শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মুক্তিযোদ্ধা বাসির উদ্দিন একখানা কাঠের চৌকিই তার সারা দিনের ঠিকানা

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা : হাঁটাচলা করতে পারেন না তিনি। ভালো করে খেতেও পারেন না। শরীরে বেঁধেছে দুরারোগ্য ব্যাধি। পুরনো  টিনের চালের বারান্দায় পাতা একখানা কাঠের চৌকিই তার সারা দিনের ঠিকানা। শুয়ে বসে কেটে যায় দিন। ছানি পড়া দু’চোখে ঠিকমতো দেখতে পান না। স্মৃতি থেকে অনেক কিছুই মুছে গেছে তার। কিন্তু যৌবনের কথা ভোলেননি তিনি। যৌবনের সেই যুদ্ধের দিনগুলোর গল্প শোনান নাতি-নাতনিদের। এভাবেই কেটে যায় দিন ও মৃত্যুর দিন গোনা। এখন শুধু একটাই স্বাদ আছে, তার মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় যদি মেলে তবে মরেও শান্তি। পঞ্চগড় জেলার খুনিয়াভিটার বাসির উদ্দিন। বয়স ৮০ পেরিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় টগবগে যুবক তিনি। তেঁতুলিয়ার হাটবাজার, গ্রামগঞ্জ আর গৃহস্থের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন যুদ্ধের তহবিল সংগ্রহের কাজে। কখনো হাটবাজারে ট্যাক্স তুলেছেন। কখনো কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান-চাল তুলে এনে জমা করেছেন, সেই সময়ের আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন। কখনো যুদ্ধে দায়িত্বরত অফিসারদের নানা কাজ করে দিয়েছেন। নোঙ্গরখানার খাবারের জোগান দেয়ার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ছুটে বেরিয়েছেন সারা এলাকা। নিজের গল্পগুলো আধো ভাঙা শব্দে এভাবেই বলছিলেন বাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তেঁতুলিয়া ছিল মুক্ত এলাকা। এই এলাকার সেক্টর কমান্ডার ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আবদুল জব্বার। তাদের নেতৃত্বে এখানে নোঙ্গরখানা গড়ে ওঠে। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য একটি হাসপাতাল হয়। সেক্টর কমান্ডার আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে হাটবাজার এবং গ্রামগঞ্জের কৃষকের বাড়ি থেকে তহবিল সংগ্রহের কাজের দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের জীবনকে আর জীবন হিসেবে দেখিনি। খুব ভোরে বাড়ি থেকে আমরা বেরিয়ে পড়তাম। সারা এলাকার হাটবাজারে তহবিল কালেকশন করতাম। মাথার মধ্যে শরণার্থীদের কথা ঘুরপাক খেত। কখন বাজার করে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করব। তিনি বলেন, তেঁতুলিয়া ছিল কন্ট্রোল রুম। এখান থেকেই এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হতো। এখানে জাতীয় চার নেতা এসেছিল। বিদেশি সাংবাদিকরা এসে ঘুরে গেছে। তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব ছিল আমাদের ওপর। আদায়কৃত তহবিল থেকে কিছু অংশ অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসতাম। পুরান বাজারের জাহিদুলসহ আরও অনেকে আমার সাথে ছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই সময়ের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লিখিয়েছেন। আমরা কয়েকজন পারিনি। জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে একটাই চাওয়াÑ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটা পেলে শান্তি পেতাম। মুক্তিযুদ্ধকালীন তেঁতুলিয়া টেলিফোন অফিসের অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছিলেন কাজী ফারুখ আযম। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, বাসির উদ্দিন এবং জাহিদুল তখন টগবগে যুবক। তারা নোঙ্গরখানার খাবার সংগ্রহ, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার তহবিল সংগ্রহ, অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারগুলোতে খাবার পাঠানোসহ নানা ধরনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নিজেকেও অপরাধী মনে হবে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা আবুল কালাম দুলাল বলেন, বাছাই কমিটি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করে এবার সার্টিফিকেট দেবে। এমন অনেকেই আছেন যারা সম্মুখযুদ্ধ করেননি ঠিকই কিন্তু সম্মুখযুদ্ধের রসদ জুগিয়েছেন তাদের অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন