দিলীপ কুমার আগরওয়ালা : দেশে প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্কুলের উপযুক্ত ৫০ লাখেরও বেশি শিশু স্কুলে যায় না। এদের একটি অংশ কখনো স্কুলে যায়নি, অন্য অংশটি ঝরে পড়া। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে শিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। অনেক স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণে এখন গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়েছে। ছাত্রীদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করতে নানা সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলে বিনামূল্যে বই বিতরণের ব্যবস্থা আছে। মেয়েদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ আছে। নিঃসন্দেহে লেখাপড়ার মান বৃদ্ধি ও হার বাড়াতে এসব গৃহীত ব্যবস্থার ইতিবাচক সুফল দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার ধন্যবাদ পাবার যোগ্য তবে সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয় জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব অত্যাধিক এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। কেননা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে জাতি তাদের জীবনে সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছে সেই জাতির জীবন হয়েছে ততই উন্নত। কথায় আছে শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। এ কথা বিবেচনায় রেখে এটা বলা যৌক্তিক যে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষাকে আরো এগিয়ে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এর সঙ্গে সঙ্গে এটাও বাস্তব, দেশের বেশিরভাগ পরিবারই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাই সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করে পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে যেন আর্থিক দৈন্যের কারণে কোনো শিশু ন্যূনতম শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত না হয় কোনোভাবেই। আর তা নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল জাতির সত্যিকারের উন্নতি অর্জন সম্ভব হবে।
শিশুদের স্কুলমুখী করার নানা রকম সরকারি পরিকল্পনা সত্ত্বেও প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্কুলের উপযুক্ত ৫৬ লাখ শিশু এখনো স্কুলের বাইরে। এ শিশুদের একাংশ জীবনে কখনো স্কুলে যায়নি এবং অন্য অংশ স্কুলে ভর্তি হলেও ঝরে পড়েছে। বাংলাদেশে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুর হার ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি তবে পাকিস্তানের চেয়ে কম। ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বর্তমান সরকার শিশু শিক্ষায় বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। ছাত্র বৃত্তি বাড়ানো হয়েছে ব্যাপকভাবে। এর ফলে আগামীতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। তারপরও দেশের লাখ শিশু স্কুলের বাইরে থাকা নিঃসন্দেহে আমাদের কাম্য নয়।
প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বয়সী শিশুর সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ। এর মধ্যে ৫৬ লাখই স্কুলের বাইরে। সোজা কথায় স্কুলে যাওয়ার বয়সী ১৬ দশমিক ২ শতাংশ শিশু বাইরে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে নি¤œ মাধ্যমিক বয়সী ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু স্কুলে যায় না। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এই হার ৫ দশমিক ৭ ও ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশের জন্য বাল্যবিয়ে এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারীর বিয়ে হয় ১৫-১৯ বছরের মধ্যে যা সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। শিশুশ্রমের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি দেখাচ্ছে প্রকৃত শিশু শ্রমিকের (১০-১৪ বছর বয়সী) বর্তমানে ৬ শতাংশ হয়েছে। ২০০১ সালে ছিল ১০ শতাংশ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য দূরীকরণ একটি প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে। আর তার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। আরেকটি বিষয়ও স্পষ্ট যে শিশুদের শিক্ষা বঞ্চিত হওয়ার পেছনে আর্থিক অনটন যেমন আছে তেমনি বাল্যবিয়ে, কুসংস্কারসহ নানা ধরনের সমস্যাও বিদ্যমান। এ ছাড়া অভাবের দায়ে আইনগত বিধিনিষেধ থাকার পরেও শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও কম নয়। ফলে তারা স্কুলে না গিয়ে জীবিকার তাগিদে ভারী ভারী কাজ করছে একরকম বাধ্য হয়েই। এ বিষয়ে শিল্প মালিকরাও এগিয়ে আসতে পারে।
ষ লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন