রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সড়কে হচ্ছে খানাখন্দ, ধুলোঝড়ে বাড়ছে বায়ুবাহিত রোগ

রূপগঞ্জে ইছার মাথার দৌরাত্ম্য

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে  : রূপগঞ্জের সড়কে নতুন আতঙ্কের নাম অবৈধ যান  ইছার মাথা নামক ট্রাক্টর। আর সর্বনাশা ইছার মাথা আতঙ্কে দিন কাটে অভিভাবকদের। দুর্ঘটনায় পড়ে অকালে ঝরে পড়ছে সাধারণ লোজনের প্রাণ। আর ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তাঘাট ভেঙে চুরমার আর ধুলোঝড়ের সাথে নিত্য বসবাস করছে রূপগঞ্জের ৯ গ্রামের লোকজন। নিষিদ্ধ এই যানের দৌরাত্ম্যে রাস্তায় বেরুলেই জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় বাধ্য হয়ে। স্থানীয় ইটভাটায় ইটা সরবরাহ ও বালি, মাটি সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা এই অবৈধ যানের দেখা মেলে রূপগঞ্জের দাউদপুর, খৈসাইর, বেলদী, পিতলগঞ্জ, মধুখালী, শিমুলিয়া, কাজিরবাগ, দেবইসহ আশপাশের গ্রামে। এই এলাকার মালাবাহী একমাত্র যান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ইছার মাথাখ্যাত জমি চাষের জন্য তৈরি করা শক্তিশালী ইঞ্জিনচালিত ট্রাক্টর। ভয়ে ভারী এই যানটি ক্ষেত-খামারের চাষাবাদের কাজে ব্যবহার উপযোগি করে গড়ে তুললেও অধিক মুনাফার লোভে মালবাহী যান হিসেবে ব্যবহার করছেন স্থানীয় অসাধু ইটভাটার মালিক ও  ইটা পাইকাররা। তারা ভারতীয় ট্যাফে ট্রাক্টরকে হালকা যান চলাচলের রাস্তায় নামিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তাগুলোকে খানাখন্দে পরিণত করেছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয় লোকজন। প্রশিক্ষণহীন চালক আর অদক্ষ হেলপারের চালনা করা এসব যানের বেপরোয়া গতিতে রাস্তায় চলাচলরত বৈধ গাড়িকেও ভয়ে থেমে যেতে হয়। এ সময় রাস্তাঘাট ভেঙে খানাখন্দে পরিণত হয় আর ধুলাবালি উড়ে স্থানীয় লোকজনের ভোগান্তি বাড়িয়ে তোলে। অভিযোগ রয়েছে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের কতিপয় সদস্যকে ম্যানেজ করে স্থানীয় ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এসব অবৈধ ইছার মাথা চালাচ্ছেন। নিয়মিত মাসোহারা প্রদান করেই এ অবৈধ যানগুলো অবাধে চলাচল করে। সূত্র জানায়, স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের  রয়েছে প্রায় ১২টি এসব অবৈধ যান। এসব যান স্থানীয় প্রায় ৪০টি ইটভাটার যাবতীয় বস্তু পরিবহনের কাজে ব্যবহার করছে। দাউদপুর এলাকার বেশির ভাগ রাস্তাগুলোই খানাখন্দে পরিণত হলেও রহস্যজনক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গির মাস্টার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলেও রয়েছে অভিযোগ। স্থানীয় লোকজন জানায়,  মন্দের ভাল হিসেবে ধুলা প্রতিরোধে ইছার মাথা মালিক সমিতির লোকজন দিনে দুবার রাস্তায় পানি দিত। এখন তা চোখে পড়ে না। তাছাড়া বেপরোয়া গতি ও বিকট শব্দের কারণে পথের ধারে ঘরবাড়ির লোকজনের চোখে ঘুম নেই। শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন চরম সমস্যায়।  ফলে একদিকে পরিবেশের ক্ষতি করে চালাচ্ছে এই অবৈধ যান অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন ধুলাবালির কারণে ফুসফুসের নানা রোগ ও বায়ুবাহিত রোগ বহন করে রয়েছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দাউদপুরের বেশির ভাগ দরিদ্র রোগীরাই হাঁপানি, শ্বাস কষ্টসহ নানা বায়ুবাহিত রোগ নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার জাইদুল ইসলাম বলেন, ধুলাবালির কারণে পথে চলাচলরত লোকজনকে অবশ্যই মুখবন্ধ ব্যবহার করতে হবে। নাক ও মুখে এমনকি চোখ-কানের মাধ্যমেও ধুলোবালি প্রবেশ করে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া এমনসব রোগীরাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। এসব বিষয়ে দাউদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গির বলেন, ইটাভাটা মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে এলাকার লোকজন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছে তাতে আমার বাধা দেয়ার অধিকার নেই।  এদিকে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সেলিম রেজা ইছার মাথা থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এসব অবৈধ যান মহাসড়কে চালনা করার অনুমতি নেই। তাই সেসব এলাকায় চলতে বাধা দেয়া হচ্ছে। তবে ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান দাবি করেন সবাইকে ম্যানেজ করে ইটা বহনের কাজে ইছার মাথা নামক যান ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় দরিদ্র লোকজন কর্মসংস্থান করে তাদের সংসার চালাচ্ছে। এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা ইসলাম বলেন, ইটভাটায় ইটা বহনের কাজে কিছু ইছার মাথা চলাচল করছে শুনেছি। এসব যান বন্ধের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন