শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

লোহাগাড়ায় বালু নিয়ে চাঁদাবাজি নীরব প্রশাসন

| প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তাজ উদ্দীন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) থেকে : লোহাগাড়ায় রয়েলটির নাম দিয়ে বালুবাহী গাড়ী থেকে প্রতিদিন লক্ষ টাকার চাঁদাবাজি করছে একটি সিন্ডিকেট। বিগত কয়েক বছর ধরে রাস্তার পাশে রীতিমত অফিস বসিয়ে রশিদ দিয়ে চাঁদাবাজি করে গেলেও রহস্যজনক কারণে প্রসাশন নীরব। লোহাগাড়ার দরবেশহাট ডিসি সড়কের পুঁটিবিলা বোর্ড অফিস এলাকায় এই চাঁদাবাজির ঘাট অবস্থিত। দিন দুপুরে ডাকঢোল পিটিয়ে তাদের এই চাঁদাবাজির দৃশ্য দেখলে মনে হয় যেন দরবেশহাট ডিসি সড়কটিই তারা চাঁদাবাজির জন্য ইজারা নিয়েছে। সিন্ডিকেটের হয়রানি ও মামলা হামলার ভয়ে গাড়ী চালকরাও নীরবে দিয়ে যাচ্ছে চাঁদা। ইতোমধ্যে এর প্রতিবাদ করে অনেক চালকই নাজেহাল হয়েছে। তাদের অবাধ্য হলেই এই রাস্তা দিয়ে গাড়ী চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। অপরদিকে যারা বালু উত্তোলন করছে তারা আবার বালুর দাম নিচ্ছে প্রতি গাড়ী ৫ শত বা ১ হাজার করে। বালু উত্তোলনকারীরা ইজারাদার নয় অবৈধভাবেই বালু উত্তোলন করছে। অথচ নিয়ম হল যারা ইজারা নিবে তারাই বালু উত্তোলন করবে এবং সেখানেই বালুর দাম নিবে। কিন্তু লোহাগাড়ায় ইজারাদাররা বালু মহালগুলো ইজারা নিয়ে অন্যদের তা বিক্রি করে দিয়েছেন আর ইজারাদাররা ইজারার দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। বালুর গাড়ী সেখান থেকে বালু কিনে চাঁদার ঘাটে আসে। সেখানে প্রতি ট্রাক থেকে নেয়া হয় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, ডাম্পার পিকআপ ছোট বড় মিলিয়ে ৫ শত, ১ হাজার বা দেড় হাজার টাকা। দরবেশহাট ডিসি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ছোট বড় বালুর গাড়ী চলাচল করে থাকে। সেই হিসেবে প্রতিদিন ওই ঘাটে লক্ষাধিক টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। বালুর গাড়ীতে চাঁদাবাজির কারণে বালুর দাম বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। গাড়ী ভাড়া, চাঁদা, বালুর দাম সব মিলিয়ে প্রতি গাড়ী বালু দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে বাড়ী নির্মাণকারীদের। দেশের বিভিন্ন স্থানে লোহাগাড়ার ডলুর বালুর সুনাম রয়েছে। যার কারণে বাধ্য হয়ে এই বালু দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনছে বাড়ী নির্মাণকারীরা। ফলে বাড়ী নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোহাগাড়ার কয়েকজন প্রভাবশালী লোক মিলে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে। সেখানে সরকার ও বিরোধীদলীয় লোক রয়েছে। রয়েছে সাবেক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। প্রশাসন আর বাহুবল দুটোই তাদের দখলে। এসবকে কাজে লাগিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছে। তাদের কথা অমান্য করলে গাড়ী চালকদের অনেকসময় তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আবার থানা পুলিশ ও তাদের কথায় উঠবস করে বলে তারা দাবি করে থাকে। যার ফলে কেউ তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ করার সাহস করছে না। শুধু তাই নয়, সিন্ডিকেটের লোকদের মধ্যে অনেক সময় ভাগে না মিললে তাদের মধ্যেই গ্রুপিং, মারামারি, মামলা হয়ে থাকে। সে সময় উভয় গ্রুপকে চাঁদা দিতে হয় গাড়ী চালকদের। তবে এখন উভয়গ্রুপই এক লাইনে রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোহাগাড়ায় সরকারিভাবে মোট ২৮টি বালু মহাল রয়েছে। তন্মধ্যে ওই সিন্ডিকেটের লোক নামমাত্র ৩টি বালু মহাল ইজারা নিয়েছে। তন্মধ্যে ডলু বালু-৪ নওশেদ আলম চৌধুরী, পানত্রিশা বালুমহাল-১ ও সোনাইছড়ি বালু মহাল নুরুল আলম জিকু ইজারা নেয়। বাকীগুলো খালি পড়ে আছে। তবে ইজারা নেয়া মহল থেকেও তারা বালু উত্তোলন করছে না। বালু উত্তোলন করছে অন্যরা। শুধু এই ৩টি বালু মহালের ইজারার দোহাই দিয়ে পুঁটিবিলা এলাকায় বসিয়ে দিয়েছে চাঁদাবাজির ঘাট। এই চাঁদাবাজির টাকায় সিন্ডিকেটের অনেকেই রাতারাতি বাড়ী গাড়ীর মালিক হয়ে গেছে। এদিকে উপজেলার অন্যরাস্তা দিয়ে চলাচলকারী বালুর গাড়ীকেও তাদের সøীপ নিতে হয়। যেমন সাতগড়, চুনতিসহ বিভিন্ন এলাকার অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা এই সিন্ডিকেটের সøীপ ছাড়া বালু বিক্রি করতে পারে না বলে জানা গেছে। এ যেন চোরের উপর বাটপারী। এ ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিজনুর রহমান বলেন, যারা বালু মহাল ইজারা নিয়েছে তারা রয়েলটি নিতে পারে। লোহাগাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান পিপিএম এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সেটি ইউএনও সাহেব এর দেখার বিষয়। তাকে অবহিত করুন। এলাকাবাসী এই চাঁদাবাজি বন্ধে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন