তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোরে বিসিআইসির অনুমোদিত একশ্রেণির সার ডিলাদের বিরুদ্ধে ফের সার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। তানোরের একশ্রেণির ডিলার গত নভেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত তিউনেশিয়া টিএসপি, পতেঙ্গা টিএসপি, ডিকে ডিএপি ও যমুনা ইউরিয়া সার অধিক মুনাফার আশায় মিলগেটে কালোবাজারে বিক্রি করে এসব সারের পরিবর্তে নিম্নমানের সার নিয়ে এসেছেন বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছে। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট ডিলারের দোকানের ক্যাশ মেমো ও মাস্টাররোলের কৃষকের নামের তালিকা অনুযায়ী সরেজমিন কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে বা অনুসন্ধান করলেই এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। এদিকে একশ্রেণির ডিলার সার কালোবাজারে বিক্রি করলেও যথারীতি কৃষি অফিসে এরিভাল জমা দিয়ে প্রত্যায়নপত্র সংগ্রহ করে নিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ডিলারের গুদামে বরাদ্দের সার গুদামজাত করার পরেই কেবলমাত্র ডিলারের খাতায় স্বাক্ষর করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তানোরের ডিলারগণ কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে তাদের খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে যাচ্ছে, এতে বরাদ্দের সার ডিলারগণ সঠিকভাবে নিয়ে আসছেন কিনা তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির ডিলার বরাদ্দের মানসম্মত সার কালোবাজারে বিক্রি করে নিম্নমানের সার এনে বাজারে বিক্রি করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সার ব্যবসায়ী বলেন, কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম যোগদানের পরে ডিলারদের যে হারে পদে পদে আর্থিক সুবিধা দিতে হচ্ছে তা পুষিয়ে নিতে ডিলারদের দুই নাম্বারি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই তারা অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তানোরে বিসিআইসির অনুমোদিত ৯ জন ডিলারের বিপরীতে তিউনেশিয়া ও পতেঙ্গাসহ টিএসপি সারের বরাদ্দ আসে প্রায় ৬১৭ মেট্রিক টন, ডিকেসহ ডিএপি সারের বরাদ্দ আসে প্রায় ৬৮৯ মেট্রিক টন ও যমুনাসহ ইউরিয়া সারের বরাদ্দ আসে প্রায় ৭৬৪ মেট্রিক টন। তবে কোন ডিলারের বিপরীতে কতটুকু তিউনেশিয়া ও পতেঙ্গা টিএসপি, ডিকে ডিএপি ও যমুনা ইউরিয়া সার বরাদ্দ হয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, তানোরে সরকার যে পরিমাণ সারের বরাদ্দ দেন তাতে কৃষকের মাঝে সার নিয়ে হাহাকার পড়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে বাইরের ডিলারদের কাছ থেকে সার সংগ্রহ করে মেটানো হয় ঘাটতি। সারের কোনো ধরনের ঘাটতি নেই তাহলে এখানে বরাদ্দ কম কেন এই প্রশ্নের জবাবে উচ্চস্বরে তিনি বলেন, আপনাদেরকে ‘সাংবাদিক’ সব কিছুর জবাব দিতে আমি বাধ্য না। এসব নিয়ে কোনো ধরনের খবর প্রকাশ বা বাড়াবাড়ি করলে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে সাংবাদিকতা শেখানো হবে। এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সার বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মুহাঃ শওকাত বলেন, তিনি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি। তিনি বলেন, কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাবু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক সময় এক মাসের সার অন্য মাসে তুলতে হয়। তবে সব সারের মান ভালো, নি¤œমানের সার বলতে কিছুই নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন