রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বিজয়মেলায় অবৈধ লটারি, মদ ও জুয়ার আসর, নীরব প্রশাসন

| প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলায় অবৈধ লটারি চলে আসলেও এবার নতুন মাত্রায় শুরু হয় জুয়া ও মদের আসরও। বিজয়মেলার নামে প্রায় ডিসেম্বর মাসজুড়ে স্থানীয় এক কুখ্যাত মাদক সম্রাটের পরিচালনায় এসব অবৈধ কর্মকা- চলে আসলেও উপজেলা ও থানা প্রশাসন মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা যায়, সারা দেশের ন্যায় বোয়ালখালীতে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আসার সাথে সাথে শুরু হয় মেলার প্রস্তুতি। এরই ধারাবাহিতকতায় ১ম দফায় মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মলীগের উদ্যোগে উপজেলার কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শুরু হয় ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেলা। ২য় দফায় প্রশাসনের নাকের ডগায় বোয়ালখালী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে সদর গোমদন্ডী পাইলট উচ্ছ বিদ্যালয়ের মাঠে চলে ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং এরপর ৩য় দফায় উপজেলার কধুরখীল-চরণদ্বীপ চৌধুরীহাট এলাকায় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের উদ্যোগে বিজয়মেলা ২৪ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় মাসব্যাপী মেলা চলে। ১ম দফার মেলায় দুই একদিন সহনীয় থাকলেও এরপর থেকে শুরু হয় এ বিজয়মেলাকে ঘিরে জুয়া, অবৈধ লটারি, মদের ব্যবসা ও চাঁদাবাজির ঘটনা। আর এসব অবৈধ আসর পরিচালনার দায়িত্বে কাজ করছে বোয়ালখালীর মাদক সম্রাট নামে খ্যাত পশ্চিম গোমদন্ডীর হোসেন ও পূর্ব গোমদন্ডীর জাগির। এলাকাবাসী জানান, মাদক সম্রাট হোসেনের কাছ থেকে উপজেলা ও থানা প্রশাসনসহ বিভিন্ন নেতারা মাসিক হারে মোটা অংকের টাকা নেয়ার কারণে বাধা দিতে পারছে না কোন কাজে। তবে এ মেলাকে ঘিরে উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে থানা প্রশাসন প্রায় কোটি টাকা চাদাঁবাজি করেছে বলে জুয়াড়িদের পক্ষে একটি সূত্র জানায়। ফলে প্রশাসনের সামনে এসব অবৈধ মদ, জুয়া ও লটারির ব্যবসা চালিয়ে গেলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে জানান তারা। ফলে মাদক সম্রাটের নেতৃত্বে জুয়াড়িরা ও মদ ব্যবসায়ীরা দিনকে দিন বেপরোয় হয়ে উঠছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হলেও তাদের অত্যাচারের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না বলে জানান বোয়ালখালীর অসহায় সাধারণ মানুষ। সব মিলিয়ে বোয়ালখালীতে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্ন বিদ্ধই হয়ে গেলো মুক্তিযুদ্ধের এ বিজয়মেলা। জানা যায়, বিজয় মেলাকে ঘিরে প্রতিদিনের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে ৩ লাখ লাখ টাকা, পুলিশ প্রশাসনের জন্য ৫ লক্ষাধিক টাকা ও রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ৫ লক্ষাধিক টাকা এবং মেলা আয়োজকদের জন্য ২ লক্ষাধিক টাকায় ম্যানেজ করে ওপেন সিকরেট চলছে এসব অনৈতিক কর্মকা-। মেলায় আগত অনেকে বলেন, এক ধরনের পুলিশে সতর্ক পাহারায় এসব কাজ চলার কারণে এবং প্রশাসন নীরব থাকায় বাড়ছে অবৈধ খেলার আইটেম, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, ধ্বংস হচ্ছে এখানকার স্কুল পড়–য়া সহ শত শত যুবসমাজ। চিন্তায় পড়েছে অভিভাবকমহল। বোয়ালখালীর বিভিন্ন জায়গায় চলা এ বিজয় মেলার অবস্থা দেখে এলাকার সাধারণ মানুষ বলতে শুরু করেছে বিজয় মেলা মানে কি জুয়া ও অবৈধ লটারির ব্যবসা। তাহলে! বোয়ালখালীর অবস্থা এমন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, লক্ষ শহীদের বিনিময়ে যে বিজয় পেয়েছি সেটাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। আর ডিসেম্বর মাস মানে বাঙালি জাতির জন্য নির্দ্বিধায় ঈদের দিন/মাস বলা যায়। তার মানে এ নয় যে, বিজয়মেলার নামে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে ইনকামের জন্য জুয়া খেলা, অবৈধ লটারি বা মদের ব্যবসা করা। সেটাতো জেনে শুনে মুক্তিযোদ্ধের বিরোধিতা করারই নামান্তর। শুধু তাই নয় যারা এগুলোর আয়োজক তারা মূলত সরকারি দলের ছত্র ছাঁয়ায় থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য জামাত-শিবির, আল-বদর, আল শাম্স ও পাকিস্তানের দালাল রাজাকারের পুষ্য পেতœী। প্রশাসনের ঊধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন এসব বন্ধ করা। আর স্থানীয় প্রশাসন উপড়ি নিয়ে এ অবৈধ কাজকে সহযোগিতাকারীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া সময়ের দাবী। এ ব্যাপারে নিবাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কমৃকর্তার মোবাইলে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন