রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গর্জনিয়া খালেকুজ্জামান সেতু এখন মরণ ফাঁদ

২ বছরে নিহত ৭, নিখোঁজ ৪, আহত ২ শতাধিক

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : রামু উপজেলার গর্জনিয়া এলাকায় ৩ কোটি টাকায় নির্মিত খালেকুজ্জমান সেতুটি এখন দাঁড়িয়ে আছে মরণ ফাঁদ হয়ে। এটি জনগণের কল্যাণে স্থাপিত হলেও এখন জনগণের দুর্দশার কারণ হয়ে পড়েছে ব্রিজটি। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত টানা ১১ বছর প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এ ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করেছিল নিয়মিত। এমন কি এলাকার কৃষককূল তাদের উৎপাদিত পণ্য বেচা-বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয়ও করতো প্রতি মৌসুমে। ছাত্র-ছাত্রীরা এবং প্রসূতি মা সহ রোগিরা সরাসরি পরিবহন সুবিধা পেত যোগাযোগ ভাল থাকার কারণে। এখন এগুলো সবই যেন ইতিহাস। ব্রিজটির এপ্রোসের মাটি সরে গিয়ে যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত দু’বছর ধরে বিধ্বস্থ ব্রিজটি পারাপারে ৭ জন নিহত, ৪ জন নিখোঁজ ও ২ শতাধিক মানুষ আহত হলেও ব্রিজটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। ব্রিজটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা তার কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ। এত কিছুর পরও এ ব্রিজের তদারককারী কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর ঘুম ভাঙেনি। এত মানুষ হতাহতের পরেও এ পর্যন্ত ব্রিজের ভাঙন রোধে এবং ব্রিজ সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়নি এলজিইডি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কোন কথা তোয়াক্কা না করে উল্টো দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার ব্যাপারে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে জনমনে। বাঁকখালী নদীর গর্জনিয়া পয়েন্টে কক্সবাজার সদর-রামুর সাবেক সংসদ সদস্য খালেকুজ্জামান সেতুটি নির্মিত হয়েছিল ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর। ঐতিহাসিক শাহ সূজা সড়কের এ অংশে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৬০-১৭৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটির দক্ষিণাংশের এপ্রোসের মাটি সরে যায় গত বছরের ২৫ জুন। এ অবস্থায় স্থানীয় ও জাতীয়সহ দেশের সবক’টি পত্রিকায় এ ভাঙনের খবর ফলাওভাবে প্রকাশও হয়েছিল তখন। ভাঙনের কারণে এখান দিয়ে নদী পারাপারের সময় শতাধিকবার নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটে। ভেসে যায় অনেক প্রাণী। এমন কী নৌকা নিয়ে পার হতে গিয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৭ জন, নিখোঁজ হয়েছে ৪ আর আহত প্রায় ২ শতাধিক মানুষ। গত এক সপ্তাহ আগে গর্জনিয়া বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রবীণ আ.লীগ নেতা ইউনুছ সিকদার ব্রিজ থেকে নামার সময় গুরুতর আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আহত ইউনুছ সিকদারের পায়ে বড় অপারেশন করাতে হবে। ব্রিজটি দ্রুত সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। এদিকে ভাঙন রোধে জরুরিভাবে ব্যবস্থা না নেয়ায় এ সামান্য ভাঙন ধীরে ধীরে বেড়ে গিয়ে পরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাক ভেঙে গিয়ে পরিণত হয় আরেক বাঁকখালী নদীতে। অর্থাৎ সড়কটি নদীতে পরিণত হয়ে গিয়ে ব্রিজটি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে। দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে বিশাল এলাকার মানুষের। শুধু গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া-ঈদগড় ইউনিয়ন এলাকার লক্ষাধিক মানুষ নয়, পাশের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী, ঈদগড় ও দুছড়ি ইউনিয়ন এলাকার ৭০ হাজার মানুষও একই সাথে অতি কষ্টে দিন যাপন করছে এই একই কারণে। এখানকার মানুষ নদী ভাঙন এলাকা দিয়ে পার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো ও নৌকা দিয়ে। এতেও দুর্ঘটনার শিকার হয় পথযাত্রিরা। আর ওদিকে কৃষকরা যা উৎপাদন করে তাদের পণ্যগুলো ন্যায্য মূল্যে বেচা-বিক্রি করতে পারছেন না ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ ৬ মাস। রাবার চাষিদেরও একই দশা। এলাকার সচেতন অসংখ্য মানুষ অভিযোগ করেন, ব্রিজ তদারকির দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী একবারের মতো ও এ ব্রিজটির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি এ পর্যন্ত। বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষ বার বার ধর্ণা দিলেও তিনি রহস্যজনক কারণে এ বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা। গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, ব্রিজ সংস্কারের জন্য ইতিপূর্বে ২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকার বাজেট ঘোষণা হয়েছে কিন্তু এখনো তা অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। তারপরেও এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সাময়িকভাবে আগামী ৫ মাসের জন্য একটি অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এটা নির্মিত হলে মোটামুটিভাবে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করতে পারবে। রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম এ বিষয়ে জানান, তিনি নিজেও নির্বাহী প্রকৌশলীকে তাগিদ দিয়েছিলেন দ্রুততম সময়ে এ ভাঙনটি পুনরায় নির্মাণ করার যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাকে বার বার তাগিদ দেয়ার পরও কি কারণে তিনি এ কাজটি হাতে না নিয়ে গড়িমসি করছেন তা বলা মুশকিল। তিনি আরো বলেন, আমাদের সরকার জনর্স্বাথে সবকিছু করছেন উদারভাবে। আর এ পর্যায়ে জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া মানে পর্যায়ক্রমে সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করা। তবে এ বিষয়ে কক্সবাজার নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) মনজুরুল আলম এ প্রতিবেদককে জানান, এ ভাঙন পুনঃনির্মাণের দায়িত্ব তার ঠিকই। তবে তিনি নানা কারণে করছেন না এটি। এর অন্যতম হলো এটি এখন বড় ভাঙনে পরিণত হয়ে গেছে। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেছেন, ভাঙন এলাকায় টেকসই বাঁধ দিয়ে যেন এ ব্রিজটি রক্ষা করেন তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Manu ২৩ জুন, ২০১৭, ১০:০৭ এএম says : 0
ঈদ মোবারক সবাই কে
Total Reply(0)
মানু ২৩ জুন, ২০১৭, ১০:১৭ এএম says : 0
আমরা কক্সবাজার জেলার সন্তান
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন