সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিভাজন গভীরতর হচ্ছে

রাশিয়াকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৩ এএম

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু পর থেকে অনেকে প্রশ্ন করতে শুরু করেছে যে, কেন রশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করার প্রয়োজন মনে করেছিলেন? ইউক্রেনে এত অস্ত্র পাঠিয়ে ন্যাটো কি ভয়ঙ্কর যুদ্ধের ইন্ধন যোগাচ্ছিল? যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে আশা করতে পারে যে, বিশ্বের বাকি দেশগুলি এর নীতি সমর্থন করবে, যখন এটিও অন্যায়ভাবে অন্য দেশগুলিতে আক্রমণ করেছিল? দক্ষিণ আফ্রিকার রেডিও ৭০২-এর জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী সঞ্চালক ক্লেমেন্ট মায়াথেলা বলেন, ‹আমেরিকা যখন ইরাকে গিয়েছিল, আমেরিকা যখন লিবিয়ায় গিয়েছিল, তখন তাদের নিজস্ব যুক্তি ছিল, যা আমরা বিশ্বাস করিনি এবং এখন তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকে দাড় করানোর চেষ্টা করছে। এটাও অগ্রহণযোগ্য।’
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা জোট রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে, যেটিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি বৈশ্বিক জোট হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই সংঘাত দ্রæত পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থার উপর মার্কিন প্রভাবের সীমাবদ্ধতা এবং একটি গভীর বৈশ্বিক বিভাজনকে উন্মোচিত করেছে। এটি প্রমাণ হয়ে গেছে যে, পুতিনকে বিশ^ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এবং শুধুমাত্র চীন ও ইরানই নয়, ভারতও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার করেছে। দেশটি গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার সাথে তার বাণিজ্য ৪শ’ শতাংশ বেড়েছে। গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে দক্ষিণ আফ্রিকা সহ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের নয়টি দেশে স্বাগত জানানো হয়েছে। দক্ণিষ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যান্ডর তাদের বৈঠককে চমৎকার বলে প্রশংসা করেছেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়াকে বন্ধু বলে ঘোষণা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র আশা করেছিল যে, যুদ্ধের এক বছর পুর্তির মুহুর্তে তারা সংহতির একটি শক্তিশালী সংকেত প্রেরণ করবে, যা রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দাকে পুনরুজ্জীবিত করবে। কিন্তু, সেই আশায় ছাই ঢেলে শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরে রাশিয়া ও চীনের সাথে সামরিক মহড়ায় নিযুক্ত হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া ও ভারতের লোকেদের সাথে কথোপকথন একটি গভীর দ্বিধাবিভক্ত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়। তারা মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ, দেশটির ঔদ্ধত্য এবং পশ্চিমের বিরুদ্ধে বর্তমান এবং ঐতিহাসিক অভিযোগের তুলনায় রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ ভুল, কিনা এই প্রশ্নের জবাবে ফিলিস্তিনি অঞ্চল, ইথিওপিয়া এবং কঙ্গোর মতো বিশ্বের অন্যান্য অংশে সংঘাত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা তুলে ধরে। কলকাতার কেরানি ভাস্কর দত্ত বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো ভÐ। এই লোকেরা সমগ্র বিশ্বকে উপনিবেশ বানিয়েছে। রাশিয়া যা করেছে তা ক্ষমা করা যায় না, তবে একই সাথে আপনি তাদের সম্প‚র্ণভাবে দোষারোপ করতে পারবেন না।’

যদিও, মার্কিন কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে, জাতিসংঘে ১শ’ ৯৩ টি দেশ রাশিয়ার নিন্দা করার পক্ষে ভোট দিয়েছে, কিন্তু আদতে মাত্র ৩৩টি দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং একই সংখ্যক দেশ ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পাঠাচ্ছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের একটি জরিপ গত বছর অনুমান করেছে যে, বিশ্বের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সেসব দেশে বাস করে, যারা রাশিয়ার নিন্দা করা থেকে বিরত রয়েছে। আফ্রিকায় গণতন্ত্রের প্রচারণাকারী জোহানেসবার্গ ভিত্তিক ডেমোক্রেসি ওয়ার্কস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান উইলিয়াম গুমেদে বলেন, ‹এটি স্বাধীনতা ও স্বৈরাচারের মধ্যে লড়াই নয়, যেমনটা বাইডেন প্রায়শই দেখিয়ে থাকেন। এই বিদ্বেষ হল, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অসন্তোষ ঘটার ফলাফল, যা বিশে^র দক্ষিনাঞ্চলের সমস্যাগুলি মোকাবেলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। করোনা ভাইরাস মহামারীতে যখন পশ্চিমা দেশগুলি অন্যান্য দেশগুলির বিরুদ্ধে অবরোধ এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল এবং আফ্রিকার প্রতি পেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্পষ্ট তাচ্ছিল্য, এই বিদ্বেষকে আরও বাড়িয়ে তোলে।’

পশ্চিমারা যখনই তাদের আধিপত্যের দায়িত্ব থেকে পিছু হটেছে, রাশিয়া ও চীন উভয়ই কথিত পশ্চিমা আধিপত্যের বিকল্প উপস্থাপন করে শ‚ন্যস্থান পূরণ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা হল হৃদয় ও যুক্তির এই সংগ্রামের ম‚ল রণক্ষেত্র। এর পাশাপাশি রয়েছে এশিয়া এবং খানিকাংশে লাতিন আমেরিকা, যাদের ভাগ্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভ‚গোল দ্বারা ঘনিষ্ঠভাবে আবদ্ধ। মধ্যপ্রাচ্য এমন একটি অঞ্চল যেখানে রাশিয়া বন্ধুত্ব ও প্রভাব অর্জনে সফল হয়েছে। রাশিয়ার সাথে তার সম্পর্কের ঝুঁকি নিতে অস্বীকার কওে ভারত সামরিক সরবরাহের জন্য দেশটির উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে। এবং ছাড়ে রাশিয়ান তেল কেনার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতিকে রোধ করার সুযোগ সহ তার নিজস্ব স্বার্থের জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভারতের ভ‚-রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›দ্বী চীনের সাথে তার সীমান্তে হাজার হাজার চীনা সৈন্য রয়েছে এবং সেকারণে, ভারত রাশিয়ার সাথে বিচ্ছেদ ঘটানো বা তার অস্ত্র সরবরাহে কোনো বিপত্তির ঝুঁকি নিচ্ছে না।

প্রাক্তন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব কানওয়াল সিবাল সার্বিয়ায় ন্যাটোর বোমা হামলা, স্নায়ুযুদ্ধের সময় একনায়কতন্ত্রের প্রতি মার্কিন সমর্থন এবং ইরাক যুদ্ধকে তিনি উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন কওে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র একই নীতি লঙ্ঘন করছে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা প্রচেষ্টা সত্তে¡ও বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি এবং রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য সৃষ্ট খাদ্য সংকটের জন্য বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পশ্চিমকে দায়ী করে। বাকি বিশ্ব সত্যিকার অর্থে এটিকে ইউরোপীয় যুদ্ধ হিসেবে দেখে। তারা কোনও বৈশ্বিক সংঘাত বা পশ্চিমাদের দ্বারা যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা দেখে না।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Tarik Link ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:১৯ এএম says : 0
মোদিজি চাইলে নিমিষেই সমাধান করতে পারে
Total Reply(0)
Syed Abdullah Zahid ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:২১ এএম says : 0
যুদ্ধে রাশিয়া জিতলে বিশ্বে আমেরিকার একক আধিপত্যের অবসান হবে।
Total Reply(0)
Jainal Miazi ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:২১ এএম says : 0
ইসরায়েল মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশ গুলির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি,আমেরিকা তার মিত্র।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:২২ এএম says : 1
উকেরেন রাশিয়া দখল করলে পৃথিবি শান্তি প্রতিষ্টিত হবে এবং ইউরোপ নিরাপদ থাকবে।
Total Reply(0)
Md Jahangir Alam ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:২৩ এএম says : 0
আমার মনে হয় চীন,রাশিয়া, ইরান এই তিন শক্তি আমেরিকা, ন্যাটো,ইইউ - এর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার শখ মিটিয়ে দিবে। আর এর পরে শুরু হতে পারে ইজরায়েলের পালা।
Total Reply(0)
shiblee ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:২৪ পিএম says : 0
আমেরিকা নিপাত যাক। মুসলিমরা মুক্তি পাক।
Total Reply(0)
মো: মুনির হোসেন ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৯ এএম says : 0
এই যুদ্ধে রাশিয়া শুধুমাত্র তাদের মাতৃভূমি রক্ষার জন্য অংশ গ্রহণ করেছেন যা পশ্চিমা বিশ্ব চাপিয়ে দিয়েছে। একটি দেশের টেরিটোরিয়াল ইনটিগ্রিটি রক্ষা করা ও তার নিরাপত্তারক্ষা করা পবিত্র দায়িত্ব ।আর সেটাই রাশিয়া করে যাচ্ছে ।রাশিয়ার নাকের ডগায় এসে তার নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পশ্চিমা দেশ মরিয়া । আর এ কারনে রাশিয়ার এই যুদ্ধ হলো সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত ।আর আমেরিকা ইতিপূর্বে বিশ্বকে অস্থিতিশীল করতে ইরাক লিবিয়া ও আফগানিস্তানে গণহত্যা চালিয়েছে যা যুদ্ধাপরাধের সামিল। আর ইউক্রেনেও তারা একই নীতি গ্রহণ করেছেন যা কোনদিন বাস্তবায়ন হবেনা। এই যুদ্ধে রাশিয়াই জয়লাভ করবে এবং প্রিয় নেতা পুতিনই বিজয়ের মুকুট পরিধান করবেন ।
Total Reply(0)
মো: মুনির হোসেন ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১০:৩০ এএম says : 0
এই যুদ্ধে রাশিয়া শুধুমাত্র তাদের মাতৃভূমি রক্ষার জন্য অংশ গ্রহণ করেছেন যা পশ্চিমা বিশ্ব চাপিয়ে দিয়েছে। একটি দেশের টেরিটোরিয়াল ইনটিগ্রিটি রক্ষা করা ও তার নিরাপত্তারক্ষা করা পবিত্র দায়িত্ব ।আর সেটাই রাশিয়া করে যাচ্ছে ।রাশিয়ার নাকের ডগায় এসে তার নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পশ্চিমা দেশ মরিয়া । আর এ কারনে রাশিয়ার এই যুদ্ধ হলো সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত ।আর আমেরিকা ইতিপূর্বে বিশ্বকে অস্থিতিশীল করতে ইরাক লিবিয়া ও আফগানিস্তানে গণহত্যা চালিয়েছে যা যুদ্ধাপরাধের সামিল। আর ইউক্রেনেও তারা একই নীতি গ্রহণ করেছেন যা কোনদিন বাস্তবায়ন হবেনা। এই যুদ্ধে রাশিয়াই জয়লাভ করবে এবং প্রিয় নেতা পুতিনই বিজয়ের মুকুট পরিধান করবেন ।
Total Reply(0)
মো: মুনির হোসেন ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১০:৩০ এএম says : 0
এই যুদ্ধে রাশিয়া শুধুমাত্র তাদের মাতৃভূমি রক্ষার জন্য অংশ গ্রহণ করেছেন যা পশ্চিমা বিশ্ব চাপিয়ে দিয়েছে। একটি দেশের টেরিটোরিয়াল ইনটিগ্রিটি রক্ষা করা ও তার নিরাপত্তারক্ষা করা পবিত্র দায়িত্ব ।আর সেটাই রাশিয়া করে যাচ্ছে ।রাশিয়ার নাকের ডগায় এসে তার নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পশ্চিমা দেশ মরিয়া । আর এ কারনে রাশিয়ার এই যুদ্ধ হলো সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত ।আর আমেরিকা ইতিপূর্বে বিশ্বকে অস্থিতিশীল করতে ইরাক লিবিয়া ও আফগানিস্তানে গণহত্যা চালিয়েছে যা যুদ্ধাপরাধের সামিল। আর ইউক্রেনেও তারা একই নীতি গ্রহণ করেছেন যা কোনদিন বাস্তবায়ন হবেনা। এই যুদ্ধে রাশিয়াই জয়লাভ করবে এবং প্রিয় নেতা পুতিনই বিজয়ের মুকুট পরিধান করবেন ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন