শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলা ফিচার

প্রাপ্তি যৎসামান্য

প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৫ এএম, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

জাহেদ খোকন
বিদায় গৌহাটি-শিলং, দেখা হবে নেপালের কাঠমান্ডুতে। ২০১৯ সালে এখানেই পর্দা উঠবে ১৩তম সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের। গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসের ভাঙলো মিলন মেলা। ৫ ফেব্রুয়ারি গৌহাটির সরুসজল ক্রীড়া কমপ্লেক্সস্থ ইন্দিরাগান্ধী অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়ামে বাইচুং বুটিয়া যে মশাল প্রজ্ব¡লন করেছিলন, তা নিভে গেলো। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিদায় ঘন্টা বাজলো গেমসের ১২তম আসরের। এদিন গৌহাটির সরুসজলস্থ ইন্দিরাগান্ধী স্টেডিয়ামে ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টা ৪০ মিনিটে গেমসের যবনিকা টানেন ভারতের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী এবং এবারের এসএ গেমসের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান সর্বানন্দ সেনওয়াল।
গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে বাংলাদেশের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির কোন মিলই ছিলো না। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে ১৮টি স্বর্ণ, ২৩ রুপা ও ৫৬টি ব্রোঞ্জপদক জিতে তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের এবার করুণ দশা ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এই ক্রীড়াযজ্ঞে এবার লাল-সবুজরা মাত্র চার স্বর্ণ, ১৫ রুপা আর ৫৬টি ব্রোঞ্জপদক জিতে আসর শেষ করলো। যা তাদেরকে পদক তালিকার পঞ্চমস্থানে নামিয়ে এনেছে।
এই আসরে সাত স্বর্ণপদক জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সাফল্যের যাত্রা শুরু হয়েছিলো মহিলা ভারোত্তোলক মোল্লা সাবিরার ব্রোঞ্জপদক জয় দিয়েই। গত ৫ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনী দিন তিনি দেশকে প্রথম পদকটি উপহার দিয়েছিলেন। আর গেমসের ১১তম দিনে গত সোমবার দেশের হয়ে শেষ পদকটি জিতলেন জুডোকা হাবিবুর রহমান। সেটিও ব্রোঞ্জপদক। তিনি ৮১ কেজি ওজন শ্রেণীতে এই পদক জয় করেন। মাঝে ৭ ফেব্রুয়ারি মহিলা ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সিমান্ত জিতলেন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম স্বর্ণপদক। ওই দিনই দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সোনা জিতলেন কৃতি সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা। পরের দিন তিনি আরেকটি স্বর্ণপদক জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করলেন। পরপর দু’দিন বাংলাদেশের দুই মেয়ে তিন স্বর্ণপদক জিতলেও পুরুষরা ছিলেন চরম ব্যর্থ। আশার কথা এই যে এবারের এসএ গেমসে বাংলাদেশের পুরুষ ক্রীড়াবিদদের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল ছিলেন মহিলারাই। তাদের জয়জয়কারই ছিলো গৌহাটি ও শিলংয়ে। চারটি স্বর্ণের মধ্যে লাল-সবুজের মহিলা সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা দু’টি ও ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সিমান্ত একটি জিতে দেশের মান রাখেন। কুস্তির মেয়ে রিনা আক্তার, ভারোত্তোলক ফুলপতি চাকমা,  শুটিংয়ের দলগত ইভেন্টে আরদিনা-আরমিনরা, মহিলা খো খো দল, হ্যান্ডবল ও কাবাডির মেয়েরা রুপা জিতে দেশের মান বাড়ায়। গৌহাটি ও শিলংকে করে তুলে যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। এসএ গেমসে বাংলাদেশের পুরুষ ক্রীড়াবিদরা যখন ধারাবাহিক ব্যর্থতার মধ্যে ছিলো ঠিক তখনি জ্বলে ওঠেন শুটার শাকিল আহমেদ। তিনি ১০ ফেব্রুয়ারি ৫০ মিটার পিস্তল ইভেন্টে সোনা জিতে মান রাখেন লাল-সবুজের পুরুষ ক্রীড়াবিদদের। ১২ ফেব্রুয়ারি অঘটনের জন্ম দেন গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে রৌপ্যপদক জয়ী আবদুল্লাহেল বাকী। একই ইভেন্টে গৌহাটিতে তিনি পঞ্চম হয়েছেন। তবে এই ইভেন্টে উত্থান ঘটেছে তরুণ শুটার শাকিল আহমেদের। স্বর্ণ জয়ের কাছাকাছি গিয়েও তিনি রুপা পেয়েছেন। ব্যস ওই পর্যন্তই। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে নিজেদের মাটিতে দাপট দেখালেও এবার ভারতের মাটিতে তারা চরম ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। গেমসের ২৩ ডিসিপ্লিনের মধ্যে ২২টিতে অংশ নিয়ে আগের আসরের চেয়ে পদক তালিকায় দুইধাপ নিচে নেমে এসেছে তারা। গেমসে ব্যর্থতার মধ্যে ছিল কিছু অঘটনও। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাতীয় মহিলা হ্যান্ডবল দলের নিয়মিত গোলরক্ষক শিলা রায়ের মায়ের ইহলোক ত্যাগ করা। আর শুটিংয়ে মহিলাদের ব্যক্তিগত ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে আরদিনা ফেরদৌসের ইলেক্ট্রোনিক ট্রিগারে ফায়ার না হওয়া।
দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত ক্রীড়া আসর। বাংলাদেশের খুব কাছেই ভারতের দুই রাজ্য আসাম ও মেঘালয়ে বসেছিলো এবারের এসএ গেমস। যে কারণে বাংলাদেশ ক্রীড়া দলের বহরটি ছিলো বেশ লম্বা। ক্রীড়াবিদ, কোচ, ম্যানেজার, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) ডেলিগেট, বিভিন্ন ফেডারেশনের অতিরিক্ত কর্মকর্তারা ছাড়াও পর্যবেক্ষকদের নামে প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ জনের বিশাল এক বহর গৌহাটি ও শিলংয়ে এসেছিলো। কিন্তু এই বহর কী নিয়ে ফিরে গেলো দেশে? এক কথায় বলা যায় হতাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। এসএ গেমসে সব সময়ই ভারতেই সেরা। গেমসের অধিকাংশ ডিসিপ্লিনেই তাদের আধিপত্য থাকে। এর আগে ১১টি আসরে ভারতীয়রা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে। এবার একটু বেশিই আধিপত্য ছিলো তাদের। গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে ১৮৮টি স্বর্ণ, ৯০টি রৌপ্য ও ৩০টি ব্রোঞ্জপদক জয় করে ভারতই রইলো সবার আগে। কিন্তু হতাশা ছড়ালো লাল-সবুজরা। গেমসে সবচেয়ে বেশি চমক দেখিয়েছেন শ্রীলংকার ক্রীড়াবিদরা। এতদিন যারা টেবিলে তিনের নিচে থাকতেন, এবার তারাই উঠে এসেছেন পদক তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। অবাক হলেও সত্যি বেশিরভাগ ডিসিপ্লিনে লংকান পুরুষ ও মহিলাদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে জিততে হয়েছে স্বাগতিক ভারতকে। যার ফল হাতে নাতেই পেয়েছে শ্রীলংকা। ২৫ স্বর্ণ, ৬৩ রুপা ও ৯৮টি ব্রোঞ্জপদক জিতে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে চমক দেখিয়েছে তারা। এদিকে ১৬ ফেব্রুয়ারি গেমসের সমাপনী ঘোষণা করেন ভারতের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী এবং এবারের এসএ গেমসের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান সর্বানন্দ সেনওয়াল। তার ঘোষণার পর পরই আলোর মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ে স্টেডিয়ামের চারিদিকে। কিছুক্ষণ পরই নিভে যায় গেমসের মশাল। এরপর শুরু হয় আতশবাজি। আতশবাজির পর পতাকা হস্তান্তর হয়। সর্বানন্দ সানওয়াল এসএ গেমসের পতাকা ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম রামচন্দনের হাতে তুলে দেন। তিনি সেই পতাকা হস্তান্তর করেন পরবর্তী আয়োজক দেশ নেপাল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জীবন রাম শ্রেষ্ঠার কাছে। নেপালী অলিম্পিক সংস্থার প্রধান নিজ দেশের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী সত্য নারায়ণ ম-লে হাতে গেমসের পতাকা তুলে দিলে শেয় পতাকা হস্তান্তর পর্ব।
গেমসের শেষ দিকে এসে বাজালো আগামী আসরের স্বাগতিক নেপালের জাতীয় সংগীত। জাতীয় সংগীতের পর নেপালের অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জীবন রাম বলেন, ‘আবার গেমসের স্বাগতিক হতে পেরে আমরা বেশ গর্বিত। ১৯৮৪ ও ’৯৯ সালে আমরা এসএ গেমসের সফল আয়োজন করেছি। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের ১৩তম আসরটিকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় গেমস হিসেবে উপহার দেবার প্রত্যাশা করছি।’ এরপর ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে নেপালের দর্শনীয় স্থান দেখানো হয়। ২০১৯ সালে অনেক দূরে হলেও গেমসের স্বাগতিক হওয়ায় নেপালের সংগীত বাজানো হয় এবং তাদের স্থানীয় নৃত্যও প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে লেজার শো’র মাধ্যমে শেষ হয় এবারের এসএ গেমস। সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এমপিসহ আট দেশের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রীগণ উপস্থিত ছিলেন। সমাপনী অনুষ্ঠানের শেষে আট দেশের ক্রীড়াবিদ, কোচ ও ম্যানেজাররা মার্চ পাস্টে অংশ নেন। বাংলাদেশের পক্ষে সমাপনী মার্চ পাস্টে লাল সবুজের পতাকা বহন করেন জাতীয় কাবাডি দলের খেলোয়াড় ফাতেমা আক্তার পলি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন