চান্দিনা (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া সংযোগ সড়কের ব্যস্ত রাস্তায় অথবা মার্কেটের সামনে এক শ্রেণীর মহিলা ও যুবকদের দেখা যায় গাড়ি, রিকশা প্রাইভেটকার বা পরিবহনে থাকা যাত্রীদের জানালার ফাঁকফোকর দিয়ে লিফলেট ছুড়ে দিতে। এসব লিফলেটের অধিকাংশই চান্দিনাতে গড়ে ওঠা কথিত বিভিন্ন ইউনানি, হারবাল বা ভেষজ চিকিৎসা কেন্দ্রের। এসব লিফলেটের ভাষা যেমন কুরুচিপূর্ণ তেমনি যাত্রীদের পড়তে হয় উটকো ঝামেলায় এবং বিব্রত অবস্থায়। কুরুচিপূর্ণ লিফলেট বিতরণ করার জন্য হারবাল বা ভেষজ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর নিয়োগকৃত লোকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে দাঁড়িয়ে এসব লিফলেট বিতরণ করে। এসব লিফলেট বাসের জানালা দিয়ে ছুড়ে দেয়ার সময় অনেক যাত্রীর নাকে বা মুখে লাগে। এছাড়া চলন্ত বাসে এসব লিফলেট ছোড়াও অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও এসব লিফলেট বিতরণে তাদের রোধ করা যায় না। বর্তমানে এসব লিফলেট বা পোস্টার শুধু যাত্রীদের মধ্যে বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এগুলো বাসের সামনের কাচের উপরের অংশে এবং জানালার কাচে সাঁটানো হয়ে থাকে। এসব বিজ্ঞাপনের ভাষা এতটাই কুরুচিপূর্ণ যে, নারী যাত্রীদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আর এগুলো বাসে নারীদের বসার আসনগুলোর আশপাশেই সাঁটানো থাকে। স্কুলশিক্ষক সাইফুল আলম জানান, বাসে চড়লেই এমনিতেই লিফলেটের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ তারপর এর সাথে যোগ হয়েছে বড় বড় পোস্টারে নারী-পুরুষের গোপন রোগের বিস্তারিত কথামালা। এসবের কারণে বাচ্চা এবং বাসার মা-বোনদের নিয়ে বাসে চলালাচল করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বাসের যাত্রী জাকির হোসেন জানালেন, প্রতিদিন বাচ্চাকে স্কুলে আনা-নেয়ার সময় এসব লিফলেটের কারণে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। তিনি বলেন, এ ধরনের বিজ্ঞাপন ও লিফলেট বিতরণকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সালমা আক্তার নামে এক মহিলা যাত্রী জানালেন, চান্দিনার রাস্তায় যে ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে তা অনেক সাধারণ যাত্রীকেই বিব্রত অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে শহরে চলাচল সমস্যা সঙ্কুল হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, চিকিৎসার নামে এসব প্রতিষ্ঠানের রোগীদের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগও রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, দিন দিন এসব প্রচারণা বেড়েই চলেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, মাধাইয়া, চান্দিনা, নিমসার, ক্যান্টনমেন্টসহ বিভিন্ন স্পটে সব চেয়ে বেশি এসব লিফলেট বিতরণ করা হয়। জানা গেছে, চান্দিনাতে এসব লিফলেট বিতরণ করতে অর্ধশত তরুণ ও মহিলা নিয়োজিত রয়েছে। এরা বিশেষ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের লিফলেট বিতরণের ক্ষেত্রে চুক্তিতে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে আবার রোগী চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার ওপর নির্ভর করে। জানা যায়, এরা প্রতি হাজার লিফলেট বিতরণ করলে পায় ১০০ টাকা। লিফলেট বিতরণকারী অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা অনেকে দিনে দুই থেকে আড়াই হাজার লিফলেট বিতরণ করে। লিফলেটে কুরুচিপূর্ণ ভাষার কথা সামাদ নামে চান্দিনায় লিফলেট বিতরণকারীর কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, এসব লিফলেটে কি লেখা আছে তা জানি না। পেটের দায়েই এ কাজ করছি। এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান লিফলেটে দাবি করা হয় আমেরিকা, কানাডা, জার্মানসহ বিভিন্ন দেশ জয় করে দেশে এসেছে। কিন্তু বাস্তবে এসব প্রচারের সত্যতা কতটা সত্য তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের লিফলেটে সবধরনের যৌনরোগ, পুরোনো আমাশয়, হাঁপানি, ডায়াবেটিস, টিউমারসহ শত শত রোগ শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে চিকিৎসা করা হয় বলে দাবি করা হয়। এসব চিকিৎসকের অনেকে আবার জানান, শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে চিকিৎসার কথা বলা হলেও বাস্তবে এটা সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন