বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তাঙ্গন

এক-এগারোর দশ বছর

| প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ ইয়ামিন খান : বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক-এগারোর পটপরিবর্তন রাজনৈতিক দলগুলোসহ সমস্ত জাতির জন্য একটি সত্যিকার অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই ঘটনাটি বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের জন্য ছিল একটি বড় ধাক্কা। তবে এটা সত্য যে, আজ থেকে ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পটপরিবর্তনের পর দেশের মানুষ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল; অনেক আশা নিয়ে ভেবেছিল দেশে নতুন ধারার রাজনীতির সূচনা হবে। এক-এগারো সংঘটিত করার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে সেনাবাহিনী। এটা কারো অজানা নয় যে দেশে অপরাজনীতি ও হানাহানির অপসংস্কৃতির ধারাবাহিকতার ফসল এক-এগারো। কারণ স্বাধীনতার পর চার দশক পরও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন মতবাদের উপর গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দলগুলোর কারণেই জাতি আজ সার্বিকভাবেই অনৈক্য, সংঘাত এবং হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে গেছে যার দরুন আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী জাতি গড়ে তুলতে পারিনি। স্বার্থের রাজনীতির কারণেই তৎকালীন বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শেষদিকে এসে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান কে হবেন তা নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন জোট সরকারের মেয়াদের শেষদিন ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সংঘাতে লগিবৈঠার তা-বে এবং ধর্মব্যবসায়ী রাজনীতিকদের ধর্মীয় উন্মাদনায় ব্যাপক হানাহানির সূত্রপাত হয়। এরপর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ নিজেই একাধারে রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান উপদেষ্টা হন। এরপর শুরু হয় তৎকালীন বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের নামে হরতাল, অবরোধের পর অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর। দেশ অচল হয়ে যায়, বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে অস্থরিতা চলতে থাকে। একপর্যায়ে পশ্চিমা পরাশক্তিসমূহ বাংলাদেশকে ঘিরে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং নানা ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করে। এমতাবস্থায় সেনাবাহিনী এগিয়ে আসে এবং তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ সঙ্কট উত্তরণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। সংঘটিত হয় এক-এগারো। সেনাবাহিনীর সমর্থনে ড. ফখরউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এক-এগারোর সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই দেশব্যাপী দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে শক্তিপ্রয়োগের পন্থা অবলম্বন করে। দায়িত্বশীল ব্যক্তি থেকে শুরু করে বহু রাজনীতিক নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী দুর্নীতির অভিযোগে আটক হয়।
মানুষ ভেবেছিল দেশে হয়তো পরিবর্তন আসবে। সুস্থ রাজনীতিক পরিবেশ ফিরে আসবে কিন্তু সব যেন মাকাল ফল। জ্বলন্ত চুলোয় থেকে লাফ দিয়ে কড়াইতে পড়া। যাহোক তৎকালীন সরকারের উদ্যোগে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয় লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এর পর থেকে শরু হয়েছে নতুন যন্ত্রণা। একদিকে রাজনৈতিক হানাহানি, বিভিন্ন মতবাদের সংঘাত, জঙ্গিবাদ এবং পক্ষান্তরে সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্তের কারণে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি হুমকির সম্মুখীন। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের ঐক্যহীনতার কারণে এদেশ যদি ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও লিবিয়ার ভাগ্যবরণ করে তাহলে আমাদের ধ্বংস ছাড়া আর কোনো পথ নেই  এবং আমাদের কারও অস্তিত্বই নিরাপদ থাকবে না। এদিকে বিশ্ব ক্রমান্বয়ে ধাবিত হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে।
এমতাবস্থায় ১৬ কোটি জনতাকে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমের সদ্ব্যবহার এবং ঈমানি চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ করে ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ব থেকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কারণ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত মাটির প্রতিটি কণার কাছে আমরা আজন্ম ঋণী। একটি ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি হলে এদেশ ভয়াবহ সঙ্কট থেকেও যেমন মুক্তি পাবে, তেমনি কোনো অপশক্তি দ্বারা দেশ আর আক্রান্ত হবে না। আমরা হবো বিশ্বের পরাশক্তি। ভুললে চলবে না যে, আমাদের ঐক্যহীনতার কারণেই এসেছিল এক-এগারো। আমরা আর রাজনৈতিক হানাহানির বিষফল এক-এগারো দেখতে চাই না। এ এক-এগারো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সকল অনৈক্য ও বিভেদ ভুলে আল্লাহর তওহীদের উপর ১৬ কোটি মানুষের ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ে তুলতে হবে। যে জাতি হবে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ও পরাশক্তিধর সমৃদ্ধ শক্তিশালী জাতি।
ষ লেখক : ২নং হাবেলী, গোপালপুর, ফরিদপুর থেকে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন