অর্থমন্ত্রী থাকার সময় কর বিভাগকে জরিমানা দিয়েছেন, এ অভিযোগে ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন দল কনসারভেটিব পার্টির চেয়ারম্যান নাদিম জাহাওয়িকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে বরখাস্ত করে লেখা এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী সুনাক লিখেছেন, ‘এটা পরিষ্কার যে মন্ত্রিত্বের নীতিমালায় গুরুতর লঙ্ঘন ঘটেছে।’ এই আইন অনুসারেই সরকারের মন্ত্রীরা তাদের দায়িত্ব পালন করেন।
নাদিম জাহাওয়ির বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী থাকাকালে সময় মতো কর পরিশোধ না করায় তাকে জরিমানা গুনতে হয়েছে- এই অভিযোগ ওঠার পর এনিয়ে ব্রিটেনের রাজনীতিতে তুমুল বিতর্কের পাশাপাশি তার পদত্যাগের জন্যেও চাপ বাড়ছিল। এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এক তদন্তের পর প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক রবিবার সকালে তাকে বরখাস্ত করলেন। প্রধানমন্ত্রীর একজন নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টার তদন্ত রিপোর্টে সাবেক অর্থমন্ত্রী যেভাবে করের বিষয়টি সামাল দিয়েছেন তার সমালোচনা করা হয়েছে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে নাদিম জাহাওয়ি এবিষয়ে স্বচ্ছ থাকতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর পরই প্রধানমন্ত্রী সুনাক তাকে সরকারের দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করেন। তবে চিঠিতে তিনি তার সরকারে জাহাওয়ির ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। জবাবে জাহাওয়ি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, সরকারের ভেতরে তার অর্জন নিয়ে তিনি গর্বিত। বিশেষ করে তিনি মহামারির সময় লোকজনকে টিকা দেয়া এবং রানি এলিজাবেথের শেষকৃত্য আয়োজনের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি কোনো ক্ষমা প্রার্থনা করেন নি এবং করের বিষয়েও কিছু উল্লেখ করেন নি।
নাদিম জাহাওয়ি সরকারের টিকা বিষয়ক এবং শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এর আগে জাহাওয়ি নিশ্চিত করেছেন যে কর বিভাগের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য তিনি জরিমানা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, কর ও শুল্ক বিভাগ এইচএমআরসিও স্বীকার করেছে যে এই ত্রুটি “উদ্দেশ্যমূলক ছিল না” এবং “অসতর্কতার কারণে” এরকম হয়েছে। বিবিসি জানতে পেরেছে জরিমানাসহ অপরিশোধিত এই করের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ লাখ পাউন্ড। গত বছরের অগাস্ট মাসে নাদিম জাহাওয়ি এইচএমআরসির কাছে জরিমানা শোধ করেছিলেন। এসময় তিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন এবং কর ব্যবস্থা ছিলো তারই দায়িত্বে।
নাদিম জাহাওয়ি ব্রিটেনের অত্যন্ত বিত্তশালী একজন ব্যবসায়ী। ইউগভ নামের একটি জরিপ কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি, যা ব্যবসায়িকভাবে দারুণ সফল একটি প্রতিষ্ঠান। তার জন্ম ইরাকে, ১৯৬৭ সালে। তার পরিবার ইরাকে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল। জাহাওয়ির দাদা ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর ছিলেন। দেশটির ব্যাঙ্ক নোটে তার স্বাক্ষর রয়েছে।
১৯৭০-এর দশকে সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতায় আসার পর এই পরিবারটি হুমকির মুখে পড়ে। জাহাওয়ির ব্যবসায়ী পিতা এক পর্যায়ে তার পরিবার নিয়ে ব্রিটেনে পালিয়ে আসেন। ৫৫ বছর বয়সী জাহাওয়ি ২০১০ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। এর পরে তার খুব দ্রুত উত্থান ঘটতে থাকে। এক সময় তিনি নিজেই বলেছিলেন, “এই পৃথিবীতে আমিই সম্ভবত সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তি।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের পর লিজ স্ট্রাসের স্বল্পকালীন সরকারের সময় তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তদন্তে জানা গেছে জাহাওয়ি যখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন তখন তিনি কর বিভাগের সঙ্গে তার কোনো বিরোধের কথা উল্লেখ করেন নি, যে কারণে তিনি স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ স্ট্রাস এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকারে তাকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সময়েও তিনি কর বিভাগকে দেয়া জরিমানার কথা গোপন করেছেন বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবিসির রাজনৈতিক সংবাদদাতা নিক আর্ডলি বলছেন, নাদিম জাহাওয়ির কর সংক্রান্ত এই ঘটনা গত দশদিন ধরে সরকারে মাথাব্যথার কারণ ছিল। “এখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলছেন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।” কিন্তু জাহাওয়ির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে এতো দেরি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সুনাক নিজেও প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। বিরোধী দলগুলোও প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। তারা বলছে, নাদিম জাহাওয়িকে বরখাস্ত করতে তিনি অনেক সময় নিয়েছেন। বিরোধী লেবার পার্টি বলছে, বর্তমান সরকার “অনৈতিকতার মধ্যে আটকা পড়ে গেছে।” সূত্র: বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন