বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ধূলায় ধূসর গ্রামীণ সড়ক

চরম দুর্ভোগে সাটুরিয়াবাসী

মো. সোহেল রানা খান, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় উপজেলার সাটুরিয়া দরগ্রাম সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার পর বন্ধ থাকায় চরম জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ঠিকাদার সড়কটির কাজ বন্ধ রেখে চলে যাওয়ায় ভাঙাচোরা সড়ক ও ধূলায় চলা দায় এ সড়কে। যথাসময়ে সড়কের কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দিয়েছে সাটুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাটুরিয়া থেকে দরগ্রাম পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সড়কের আরসিসি ও কার্পেটিং কাজের জন্য সড়কটির সংস্করণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। যা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা। মানিকগঞ্জের হোসাইন কনস্ট্রাকশন নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২১-২২ অর্থ বছরে আরসিসি ও কার্পেটিং করতে সড়কটির সংস্করণ কাজ শুরু করে।
ওই সড়কের দু’পাশ চওড়া করা ও কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হওয়ার বাকি রয়েছে মাত্র তিন মাসেরও কম। এর মধ্যে মূল কাজ ধরাই হয়নি। ২০২২ সালের জুলাইয়ে সড়কের পুরোনো কার্পেটিং ওঠানোর পরই থমকে গেছে কাজ। এই ছয় মাস ধরে এলাকার লোকজনের চরম ভোগান্তি নিয়ে কারও ভাবনা চিন্তা নেই। সংশ্নিষ্ট ঠিকাদার ইতোমধ্যে কয়েক অংশ বিল ওঠিয়ে নিয়েছেন। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সব নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন।
সড়কটির ৩টি স্থানে আরসিসি ডালাই এর কাজ করে ও গাছবাড়ি এলাকায় কয়েকশ’ মিটার করা হয়েছে কার্পেটিং এর কাজ। বাকি ৪ কিলোমিটার এলাকায় সড়কের কার্পেটিং ওঠানোর কারণে এখানে ওখানে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। পুরো পথ যেন ধূলার রাজ্য। পাশের কোনো গাছই রেহাই পাচ্ছে না। লাল সুরকির গুঁড়ায় ঢাকা সব পাতা সবুজ বরণ হারিয়েছে। যে কোনো রকমের যানবাহন গেলেই কয়েক মিনিট পর্যন্ত ধূলা উড়তে থাকে। এ সময় নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
সাটুরিয়া উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি সাটুরিয়া ও ঢাকা যাওয়া জন্য দরগ্রাম, তিল্লি, বরাইদ ইউনিয়নের মানুষের ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া জেলার দৌলতপুর, ঘিওর উপজেলা এবং পাশের টাঙ্গাইলের নাগরপুরের লোকজনও এখান দিয়ে যাতায়াত করে। সাটুরিয়া সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, দরগ্রাম সরকারি ভিকু মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ, দরগ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, দরগ্রাম মাদরাসা, সাটুরিয়া সৈয়দ কালু শাহ কলেজ, ইউনাইটেড মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও রফিক রাজু ক্যাডেট স্কুলসহ প্রায় ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন এ সড়ক দিয়েই চলাচল করে। সংস্কার না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের ও এ সড়কে চলাচলকারীদের ধূলায় ডুবে চলাচল করতে হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ রাখায় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের পোশাক ধূলায় নষ্ট হচ্ছে। যানবাহনে চলাচল করাও কঠিন। হেঁটে চলাচল করলেও নাক মুখ দিয়ে ইটের গুঁড়া শরীরে ঢুকছে। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
দরগ্রাম এলাকার বিপ্লব হোসেন বলেন, এক বছর আগে এই সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারের লোকজন কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়ায় আমাদের এই দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। রাস্তার ইটের খোয়ার ধুলোয় জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এ সড়কে চলাচল করলে প্রতিবার জামা কাপড় পরিবর্তন করতে হয়। মুমূর্ষু রোগীকে এ রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে নিতে গেলে ঝাঁকুনিতে ওই রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমাদের এই কষ্ট দেখার যেন কেউ নেই।
স্থানীয় ভ্যানচালক হোসেন আলী বলেন, এই ভাঙাচোরা সড়কে গাড়ি চালাতে যেয়ে গাড়ি বেশি নষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে গাড়ি উল্টিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে, এতে অনেক যাত্রী আহত হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক বৃন্দাবন মণ্ডল কাজ বন্ধের জন্য বরাদ্দের অভাব ও নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করে বলেন, বরাদ্দ পেলেই আবার কাজ শুরু করবেন। আগামী এপ্রিল মাসে কাজের সময়সীমা শেষ হলেও সময় বাড়ানোর আবেদন করবেন।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল করিম সড়কের কাজটি বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, যথাসময়ে সড়কের কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি বিলের মধ্যে ঠিকাদারকে তিনটি বিল দেওয়া হয়েছে। এরপরও কাজ বন্ধ রেখেছেন। এ বিষয়ে কয়েক দফায় তাঁদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন