শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : বর্তমান সরকার যেখানে শিক্ষা খাতকে সর্বত্র অগ্রাধিকার দিয়ে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার মান্নোয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে। সেখানে অবহেলিত চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চের অভাবে শিক্ষা গ্রহণের সুষ্ঠু পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ফুলবাড়ি উপজেলার ধরলা নদীর তীরবর্তী চর-বড়লই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দু’শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী। আর এসব দেখেও না দেখার ভান করছে খোদ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। চর-বড়লই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবন থাকলেও শ্রেণী কক্ষে চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চ না থাকায় মেঝেতে বসেই পাঠদান করতে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীর। সরেজমিনে দেখা যায়, চর-বড়লই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি একতলা বিশিষ্ট পাকা ভবন। এই বিদ্যালয়ে ১৭১ জন শিক্ষার্থী ও ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। চারটি শ্রেণীকক্ষের মধ্যে একটি শিক্ষকদের অফিস কক্ষ। পুরাতন ভবনে অফিস কক্ষসহ তিনটি শ্রেণী কক্ষে কোন রকমে ছেঁড়া চট বিছিয়ে শক্ত মেঝেতে কষ্ট করে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনায় ব্যস্ত। বর্ষাকালে বিদ্যালটিতে বন্যার পানি উঠে চারপাশ ডুবে যায়। ফলে সে সময় পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাশিদুল ইসলাম, জান্নাতী আক্তার ও খুশি আক্তার জানান, প্রায় ৪ বছর আগে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। এরপর থেকেই শ্রেণীকক্ষে ছেঁড়া চট বিছিয়ে মেঝেতে বসে পড়াশুনা করছি। এখন আমরা যারা ৫ম শ্রেণীতে পড়ি তাদের ভাগ্যে আর হয়তো বা বেঞ্চ জুটবে না। কারণ ৪ বছরেও যা জোটেনি আর সেখানে এক বছরে এটা ভাগ্যের ব্যাপার। অভিভাবক আতিয়ার রহমান ও আতাউর রহমান বলেন, চরাঞ্চলে কোন স্কুল না থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে এই স্কুলে আমাদের ছেলে মেয়েদের ভর্তি করেছি। ছেলে মেয়েরা বার বার বলছে আমাদের স্কুলে বসার বেঞ্চ নাই, আমরা মটিতে বসে ক্লাস করি, খুবই অসুবিধা হয়, তাই আমরা এই স্কুলে পড়বো না। ছেলে মেয়েদের ভবিষৎ চিন্তা করে তাদের বুঝিয়ে স্কুলে পাঠাতে হয়। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক কল্পনা রানী রায় জানান, আমি ২০০৩ সালে যোগদান করেছি। বিদ্যালয়টি ১৯৬৭ সালে সৃষ্টি হয়েছে আমি যতদূর জানি তখন থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্যালয়টির কোন প্রকার উন্নয়ন হয়নি। নামমাত্র পাকা ভবন, পাকা ভবনে যে ভালো কিছু ফার্নিচার চেয়ার-টেবিল ব্রেঞ্চ থাকা দরকার সেটা এ বিদ্যালয়ের ভাগ্যে নাই। স্যারেরা মাঝে মধ্যে বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসলে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় বাস্তবায়ন আর হয় না। চর-বড়লই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আজিজার রহমান বলেন, আমি বিদ্যালয়ে নতুন সভাপতি হয়েছি তারপরও শিক্ষা অফিসের স্যারের সাথে মৌখিকভাবে কথা বলেছি, আমার স্কুলে চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চ নাই ছাত্রছাত্রীরা কষ্ট করে পড়াশুনা করছে। কিন্তু কোন প্রকার সুফল পাইনি তাই আমি নিজেই শিক্ষা অফিসে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করবো। এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রাশিদুল হক ম-ল মেঝেতে বসে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার কথাটি স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ও অভিভাবকরাসহ সকলেই বিষয়টি জানিয়েছেন, বরাদ্দ না থাকায় আমরা কিছুই করতে পারিনি তবে সামনে বরাদ্দ আসলে দ্রুত গতিতে ভালো চেয়ার-টেবিল ও ব্রেঞ্চ দেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন