শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বিপাকে অর্ধশতাধিক খেয়াঘাটের মাঝি

হরিরামপুর পয়েন্টে পদ্মায় নাব্য সঙ্কট নদীর তীর ঘেঁষে ভারি নৌযান চলাচলে নদীভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী

জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

বিপাকে পরেছেন অর্ধশতাধিক খেয়াঘাটের মাঝি। নাব্যতা সঙ্কটে নদীর বুকে চর জেগে ওঠায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা পয়েন্টে পদ্মার মাঝিরা আজ বেকার। এ অঞ্চলের নৌরুট দিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে হরিরামপুর ও পাটুরিয়াঘাট হয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে কয়লা, ডিজেল, রাসায়নিক সারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী জাহাজ, স্টিমার, বাল্কহেডসহ নানান ধরনের ভারি নৌযান চলাচল করছে অনেকটাই নদীর তীর ঘেঁষে। এতে নৌযানের ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী। এছাড়াও উপজেলা সদর থেকে আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ এই তিনটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নদী পারাপারে ইঞ্জিন চালিত অর্ধশতাধিক নৌকা যাতায়াত করে। নাব্যতা সঙ্কটে মাঝিদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ এই তিনটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস। দুর্গম চরাঞ্চলে বসবাসকারীদের উপজেলা সদরে আসা যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ইঞ্জিন চালিত খেয়া নৌকা। এ চরাঞ্চলে রয়েছে দু’টি মাধ্যমিক ও ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষকরা প্রতিদিন নদী পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। নাব্যতা সঙ্কটে কৃষকেরা কৃষিপণ্য উপজেলা সদরের হাটবাজারে আনতে পারে না। ফলে চরাঞ্চলের কৃষিপণ্য চলে যায় ফরিদপুর জেলার মমিনখা ও টেপাখোলার হাটে।
জানা যায়, প্রতিদিন উপজেলার প্রাণকেন্দ্র আন্ধারমানিক চৌকিঘাটা হতে লেছড়াগঞ্জ হরিণাঘাটে ১২টি, ধূলশুড়ার রাজখাড়া লক্ষ্মীকুল ঘাট থেকে আজিমনগর ৬টি এবং গোপীনাথপুরের বাহাদুরঘাট থেকে লেছড়াগঞ্জের হরিহরদিয়া ঘাটে ৪/৫টি ট্রলারে খেয়াপারাপার করা হয়। তিনটি ঘাটে প্রায় অর্ধশতাধিক মাঝি খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিন তিনটি ঘাট থেকে গড়ে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ চরাঞ্চলে যাতায়াত করেন। প্রতি বছর এই খেয়া ঘাট থেকে ইজারার মাধ্যেম সরকার কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব পায়। ঘাটের একাধিক মাঝি জানায়, পদ্মায় চর পরার কারণে উপজেলা সদরের আন্ধারমানিক চৌকিঘাটা থেকে লেছড়াগঞ্জের হরিণাঘাটে যেতে বর্তমান সময় লাগে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট। প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে দোহারের বাহ্রা এলাকা হয়ে ধূলশুড়ার রাজখাড়া লক্ষীকুল হতে আজিমনগর যেতে হয়। গোপীনাথপুরের বাহাদুরপুর থেকে লেছড়াগঞ্জের হরিহরদিয়া ঘাটে যেতে সময় লাগে প্রায় ৫৫ মিনিট। এতে দেখা যায়, সময় ও তেল খরচের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ। ফলে নাব্যতা সঙ্কটে নাজেহাল খেয়া ঘাটের মাঝিরা।
স্থানীয়রা বলেন, বর্ষার পানি চলে যেতেই উপজেলার আন্ধারমানিক ঘাট হতে ধূলশুড়া পর্যন্ত নদীর তীরবর্তীর প্রায় এক কিলোমিটার দূরে প্রায় দশ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য চর জেগে ওঠেছে। এছাড়াও রয়েছে নদীর মাঝে রয়েছে অসংখ্য ডুবো চর। ফলে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে খেয়া পারাপার সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বড় বড় জাহাজ, স্টিমারসহ পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করে নদী তীরবর্তী এলাকা ঘেঁষে চলাচলের ফলে বিভিন্ন স্থানে নতুন করে নদী ভাঙনও দেখা দেয়। আন্ধারমানিক খেয়াঘাটের হাশেম মাঝি জানান, ‘বর্ষার পানি কমতে শুরু হলেই নদীর বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অনেক চর জেগে উঠে। এতে চরাঞ্চলে যাতায়াতে আমাদের সমস্যা হয়। এছাড়াও রাতে চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক সময় নৌকাও ডুবো চরে আটকে যায়। আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে প্রায় দেড় ঘণ্টায়। এতে করে আমাদের তেল খরচও দ্বিগুণ লেগে যায়।’
ধূলশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান জায়েদ খান জানান, ‘নদীর মাঝে ছোট-বড় চরের কারণে নৌযান চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে। বড় বড় জাহাজগুলো নাব্যতা সঙ্কটে নদী তীর ঘেষে যাতায়াতের কারণে তীর রক্ষায় ব্যবহৃত জিওব্যাগে ধস নামছে। এ অঞ্চল থেকে চরাঞ্চলে যাতায়াতে খেয়া চলাচলেও কষ্টকর। তাই ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করলে নৌযান চলাচলসহ এই এলাকার নদী ভাঙন রোধও হবে।
হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান জানান, ‘পদ্মার নাব্যতা সঙ্কটে পানির ধারণ ক্ষমতা নেই বললেই চলে। একটু পানি হলেই নদীর তীরবর্তী এলাকা ডুবে বন্যায় পরিণত হয়। নিম্নাঞ্চলের কৃষিজমিতে পানি এসে ফসল ডুবে যায়। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ ইনকিলাবকে জানান, এর টেকনিক্যাল বিষয়টা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের। আমরা তাদেরকে অবহিত করেছি। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বিবেচনা করে যদি সম্ভব হয়, তাহলে তারা করবে।’
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন জানান, নাব্যতা সঙ্কটে কাজ করে বিআইডব্লিউটিএ। আমরা যোগাযোগ করেছিলাম, তাতে বিআইডব্লিউটিএ থেকে জানায়, নৌযান চলাচলে যেখানে যতটুকু ড্রেজিং করা প্রয়োজন, তারা সেভাবেই কাজ করছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটি-এর আরিচা নৌরুটের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের নৌরুট হলো মাওয়া টু বাঘাবাড়ি পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত এ নৌরুটে নৌযান চলাচল সচল আছে। এর বাইরে স্থানীয় প্রশাসন যদি একান্তই জণগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কোথাও ড্রেজিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন