বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঊর্ধ্বমুখে ছুটছে পণ্যমূল্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

গোশত-মাছ ছুঁতে পারছে না সাধারণ মানুষ
তিন সপ্তাহ পর শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। এর আগেই ঊর্ধ্বমূখে ছুটছে বাজারে পণ্যমূল্য। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাজারে পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি থামার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এরমধ্যে ভালো খাবার তো এখন নাগালের বাইরে। অবস্থা এমন যে, মাছ-গোশত ছুঁয়ে দেখতে পারছেন না মধ্য ও নিম্নবিত্তরা। এসবের বাইরে সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। আর চিনি, আটা, ময়দা বাড়তি দামে আটকে রয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে বেড়েছে ডাল ও ছোলার দাম। চিনির শুল্ক কমানোর প্রভাব বাজারে পড়েনি।
মাসখানেক ধরে বাজারে মুরগি, গরু, খাসিসহ সব ধরনের গোশতের দাম চড়ে আছে। দেড় মাস আগেও বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। সেই দাম এখন বেড়ে হয়েছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। হঠাৎ ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অনেকে মুরগির চেয়ে সস্তা দামের মাছের প্রতি ঝুঁকেছিলেন। তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ বাজারের সস্তা মাছ হিসেবে পরিচিত তেলাপিয়া ও পাঙ্গাসের দামও চড়েছে নতুন করে। গতকাল শুক্রবার যাত্রাবাড়ি আড়ৎসহ ঢাকার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছের দাম এখন প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এ দাম ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের রুইয়ের দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ মাছের দামও এক সপ্তাহে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া পাবদা, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছের যে দাম, তা নিম্নবিত্ত তো বটেই, নিম্নমধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামও কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।
মধ্যবাড্ডা বাজারে গিয়ে দেখা গেল, প্রতি কেজি গরুর গোশত হাড়সহ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। খাসির গোশত দাম প্রতিকেজি ১১শ’ টাকা। আর বকরির মাংস ৯০০ টাকা। টানা তিন সপ্তাহ ধরে অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার উত্তাপ এখন ছড়িয়েছে মাছের বাজারেও। প্রকারভেদে সাধারণ চাষের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি পদের (উন্মুক্ত ঢোবা-নালা) মাছগুলোর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে মাছ কিনতে এসে মধ্যবাড্ডার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফজলুল হকে বলেন, আমাদের মতো হিসেব করে চলা মানুষ আর গরুর গোশত খেতে পারবে না। কম দামে ব্রয়লারও এখন কেনা যায় না। মাছের দামও বেড়েছে। আমরা এখন কী খাবো? ইচ্ছা থাকলেও মাছ-গোশত সন্তানের মুখে তুলে দিতে পারছি না। হিসেবের বাইরে গিয়ে কিনলে, অন্য খরচে টান পড়ছে। আমার জীবনে সব পণ্যের দাম একসঙ্গে এভাবে বেড়ে যাওয়া কখনো দেখিনি।
মধ্যবাড্ডা বাজারের গোশত বিক্রেতা সাদিকুল ইসলাম বলেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ছাগলের গোশত দাম ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বেড়েছে। মানুষ গোশত কিনছে কম। বিশেষ করে খাসির মাংসের ক্রেতা একদমই নেই। গরুর গোশত বিক্রেতা হারুন রশীদ বলেন, গত মাসে গরুর গোশত ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এখন ৫০ টাকা বাড়তি। সপ্তাহখানেক আগেও ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে বিক্রি করা গেছে। এখন যাচ্ছে না।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙ্গাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙ্গাস বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। যা আগে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় কেনা যেত।
বাড়তি দামের কারণে আমিষজাতীয় খাবার বাদ দিয়ে যারা সবজির প্রতি ঝুঁকছেন, তাদের জন্যও কোনো সুসংবাদ নেই বাজারে। শীতের সবজির সরবরাহ কমছে। এতে করে বেশ কিছু সবজির দাম বাড়ছে। করলা, পটোল, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, ধুন্দুল ও ঝিঙে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দামে। মোহাম্মদপুর কৃষি বাজার ও টাউন হল বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা ও শিম ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। যাত্রাবাড়ি পাইকারি আড়তেও প্রতিটি সবজির দাম বেড়ে গেছে। একজন পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী থেকে সবজি ঢাকায় আনতে ট্রাক ভাড়ার সঙ্গে চাঁদা গুনতে হয় বেশি। ফলে পরিবহণ খরচ বেশি হওয়ায় সবজির দাম বেশি। যাত্রাবাড়ি পাইকারি বাজারে শীতের সবজির মধ্যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২৫ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতারা জানান, বছরের এ সময়ে বিভিন্ন সবজির যে দাম থাকে, এবার বেশি। তবে কাঁচা মরিচের ঝাল গত সপ্তাহের চেয়ে সামান্য কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সবজির মধ্যে বর্তমানে বাজারে টমেটো, শসা ও গাজরের দামই তুলনামূলক কম। প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম কম থাকলেও কমেনি আদা-রসুনের দাম। প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৪০ থেকে ২৮০ টাকা ও রসুন ১৬০ থেকে ২২০ টাকা দরে।
মাছ গোশত ও সবজির বাড়তি দামের মতোই মুদি বাজারে তেল, চিনি, আটা, ময়দা, গুঁড়া দুধসহ অন্যান্য বেশকিছু পণ্য বাড়তি দামে আটকে রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে ডাল ও ছোলার দাম। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ছিল। একইভাবে প্রতি কেজি ১০ টাকা বেড়ে বুটের ডাল ৯৫ থেকে ১০০ এবং মাসকলাইয়ের ডাল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনিতে সরকার শুল্ক তুলে নেয়ার পরও বাজারে চিনির দাম কমেনি। আগের দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজার আগে থেকেই চড়ে রয়েছে। বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি মোটা চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৬০ টাকার আশপাশে বিক্রি হয়। মিনিকেট ও নাজিরশাইল নামে বিক্রি হওয়া সরু চালের কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা। প্যাকেটজাত আটার কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। নতুন করে আর দাম বাড়েনি সয়াবিন তেলের দাম। কারণ, এ পণ্যের দাম সরকারই বেঁধে দেয়। তাই বাজারে সয়াবিন দামের খুব বেশি হের-ফের হওয়ার সুযোগ কম। তা সত্তে¡ও বাজারে সংকট থাকায় চিনি সরকার বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। আর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৯০ টাকার আশপাশে।
যাত্রাবাড়ি বাজারের বেশ কয়েকজন ক্রেতা পণ্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি দেখে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রমজানের আগেই প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। মাছ-গোশত মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। কয়েকদিন পর পবিত্র রমজান মাস শুরু হলে এই পণ্যমূল্য আকাশের সীমানার কোথায় গিয়ে ঠেকে কে জানে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মাসুম ৪ মার্চ, ২০২৩, ১১:৩২ এএম says : 0
দেশের এতো উন্নতি তোমাদের চোখে পড়ে না!!! আছো বাজার নিয়ে? মানুষ না খেয়ে তো আর নাই। দাম একটু বাড়লে কি হয়? রিপোর্টার নিশ্চিত ... চেতনা বিরোধী বিএনপি জামাত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন