টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : শীতের শুরুতেই সব প্রস্তুতি নিয়ে ব্যবসা পেতে বসেছে উত্তরের মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন শহর-গ্রামের মোড়ে মোড়ে বা জনসমাগমস্থলে চলছে পিঠা বিক্রি ও খাবার ধুম। এ ব্যবসায় খুব বেশি পুঁজি লাগে না। জ্বালানি হিসেবে খড়ি ও কিছু গুড়, আটা, নারিকেল কিনেই শুরু করা যায় এ ব্যবসা। তবে গ্রাহকদের জন্য কেউ কেউ বসার ব্যবস্থাও করে। এ ব্যবসা থেকে তারা বছরে একটা ভালো আয় করে বলে জানায়। শ্রমিক প্রধান ও অভাবী এলাকায় পিঠার দোকান বেশি লক্ষ্যে করা যায়। উত্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় ইতিমধ্যে জমজমাটভাবে শুরু হয়েছে ওই পিঠা ব্যবসা। গ্রামের হাট-বাজারগুলোতেও বসছে পিঠা ব্যবসায়ীরা। শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া মাত্রই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহারি পিঠার পসরা সাজিয়ে বিভিন্ন স্থানে বসেছে। ওদের ব্যবসা গোটা দিন চলে না, কাকডাকা সকাল থেকে শুরু করে রোদ ওঠা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা থেকে চলে বেশ রাত পর্যন্ত। তবে কখনও দিনভর কুয়াশা থাকলে এবং সূর্য দেখা না গেলে সেদিন চলে গোটা দিনই। খবু সকালে এবং রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দোকানে ক্রমে ভিড় জমতে থাকে। প্রায় সব শ্রেণীর মানুষকেই পিঠা খেতে দেখা যায় দোকানগুলোতে। কোথাও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবার কোথাও বসে, আবার কেউ কেউ কিনে নিয়ে বন্ধুদের আড্ডায় বা সপরিবারের খাবার জন্য ঘরে। তবে এসব পিঠা শ্রমিক শ্রেণীর লোকদের কাছে খুবই প্রিয়। তাদের সারা দিনের ঘাম ঝরা পরিশ্রমের পর সন্ধ্যায় পিঠার দোকানে উনুনের পাশে বসে আনন্দের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পিঠা খেতে দেখা যায়। সব ধরনের পিঠা তৈরি না করলেও ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, তেল পিঠা ও গুলগুলি জাতীয় পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে থাকে। ওইসব পিঠার একেকটির দাম নেওয়া হয় প্রকারভেদে তিন টাকা থেকে পাঁচ টাকা। সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের মেঘাই নতুন বাজারে পিঠা ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া ও শিমুলদাড়ই বাজারে আব্দুল কালাম জানান, প্রতি বছর শীত এলেই তারা পিঠার ব্যবসা করে থাকেন। শীত ঘনিয়ে এলে পিঠা ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়ে থাকে। সব শ্রেণীর মানুষ এসব পিঠা কিনে খায়। বসে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকায় সেখানে বসেই পিঠা খায়। এতে তার প্রতিদিন তিন থেকে চারশ’ টাকা লাভ হয় বলে জানান। এ পিঠার আরোক ব্যবসায়ী হচ্ছে বগুড়ার শেরপুর ধুনটমোড়ের হালিমা খাতুন ও হাসনা হেনা বেগম মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ী। অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাকে সংসার চালাতে হতো এ সময়। এরপর স্বামীর বেয়াড়াপনা তাকে আরও অসহায় করে তুলেছিল। নানা কারণে তাকে করতে হতো এক-আধবেলা উপোস। কিন্তু পিঠার এ মৌসুমি ব্যবসা তার সুদিন এনে দিয়েছে বলে জানায়। কয়েক বছর আগে থেকে এ ব্যবসা করে আসছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন