রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

নিম্নমানের পণ্যে তৈরি হচ্ছে ড্রেনেজ কালভার্ট ও রাস্তাঘাট

পূর্বাচল উপশহরে সক্রিয় চাঁদাবাজ

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউকের) অধীনে নির্মিত পূর্বাচল উপশহরের বিভিন্ন কাজে ঠিকাদাররা নি¤œমানের পণ্য ব্যবহার করে তৈরি করছে বিভিন্ন সেক্টরের ড্রেনেজ, কালভার্ট ও রাস্তা-ঘাট। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কাজ না দিলেই ভেঙে ফেলা হচ্ছে প্লটের প্রাচীর। চুরি হচ্ছে রড, পাথর, মাটি ও বালিসহ মূল্যবান সামগ্রী। রাস্তায় সুরকি, খোয়া ও পিছ প্রয়োজনের তুলনায় ব্যবহার হচ্ছে কম। সিমেন্টের পরিমাণ কম দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ড্রেনেজ। এমন চিত্রই দেখা গেছে রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়ন ও দাউদপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু মৌজায় অধিগ্রহণ করে গড়া পূর্বাচল উপশহরের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে। রাজউকের কোন কাজই ২ বা ৩ নাম্বার ইটা দিয়ে বাস্তবায়ন করার কথা না থাকলেও ৪,৭, ১৯নং সেক্টর ও ৯নং সেক্টর এলাকায় দেখা গেছে ব্যতিক্রম। এখানে ড্রেনেজ নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে অতি নি¤œমানের ইটা। পরিমাণের চেয়ে কম দিচ্ছেন সিমেন্ট। বুয়েট প্রকৌশলীদের নির্দেশনায় সাধারণত প্রতি ৭ কড়াই বালি আর ৪ কড়াই সুরকির সাথে এক বস্তা সিমেন্ট ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও এখানে ১২ কড়াই বালি ও ৮ কড়াই সুরকির সাথে মেশানো হচ্ছে সিমেন্ট। এভাবে প্রয়োজনীয় সিমেন্ট না দিয়ে নামেমাত্র কাজ করছে অসাদু ঠিকাদার। স্থানীয় রাজমিস্ত্রি লোকমান মিয়া বলেন, পূর্বাচলের ড্রেনেজ নির্মাণে ব্যবহার করা পণ্যের কোন মান নেই। ঠিকাদারদের কথামত এসব করেন। তারা হাজিরাও পান ঠিকমত। পূর্বাচলের গোয়ালপাড়া এলাকায় ডেসকোর নির্মাণাধীন প্রজেক্টে দেখা গেছে ভয়াবহ চিত্র। স্থানীয়দের অভিযোগ ডেসকোর ঠিকাদার আবু ইউসুফ হাওলাদারের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ প্রতিষ্ঠানের পণ্য সরবরাহের কাজ পায় ইমন হোসেন খোকন। তার অতি মুনাফার লোভে এখানে নি¤œমানের ইটা, রড ও পুরাতন ব্যবহার করা পাথর আনা হয়। আর তাই ব্যবহার করছে এ ডেসকোর প্রতিষ্ঠানে। বৈদ্যুতিক খুঁটিও এসব নি¤œমানের পণ্যে তৈরি করতে দেখা গেছে। পূর্বাচলের আশপাশের বাজারের রড সিমেন্টের দোকানে পাওয়া যায় চোরাই মাল নামের কমদামি পণ্য। এসব পণ্যের  মধ্যে  রয়েছে কালভার্টে ব্যবহার করা রড ও সিমেন্ট। ভক্তবাড়ি বাজার এলাকায় সুমন মিয়ার দোকানে পাওয়া গেছে বেশ কিছু সিমেন্টের বস্তা। এসব বস্তা স্থানীয় চোরাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিনেছেন বলে দাবি তার। সূত্র জানায়,  রাতের আঁধারে ঠিকাদারদের সহযোগিতায় পূর্বাচলের পাথর, বালি ও মাটিসহ রড চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত প্লটে ও বাসাবাড়িতে। সম্প্রতি রাজউকের কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন চোধুরীর ব্যক্তিগত বাসায় রাজউকের মাটি কেটে নেয়ার সময় থানা পুলিশকে তথ্য দেয় স্থানীয়রা। পরে মাটি চুরির প্রমাণ পেলেও রহস্যজনকভাবে থানা পুলিশ মামলা ও আটক করেনি। সূত্র জানায়, রাজউকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এসব দুর্নীতি করেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। তাই ঠেকানো যাচ্ছে না পূর্বাচলের নি¤œমানের পণ্যের ব্যবহার। এদিকে কালনী এলাকার আবুল কালাম আজাদ নামীয় রাজউকের কর্মচারীর সহযোগিতায় ৭নং সেক্টর এলাকার একটি রাস্তার কাজে সুরকির বদলে বালি ফেলে ভরাট করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাজউকের  সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নিয়েই এ কাজ করছেন তিনি। এসব বিষয়ে রাজউকের পূর্বাচল শাখার প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন জানান,  পূর্বাচলের দুর্নীতি ও অনিয়ম বিষয়ে স্থানীয় ঠিকাদাররাই জড়িত। এখানে রাজউকের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি তার। অপরদিকে রাজউকের ব্যক্তিগত প্লটের প্রাচীর নির্মাণ কাজ স্থানীয়দের দিয়ে না করালেই ভেঙে ফেলা হয় দিন দুপুরে। চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এসব নানা অপকর্ম হলেও রাজউকের দৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। স্থানীয়দের অভিযোগ উন্নত শহর নি¤œমানের পণ্যে গড়া হলে তার ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় থাকবে।  এসব বিষয়ে রাজউকের পূর্বাচল শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী  আনোয়ার হোসেন বলেন, ঠিকাদাররা কোন অনিয়ম করে থাকলেও তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে রাজউকের কেউ জড়িত থাকলেও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন