তৈরি হয়েছে।একটি চক্র এই শিক্ষাক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ছাপানো বইয়ে যা নেই, তা উপস্থাপন করা হচ্ছে। এডিট করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তারা শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাইয়ের পদ্ধতি বহাল রাখতে এই কাজ করছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা মগজ ধোলাইয়ের শিকার হবে না। তারা ভাবতে শিখবে, পৃথিবীকে জানবে। তাদের সেই চিন্তা ও মননশীলতার জায়গাটা স্বাভাবিক রাখতে সরকার সবকিছু করবে।’
দীপু মনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেখানে সিটের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করবেন না। সারা পৃথিবীর মতো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিতে ভবিষ্যতে একটি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। ঘন ঘন পরীক্ষা অর্থবহ নয়।’
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আপানদের যাত্রাপথকে অসততা দিয়ে কলুষিত করবেন না। এটি খেয়াল রাখতে হবে। সত্যের পথ একটু কঠিনই হয়। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম সে কখনো করে না বঞ্চনা।’
এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে ১ হাজার ৮৩৪ জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের বাবা-মায়েরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এবারের সমাবর্তনে ২২ জন গ্র্যাজুয়েট চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক, ২৬ জন ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড এবং ৯ জন ডিন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
সমাবর্তন বক্তৃতায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর সম্পাদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হাসিনা খান গ্রাজুয়েটদের উদ্দশ্যে বলেন, জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখা তোমার মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। জীবনে শুধু একটি দিকের বৃদ্ধি অন্য দিকগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, কর্মসংস্থান, ব্যক্তিগত জীবন এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। তিনি বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় বয়সে নবীন হলেও শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখছে। এ বিশ^বিদ্যালয়ের তারুণ্যদীপ্ত শিক্ষকমন্ডলী গবেষণা ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে।
স্বাগত বক্তব্যে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের এ অর্জনে তোমাদের পিতা-মাতা, শিক্ষকম-লীসহ সমগ্র জাতি গর্বিত। সীমাহীন পরিশ্রম ও কর্তব্য নিষ্ঠা তোমাদের এ সাফল্য এনে দিয়েছে। স্মরণ রাখবে, তোমাদের এ অর্জনের নেপথ্যে ছিল এ দেশের সরকার, তোমাদের পরিবার, শিক্ষকম-লী এবং সর্বোপরি এ দেশের জন-সাধারণ, যাদের অর্থে পরিচালিত হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। তোমরা তাদের কাছে চির ঋণী। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমেই কেবল এ ঋণ পরিশোধ সম্ভব। দেশ-বিদেশে তোমরাই এ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করবে। তোমাদের কাজের উপরই এ বিশ^বিদ্যালয়ের সুনাম ও মর্যাদা নির্ভর করবে।’
এ ছাড়া সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন