বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

নিম্নমানের মশার কয়েলে কুমিল্লার বাজার সয়লাব

| প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : শীতের মৌসুমে মশার উৎপাত অন্য সময়ের চেয়ে অনেকটা বেশি থাকে। আর এ সুযোগে নামি-দামি কোম্পানির উৎপাদিত মশার কয়েলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুমিল্লায় নগর, গ্রাম-গঞ্জের স্টেশনারী ও মুদিমালের দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে নি¤œমানের মশার কয়েল। এসব নি¤œমানের মশার কয়েল রয়েছে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর মাত্রাতিরিক্ত অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট। এসব কয়েলে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট উপাদানটি নির্র্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি থাকায় মশাসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ও মরছে। অথচ মশার কয়েল মশা মারার জন্য নয়, মশা তাড়ানোর কাজ করার কথা। কিন্তু বাজারের নি¤œমানের ওইসব কয়েল মশাসহ অন্য পোকামাকড় মেরে সাবাড় করে দিচ্ছে। দোকানিরা ‘মশা মারতে বেশ কার্যকর’ জানান দিয়েই মানব স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি রয়েছে এমন সব কয়েল সাধারণ ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। আর এ কয়েল রাতভর জ্বলছে ঘরে ঘরে। আর দেহে প্রবেশ করছে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’র উচ্চমাত্রার বিষ! মশার উৎপাতের এ সময়টি এলেই কুমিল্লায় বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়া কয়েল তৈরির হিড়িক পড়ে। আবার ঢাকা ও কুমিল্লার কিছু কোম্পানি নি¤œমানের কয়েল বাজারজাত শুরু করে। ফলে এসব মশার কয়েল মানবদেহের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কুমিল্লার বিভিন্ন বাজার ও এলাকার দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, বিএসটিআই’র লোগো ব্যবহার করা আকর্ষণীয় মোড়কে বিভিন্ন নামের মশার কয়েল থরে থরে সাজানো রয়েছে। ক্রেতারা ভালোমানের মশার কয়েল চাইতেই অনেক বিক্রেতা অধিক লাভের আশায় ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন মাত্রাতিরিক্ত অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহৃত কয়েলের প্যাকেট। বিক্রির সময় বলে দিচ্ছেন, ‘মশা তো মরবেই সাথে পোকামাকড়ের বংশও বিনাশ হবে’। এ ধরনের কয়েল হাতে পেয়ে ক্রেতা তো খুশিই হবে। কারণ মশার সাথে অন্য পোকামাকড়ও মরবে। কিন্তু বিক্রেতাও বুঝতে পারছেন না এ ধরনের কয়েল যারা ব্যবহার করবে ওই পরিবারের শিশু থেকে শুরু করে সবার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে। নি¤œমানের কয়েল কোম্পানির লোকদের মিঠা কথা আর অধিক কমিশন দেয়ার প্রবণতাই আজকের সময়ে এসব কয়েল বাজার দখল নিয়েছে। বেশ কজন ক্রেতা জানান, দোকানিরাই বলছেন এসব কয়েলের ধোঁয়া কেবল মশা নয়, পোকা মাকড়ও মারতে সাহায্য করে। দোকানিরা বেশ জোর দিয়েই এ ধরনের কয়েল বিক্রি করছেন। কিন্তু কয়েলে ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে এটা না জানার কারণেই তারা ওইসব কয়েল কিনে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, বাজারে এমনকিছু মশার কয়েল মিলছে যাতে ক্ষতিকারক উপাদান তো থাকছেই, তার উপর অধিক মাত্রার ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকছে। কারণ প্রায়ই শুনা যায়, এসব কয়েল ব্যবহারের ফলে মশা মরে যায়, তেলাপোকা ও রাতে বেলায় ঘরে আসা অন্যসব পোকামাকড়ও মরে যায়। এর কারণ হলো কয়েলে একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট মাত্রাতিরিক্ত রয়েছে। অথচ এ উপাদানটির পরিমাণ কয়েলে এমনভাবে থাকবে যা কেবল মশা তাড়াতে কার্যকর হবে। মারতে নয়। বিশেষ করে বিএসটিআই’র অনুমোদন নেই এমন কয়েলেই এই উপাদানটি যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে ক্যান্সার, শ্বাসনালীতে সমস্যাসহ ভয়াবহ রোগ হতে পারে। এছাড়া সন্তান সম্ভাবনা মা ও শিশু উভয়ই এ ধরনের কয়েল ব্যবহারের ফলে ক্ষতির শিকার হতে পারেন। জেলার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব মশার কয়েলে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’র পরিমাণ বেশি রয়েছে তা সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের কয়েল কোম্পানি ও বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মান যাচাইয়ের বিষয়ে আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। কুমিল্লায় বেশ কিছু মশার কয়েল উৎপাদনের কারখানা রয়েছে, এসব কারখানার মধ্যে অনুমোদনহীন কারখানাও রয়েছে। আবার অনুমোদিতগুলোর পরিবেশ ও বিশেষজ্ঞ লোক রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এছাড়াও বাজারে চায়না থেকে আমদানিকৃত যেসব কয়েল বিক্রি হচ্ছে এসবের মান যাচাইয়ের বিষয়টিও বিএসটিআই এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেখা উচিত। কেননা, এসব কয়েলেও অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’র পরিমাণ বেশি থাকতে পারে। মশার কয়েল জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াক এটা কেউই প্রত্যাশা করে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন