শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

সংসদ সদস্য লিটন হত্যার মোটিভ

| প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আর কে চৌধুরী : বিদায়ী বছরের শেষ দিনে দেশের দুই প্রান্তে সংঘটিত দুটি হত্যাকা-কে জনমনে অশনি সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর একটি ঘটেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গায়। সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনকে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে হত্যার পর পালিয়ে যায় মোটরসাইকেলে আসা কিলিং মিশনের সদস্যরা। আরেক ঘটনায় খুলনা মহানগরীর ইসলামপুর সড়কের শীতলাবাড়ী মন্দিরের কাছে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জেড এ মাহমুদ ডনকে লক্ষ্য করে দুই মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তকারীরা গুলি ছুড়লে সে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে শিপ্রাকু-ু নামের এক পথচারী বৃদ্ধার বুকে লাগে ও তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে কিলিং মিশনের সদস্যরা পালিয়ে যায়।
রাজনীতি থেকে খুনাখুনির অপসংস্কৃতি যে কোনোভাবেই দূর করা যায়নি, গাইবান্ধার সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকা- সে কথা নতুন করে মনে করিয়ে দিল। একজন সংসদ সদস্যকে তার বাড়িতে ঢুকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ওপর বড় আঘাত। সংসদ সদস্যরা জনগণের  প্রতিনিধি। জনগণের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ রাখতে হয়। নিজেদের বাড়িকে দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন না তারা। জনসাধারণের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয় তাদের। গাইবান্ধার সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনও এই ধারাবাহিকতার বাইরে যেতে পারেন না। ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে। হত্যাকা-ের সঙ্গে জামায়াত-শিবির ও উগ্রবাদীদের সন্দেহ করা হচ্ছে। লিটনের সমর্থকরা এক জামায়াত সমর্থকের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। এ নিয়ে সুন্দরগঞ্জ এলাকায় এক দিন হরতালও পালিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও মনে করছে, সংসদ সদস্য লিটনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাজ,  প্রাথমিকভাবে এটাই  প্রতীয়মান হয়েছে তাদের কাছে।
আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি সভ্য গণতান্ত্রিক সমাজ; যেখানে মানুষের নিরাপত্তা কোনোভাবেই বিঘিœত হবে না। কিন্তু এমপি লিটন হত্যাকা-ের ঘটনা আমাদের শঙ্কিত করে। দেশের গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষও শঙ্কিত হয়েছে। এটা গণতন্ত্র নস্যাৎ করার অপচেষ্টা বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারণ যেকোনো রাজনৈতিক হত্যাকা- গণতান্ত্রিক  প্রক্রিয়ার ওপর বিশাল আঘাত।
আমরা একটি সহনশীল সমাজ চাই। এই সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ একান্ত জরুরি। দেশ যখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে তখনই একটি অপশক্তি দেশের অভ্যন্তরে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে ফায়দা লোটার চেষ্টা অতীতেও হয়েছে। এমপি লিটন হত্যাকা- তেমনই কোনো ষড়যন্ত্রের ফল। এ-জাতীয় সব ষড়যন্ত্রের শিকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে দেশের সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। সতর্ক হওয়ার এখনই সময়। এমপি লিটন হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে সামান্য ব্যর্থতা বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।  
দেশের দুই প্রান্তে সংঘটিত দুটি বিয়োগান্ত ঘটনার একটিতে একজন সংসদ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন, অন্যটিতে হত্যাকা-ের টার্গেট নগর আওয়ামী লীগের নেতা রক্ষা পেলেও প্রাণ হারিয়েছেন একজন বৃদ্ধা। অন্যদিকে সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন ১৫ মাস আগে সৌরভ নামের এক শিশুকে গুলি করে দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। এ সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতারও হন তিনি, পরে আদালত থেকে জামিন পান। লিটন সমর্থকদের ধারণা, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডারদের সন্দেহ করা হচ্ছে। যে কারণেই এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটুক না কেন, তা একটি উদ্বেগজনক বিষয়। রাজনৈতিক হত্যাকা-ের মাধ্যমে অদৃশ্য কোনো মহল দেশে সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে এমন ধারণাও করছেন অনেকে। আমরা আশা করব, দুই হত্যাকা-ের গ্রন্থিমোচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেষ্ট হবে এবং কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী ও তাদের নির্দেশদাতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় সোপর্দ করবে। হত্যা ষড়যন্ত্রের অপরাজনীতি সভ্য সমাজে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ অপকর্মের হোতাদের খুঁজে বের করতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা সাধ্যের সব চেষ্টা চালাবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।
ষ লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সভাপতি বাংলাদেশ ম্যাচ ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন, সদস্য এফবিসিসিআই,  মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন