শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য

প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:৩৯ পিএম, ৫ জানুয়ারি, ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে দলীয় নেতাদের উদ্দেশে দেয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অনেক কঠিন হবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেÑ এমন একটি সম্ভাব্য বাস্তবতাকে সামনে রেখেই একটি অবাধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলকে আবার ক্ষমতায় আনতে তিনি দলীয় নেতাদের এখন থেকেই মাঠে নামার তাগিদ দিয়েছেন। তার এই বক্তব্যের মধ্য তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চান এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অতীতের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হওয়ার অধ্যায় থেকে বেরিয়ে আসতে চান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর একতরফা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের কারণে আমাদের গণতন্ত্র এবং বর্তমান জাতীয় সংসদ ও সরকার দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একে একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করে সকল দলের অংশগ্রহণে যথাশীঘ্র সম্ভব আরেকটি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল। দশম জাতীয় সংসদের তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় কোন মধ্যবর্তী নির্বাচনের আলোচনা এখন আর নাই। নির্ধারিত সময়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েই কথাবার্তা হচ্ছে। সরকার এবং বিরোধীদলের পক্ষ থেকে কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত ও কর্মতৎরতা ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে। নাসিক নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ এবং একটি কাক্সিক্ষত-ইতিবাচক নির্বাচনী সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত সকলের ইতিবাচক মনোভাবের মধ্য দিয়েই সম্ভব হয়েছে।
দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সমঝোতার যে প্রত্যাশা দীর্ঘদিন ধরে জনমনে জাগুরুক রয়েছে, সে বিষয়ে এখনো তেমন কোন অগ্রগতি লক্ষণীয় হয়ে না উঠলেও নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক মনোভাব এ ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পাশাপাশি বিতর্কিত রকিব কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্টের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর যে আলোচনা চলছে, তার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গড়ে উঠতে পারে বলে সকলে আশাবাদী। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের ইস্যুটি এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দলীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতার পালাবদলের জাতীয় নির্বাচন এখনো আমাদের দেশে অভাবনীয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো বিচ্ছিন্ন-ব্যতিক্রম বাদ দিলে, যেখানে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও নির্বাচন কমিশনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসন নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে তীব্র বিভাজিত, যুদ্ধংদেহী দুইজোটের ক্ষমতার লড়াইয়ে ক্ষমতাসীনদল ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা আশা করা কঠিন। মূলত সে ধরনের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সংস্কৃতি আমাদের দেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। জাতীয় ঐক্য ও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে সরকার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা গড়ে উঠলে আগামীতে দলীয় সরকারের অধীনেও নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে আওয়ামীলীগ। সেই সঙ্গে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটে পুনরায় নির্বাচিত হওয়াকে প্রধানমন্ত্রী একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। এ লক্ষ্য হাসিলে ভোটের মাধ্যমে জনসমর্থন নিশ্চিত করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মোকাবেলায় প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে নিজ নিজ এলাকার জনসাধারণের সাথে আরো নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্টের সাথে চলমান সংলাপে আগামী ১১ জানুয়ারী আওয়ামীলীগের তারিখ নির্ধারিত হলেও দলের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টের উপর বড় কোন চাপ সৃষ্টি না করার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটাও একটি ইতিবাচক লক্ষণ। আমাদের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রেসিডেন্টকে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নিয়োগদানের ক্ষমতা দেয়া হলেও এ ক্ষেত্রে দলনিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মনোনীত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্টের সংলাপের মধ্য দিয়ে আপাত: গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হলেও দলনিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত  বিতর্কের স্থায়ী সমাধানকল্পে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবী হয়ে উঠেছে। প্রেসিডেন্টের সংলাপ থেকে এ বিষয়েও সুস্পষ্ট পরামর্শ ও নির্দেশনা আশা করা হচ্ছে। তবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তোলা এবং নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠুভাবে সুসম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সদিচ্ছাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সকল দল ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার প্রাথমিক ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। তবে অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ ও বিরোধীদলের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে এখনো অনেক বিষয় অমীমাংসিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কালের পূর্বাপর বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট, তিনি প্রশ্নবিদ্ধ কোনো নির্বাচন দেখতে চান না। তিনি চান আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হোক। তার এই ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। তার প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হলে দেশে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হবে। সরকার হিসেবে বর্তমান সরকারের এবং সরকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভাবমর্যাদাও বৃদ্ধি পাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন