মো. গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে : বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার নাগর নদী থেকে স্থানীয় এক শ্রেণীর অর্থলিপ্সু বালু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। ফলে এলাকার নদীসংলগ্ন বাঁধ, রাস্তাঘাট, ফসলের জমিসহ কয়েকটি গ্রাম মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। দুপচাঁচিয়া ও কাহালু উপজেলার সীমানার বুক চিরে বয়ে গেছে নাগর নদ। নদের দুধার দিয়ে এলাকা রক্ষার বাঁধ, নির্মাণ ও বিভিন্নস্থানে ফসলের জমিসহ বহু গ্রাম গড়ে উঠেছে। এই গ্রামগুলোতে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ হয়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তা, নদের উপর নির্মিত হয়েছে ব্রিজ। দীর্ঘ দিন যাবত উপজেলা সদরসহ তালোড়ার বেশ কিছু বালু ব্যবসায়ী এই নাগর নদ থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করছে। এলাকার প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে এই সব বালু ব্যবসায়ীরা তালোড়ার পলিপাড়া, গন্ডির্শ্বর, কাশিমালা, গয়াবান্ধা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার নাগর নদের বিভিন্ন স্থানসহ দুপচাঁচিয়ার ধাপ, নিমাইকোলা, যুগিপোতা নামক স্থান থেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তারা নদের বিভিন্ন স্থানে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে বোরিং করে এই বালু উত্তোলন করছে। অনেকে নদের দু’ধারে নামমাত্র সামান্য জায়গা ক্রয় করে তাতে প্রথমে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করে। একইভাবে অনেক স্থানে নদের মাঝে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকার ব্যাণিজ্য করে আসছে। এইসব বালু বহনের জন্য নদী রক্ষার বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আবার ওই সব ব্যবসায়ীরা উত্তোলনকৃত বালু নদের বাঁধের উপর রাখাসহ পাশের রাস্তাঘাটের উপর পাহাড় করে রাখছে। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচলসহ এলাকাবাসীর চলাচলে বিঘœ ঘটছে। সরজমিনে উক্ত নাগর নদসংলগ্ন তালোড়ার পলিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে গ্রামগুলোর অবস্থা করুণ। গ্রামগুলোর চলাচলের রাস্তার উপর বিভিন্নস্থানে পাহাড় করে বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বালু উত্তোলনের ফলে নদের দু’ধারে গ্রামগুলোর অনেক বাড়ি ঘরসহ ফসলের জমিতে ফাটল ধরেছে। নদের উপর নির্মিত গন্ডির্শ্বরের ব্রিজসহ নদ রক্ষা বাধ হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে নদের বাঁধ রক্ষাসহ রাস্তাঘাট নদটি বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বালু উত্তোলনকারীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, এ সংক্রান্ত পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাদের বালু উত্তোলন বন্ধ করতে কেউ পারেনি। তবে প্রশাসনে ম্যানেজের ক্ষেত্রে তাদের অর্থ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসনের লোকজন কখনও এলাকায় ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালাতে এলে প্রশাসনে থাকা তাদের পক্ষের লোকজন মোবাইলে বিষয়টি তাদের অবগত করে। তারা দ্রুত মেশিনসহ বালু উত্তোলনের সরঞ্জামাদি সরিয়ে ফেলে। তাই এ বিষয়ে পত্রিকায় লিখে কোন লাভ হবে না বলেও জানায়। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে, পলিপাড়া গ্রামের অনেকেই জানান, ওই সব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে অভিয়োগ করেও কোন লাভ হয় নাই। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে অজ্ঞাত খুঁটির জোরে তারা অবৈধভাবে নদী থেকে এই বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় একাধিকবার আলোচনা হলেও সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহেদ পারভেজ এসব অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাধমে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিলেও তা কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। অদ্যবধি তা আলোর মুখ দেখেনি। এলাকাবাসীর আশংকা নাগর নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে নদসংলগ্ন বাঁধ, রাস্তা, ফসলি জমি, ঘরবাড়িসহ অনেক গ্রাম ভূমিধ্বসের মতো ঘটনা ঘটবে। তারা নদী থেকে স্থায়ীভাবে অবৈধ এই বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন