কম্বোডিয়া থেকে চুরি যাওয়া রাজমুকুটে ব্যবহৃত গহনার বড় ভাণ্ডার মিলেছে লন্ডনে। এসব গহনার কতগুলো সপ্তম শতাব্দীর পুরনো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ গহনা তাঁরা আগে কখনও দেখেননি। এমন জিনিস যে ছিল, তাতে তাঁরা বিস্মিত।
ব্রিটিশ পুরাকীর্তি পাচারকারী ডগলাস ল্যাচফোর্ডের দখলে থাকা চুরি হওয়া গহনাগুলো গত গ্রীষ্মে প্রকাশ্যে আসে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, গহনার সংগ্রহটি গোপনে কম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেনে ফেরত দেওয়া হয়। সেগুলো দেশটির জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শন করা হবে।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের অপেক্ষায় মারা যান ল্যাচফোর্ড। মৃত্যুর পর এসব সংগ্রহ কম্বোডিয়াকে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানত না ঠিক কী হস্তান্তর করা হবে বা কীভাবে করা হবে।
কম্বোডিয়ার তদন্তকারী দলের প্রধান ব্র্যাড গর্ডন গত গ্রীষ্মে লন্ডনে গহনা দেখার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ল্যাচফোর্ড পরিবারের এক প্রতিনিধি তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। সেখানে পার্কিং লটে গাড়ি ছিল, যার ভেতরে চারটি বাক্স ছিল।
ব্র্যাড গর্ডন বলেন, ‘প্রাচীন কম্বোডীয় সভ্যতার মুকুট দেখে আমার কান্না পাচ্ছিল। আমি অবাক হয়েছিলাম। একটি গাড়ির পিছনে চারটি বাক্সে ভরা ছিল এগুলো।’
বিবিসিকে গর্ডন আরও বলেছেন, ‘বাক্সগুলো খোলার পর ৭৭টি সোনার টুকরো এবং মুকুট, বেল্ট এবং কানের দুলসহ রত্নখচিত গহনা পাওয়া গেছে। একটি বড় বাটি পাওয়া যায়, যা ১১ শতকের বলে মনে করা হয়। যদিও এটি এখনও পরীক্ষা করা হয়নি, তবে এটি শক্ত সোনার তৈরি বলে মনে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি আঙ্কোরিয়ান রাজপরিবারের চালের বাটি হিসাবে ব্যবহার হত।’
মুকুটগুলির মধ্যে একটি প্রাক-আঙ্কোরিয়ান যুগের বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটা সপ্তম শতাব্দীর কারিগরদের দ্বারা তৈরি করা হতে পারে। একটি ছোট ভাস্কর্য ফুলসহ অন্যান্য প্রত্নালঙ্কারগুলো রহস্য তৈরি করে। কেন এটি তৈরি করা হয়েছিল বা কীভাবে এটি ব্যবহার করা হয়েছিল তা বিশেষজ্ঞরা ধারণা করতে পারছে না।
কীভাবে এবং কখন গহনা চুরি হয়েছিল এবং কীভাবে লন্ডনে পৌঁছেছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট অ্যাঙ্কোর ওয়াটের দেয়ালে পাথরে খোদাই করা অনেক আইটেম আছে। বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় স্মৃতিস্তম্ভ, হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর প্রতি উৎসর্গ হিসাবে ১১২২ সালে এর নির্মাণ শুরু হয়, যদিও এটি কয়েক দশক পরে একটি বৌদ্ধ মন্দিরে রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে আঙ্কোর ওয়াটে ব্যাপক লুটপাট চলে। ১৯৭০ এর দশকে খেমার রুজ যুগে কম্বোডিয়ার অনেক মন্দির লুট করা হয় এবং কয়েক দশক ধরে দেশটিতে সংঘাত চলছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক সোনেত্রা সেং মন্দিরের খোদাই পরীক্ষা করে বছরের পর বছর ধরে অ্যাঙ্কোরিয়ান গহনা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। অবশেষে তিনি কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়েছেন।
সোনেত্রা সেং বলেন, ‘খোদাইতে যা ছিল তার প্রমাণ অলঙ্কারগুলো। যা গুজব ছিল তা সত্যিই সত্য হয়েছে। কম্বোডিয়া অতীতে সত্যিই সমৃদ্ধ ছিল। এখনও আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না, এটি বিদেশে পাওয়া একটি সংগ্রহ।’
লন্ডনের সোয়াস ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় শিল্পের অধ্যাপক মিসেস থম্পসন বলেন, ‘নতুন আবিষ্কৃত গহনা আসলে কোথা থেকে এসেছে তা জানতে বিশেষজ্ঞদের অনেক সময় লাগবে। কারণ বইটিতে অনেক অর্ধসত্য রয়েছে।’
কম্বোডিরার কর্তৃপক্ষের ধারণা, আরও অ্যাঙ্কোরিয়ান গহনার নিখোঁজ আছে। কম্বোডিয়ানদের কাছে ল্যাচফোর্ডের ইমেল ও চিঠিপত্র থেকে প্রমাণ মিলে যে তিনি ২০১৯ সালের শেষের দিকে উত্তর লন্ডনের একটি গুদাম থেকে সংগ্রহটি গোপনে বিক্রির চেষ্টা করেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ল্যাচফোর্ডের যুক্তরাজ্যের সহযোগীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কিনা তা তারা লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের জানতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা এবিষয়ে মন্তব্য করতে চায়নি।
বিবিসির প্রতিবেদক লুটেরাদের সঙ্গে দেখা করতে গত বছর কম্বোডিয়ায় গিয়েছি ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের’ সঙ্গে কথা বলেছে। এসব মন্দির থেকে চুরি করে ল্যাচফোর্ডের কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছে।
তবে রাজমুকুটে গহনার সংগ্রহ ফিরে পাওয়ায় অবশ্যই খুশী হবেন দেশটির স্বৈরাচারী নেতা হুন সেন। কারণ, এটাকে সফলতা হিসেবে দেখিয়ে আসছে জুলাইয়ের নির্বাচনে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ফায়দা লুটার চেষ্টা করতে পারবেন। লুট হওয়া সব জিনিস কম্বোডীয়রা ফেরত চায়, তাঁরা এটা নিয়ে রাজনীতি চায় না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন