নরেন্দ্র মোদীর উপর বিতর্কিত ডকুমেন্টারি এবং ভারতে তাদের অফিসে পরিচালিত আয়কর সমীক্ষা নিয়ে ক্ষোভের পর থেকে যুক্তরাজ্যের ঋষি সুনাক সরকার প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বিবিসিকে সরাসির সমর্থন জানিয়েছে। একজন প্রতিনিধি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বারবার বলেছেন যে, তারা নয়াদিল্লির সঙ্গে এ সমস্যা গুরুত্ব নিয়ে বিবেচনা করছে।
‘আমরা বিবিসির পক্ষে দাঁড়াই। আমরা বিবিসিকে অর্থায়ন করি। আমরা মনে করি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই বিবিসির সেই সম্পাদকীয় স্বাধীনতা থাকুক,’ পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড রুটলি মঙ্গলবার ‘ভারতে বিবিসি অফিসে অভিযান’ শীর্ষক একটি হাউস অফ কমন্স বিতর্কে বলেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের ‘ভারত সরকারের সাথে বিস্তৃত যোগাযোগ রয়েছে। এ বিষয়গুলো একেবারে সেই যোগাযোগের অংশ হিসাবে উত্থাপিত হয়েছে’।
বিবিসি বিরুদ্ধে ভারতে মোদী সরকারের প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের পরে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমপি ও বিরোধীরা সরকারের নীরবতার নিন্দা করার পরে এবং ‘অভিযানের’ বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য সরকারের বিরোধিতা জানাতে কী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং বিবিসির ‘সুরক্ষা’র জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করার পরে এ প্রতিক্রিয়া এসেছে।
‘বিবিসি আমাদের সমালোচনা করে, তারা ক্ষমতাসীন লেবার পার্টিরও সমালোচনা করে, এবং তাদের সেই স্বাধীনতা রয়েছে যা আমরা বিশ্বাস করি যে, গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ রুটলি বলেছিলেন, ‘সেই স্বাধীনতা চাবিকাঠি, এবং আমরা ভারত সরকার সহ সারা বিশ্বে আমাদের বন্ধুদের সাথে এর গুরুত্বের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হতে চাই।’
ডিইউপি সাংসদ জিম শ্যানন দ্বারা উত্থাপিত একটি জরুরী প্রশ্নের কারণে বিতর্কটি এসেছিল যেখানে যুক্তরাজ্য সরকারকে ভারতে বিবিসি অফিসের সমীক্ষা এবং কর ফাঁকির অভিযোগের বিষয়ে একটি বিবৃতি দিতে বলেছিল। ‘কোন সরকারী বিবৃতি জারি করা হয়নি, এবং এটি সরকারকে প্রেসের স্বাধীনতার উপর এমন নির্মম আক্রমণের নিন্দা করতে উৎসাহিত করার জন্য একটি জরুরী প্রশ্ন তুলেছে,’ শ্যানন বলেছিলেন, ‘সরকার এ বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করতে চায় কিনা?’
লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি জেমি স্টোন সরকারকে ‘ভারতের উপর চাপ দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য গণতন্ত্রের সাথে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান, কারণ এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য আচরণ’। লেবার সাংসদ হিলারি বেন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘যখন আমরা পড়ি যে বিজেপির একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ সংস্থা হিসাবে বর্ণনা করেছেন, তখন কি বিবিসি এবং এর সততার পক্ষে দাঁড়ানো সরকারের দায়িত্ব নয়?’
রুটলি বলেছেন, ‘মিডিয়ার স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য উপাদান। আমরা বিশ্বাস করি যে বিবিসি এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাজ্য ভারতে বিবিসির চারটি ভাষা পরিষেবার জন্য অর্থায়ন করে: গুজরাটি, মারাঠি, পাঞ্জাবি এবং তেলেগু। এটা চলতেই থাকবে, কারণ এটা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের কণ্ঠস্বর — এবং বিবিসি-এর মাধ্যমে একটা স্বাধীন কন্ঠ — সারা বিশ্বে শোনা যায়। আমরা বিশ্বাস করি যে বিবিসি-এর পক্ষে সেই স্বাধীন কণ্ঠস্বর এবং এটি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারে এমন আশ্বাস থাকা অত্যাবশ্যক। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সরকারকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়।’ সূত্র: টিওআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন