নেত্রকোনা জেলার সুমেশ্বরী নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় সীমান্তের ১১৫৬/৮-এস পিলারটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে দুর্গাপুরের ভবানীপুর এলাকার প্রায় ৫শ’ একর জমি মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি দুর্গাপুর উপজেলা। ছোট বড় অংখ্য গারো পাহাড় আর পাহাড়ের কোল ঘেষে কলকল শব্দে বয়ে চলা স্বচ্চ নীলাভ জলরাশি এবং বাঙালিদের পাশাপাশি গারো হাজং অধ্যূষিত এই জনপদ ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও নেত্রকোনা জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি। প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট, সেতু কালভার্ট, পর্যটকদের থাকা খাওয়ার জন্য অবকাঠামো গড়ে না উঠায় এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে না। সচেতন এলাকাবাসী, পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট, সেতু কালভার্ট নির্মাণ, পর্যটকদের থাকা খাওয়া ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে বার বার জোর দাবি জানিয়ে আসলেও তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। এর মধ্যে সোমেশ^রী নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুর রহমান হৃদয় জানায়, দুর্গাপুর থেকে ফারাংপাড়া হয়ে ভবানীপুর পর্যন্ত একটি মাটির রাস্তা ছিল। সোমেশ^রী নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় ভবানীপুর এলাকার অনেক বাড়ি ঘরসহ শত শত মিটার জায়গা নদী গর্ভে বিলীন এবং পাহাড়ি খালের একটি সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। আব্দুস সাত্তারের অভিযোগ, রাস্তা ও সেতু না থাকায় তারা তাদের উৎপাদিত পন্য সহজে বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থী মো. জুয়েল মিয়া বলেন, রাস্তা ও সেতু না থাকায় বর্ষাকালে তারা ঠিক মতো স্কুলে যেতে পারে না।
উপজাতি স্বপন হাজং বলেন, আমরা খুবই নাজুক অবস্থায় আছি। কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে কিংবা গর্ভবতী মহিলাদের সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম জানান, সোমেশ^রী নদী ভাঙনের কারণে ১১৫৬ নং সীমান্ত পিলারটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভবানীপুর এলাকার বিজিবি’র একটি বিওপি রয়েছে। রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় এ অঞ্চলের লোকজন ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি জোয়ানদেরকে ভারতের সীমানা ঘেষে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল ও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। পিলারটি নদীগর্ভে বিলীন হলে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী নদীর মধ্যবর্তী স্থানকে দু’দেশের সীমানা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে ভবানীপুর এলাকার প্রায় ৫শ’ একর জমি মূল ভূখন্ড হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী বর্ষা আসার আগেই অবিলম্বে নদী শাসনের মাধ্যমে স্থায়ী নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে প্রায় ১৫শ’ মিটার রাস্তা নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আমরা গত ৬ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে প্রায় ১৫শ’ মিটার রাস্তা নির্মাণের সম্ভাবতা যাচাই করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা, নকশা সার্কেল-১ এর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে আহবায়ক করে ৮ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারিগরি কমিটি সম্ভাবতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রনয়ন করবেন। উক্ত প্রকল্পে টাকা ছাড় পেলেই নদী শাসনের মাধ্যমে স্থায়ী নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও রাস্তার নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, কারিগরি কমিটি প্রতিবেদন দাখিলের পর যতদ্রুত সম্ভব প্রকল্প প্রনয়ন ও স্থায়ী নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন